হাফ পাস আইনে নেই, মালিকেরাও চান না

হাফ পাসের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা
হাফ পাসের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা  © ফাইল ছবি

১৯৬৪ সাল। চারটি সরকারি বাসের মাধ্যমে রাজধানীতে শুরু হয় গণপরিবহন সেবা। তখন থেকেই সরকারের অলিখিত নির্দেশে বাসে শিক্ষার্থীদের থেকে নির্ধারিত ভাড়ার অর্ধেক নেয়া হতো। তবে এটি ছিল সম্পূর্ণ সরকারি সেবার অন্তর্ভুক্ত।

পরবর্তীতে যখন বাণিজ্যিকভাবে বেসরকারি বাসে যাত্রী পরিবহন শুরু হয়; তখন সেখানেও শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার রীতি চালু হয়। কিন্তু এ বিষয়ে ছিল না কোন লিখিত নিয়ম বা আইন। স্বভাবতই দিনে দিনে এটিও প্রথা হয়ে দাঁড়ায়। সময়ের ব্যবধানে আজ অবধি দীর্ঘসময় পেরোলেও শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিশ্চিতে সরকারিভাবে আইন প্রণয়ন আর হয়নি।

তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এমনকি প্রতিবেশি দেশ ভারতেও রয়েছে হাফ পাস পদ্ধতি। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন কিংবা নেদারল্যান্ডের আমস্টারডাম, মাল্টা-মরিশাসসহ আফ্রিকা-ইউরোপের অনেক দেশেই চালু রয়েছে শিক্ষার্থীবান্ধব এই রীতি।

সমস্যা শুধু বাংলাদেশে। শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মহানগরীর গণপরিবহনে হাফ ভাড়ার রেওয়াজ ছিল একসময়। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানান কারণে এর প্রয়োগ দিন দিন কমছে। বিষয়টা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, গণপরিবহনে হাফ ভাড়ার কথা বললে অনেক ক্ষেত্রেই নিগ্রহের শিকার হতে হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের।

সম্প্রতি বাসে হাফ ভাড়া দিতে চাওয়ায় রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের এক নারী শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের হুমকির অভিযোগও উঠেছে ৷ গত শনিবার (২০ নভেম্বর) ঠিকানা পরিবহনে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে হাফ ভাড়া দিতে চাওয়ায় সরকারি তিতুমীর কলেজের চার শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করেছে সেফটি পরিবহনের একটি বাসের চালকের সহকারীরা। গত বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে আগারগাঁও তালতলায় এ ঘটনা ঘটে। এছাড়াও প্রতিদিনই অসংখ্য শিক্ষার্থীকে হাফ ভাড়ার বিষয়ে গণপরিবহনে নানা রকম লাঞ্চনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

অবশ্য এসব ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, অবরোধ এমনকি বাস ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। গত ১৭ নভেম্বর (বুধবার) গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়ার (হাফ পাস) দাবি নিয়ে মহাখালীতে সড়ক অবরোধ করে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে ১৮ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকালে ঢাকা কলেজের মূল ফটকের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। গত শনিবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীর সাইন্সল্যাব মোড়ে হাফ পাস আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গাড়ি ভাঙচুর করে ঢাকা সিটি করেজ, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজসহ স্থানীয় কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও বলছেন, গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিশ্চিতে সরকারকেই উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে।

ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. আবদুল কুদ্দুস সিকদার বলেন, হাফ পাসের বিষয়টি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি। এটি প্রথাগত একটি বিষয়। সব বিষয়েই যে আইন করেই বাস্তবায়ন করতে হবে সেটি শোভনীয় নয়। এক্ষেত্রে পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নমনীয়তা প্রদর্শন করলেই সুন্দর সমাধান হয়। কিন্তু আমরা দেখেছি বিভিন্ন সময়ে তারা তা থেকে সরে এসেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশের এলাকা থেকে যেসকল শিক্ষার্থীরা আসেন তাদের থেকেও ওয়েবিলের অজুহাতে বেশি ভাড়া নেয়া হয়। এগুলো অমানবিক।

তবে বেসরকারি বাসে হাফ পাস কার্যকর হলে পরিবহন মালিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ বিষয়ে সরকার এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে বেসরকারিভাবে হাফ পাস কার্যকর করা হলে বর্তমান অবস্থায় মালিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।

শিক্ষার্থীদের সাথে পরিবহন শ্রমিকদের বাজে ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের আচরণ মোটেও কাম্য নয়। যারা বাজে ব্যবহার করবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং ইতোমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

গণপরিবহনে ছাত্ররা অর্ধেক ভাড়া ও পাসের যে দাবি জানিয়েছেন, তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি একটি টাস্কফোর্সের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তেজগাঁও মহিলা কলেজে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

তবে তাদের হাফ ভাড়ার দাবির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে হাফ ভাড়ার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এই দাবি তাদের পুরোনো, যা টাস্কফোর্সের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ