গবেষণা প্রতিবেদন
তালেবানের ক্ষমতা দখলে দেশের ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী সন্তুষ্ট
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৭:৫১ PM , আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৭:৫১ PM
আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা দখলে দেশের ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী সন্তুষ্ট বলে এক জরিপে জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টাডি গ্রুপ অন রিজিওনাল অ্যাফেয়ার্স (এসজিআরএ)। ঢাকায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২৩২ জন শিক্ষার্থীর ওপর পরিচালিত এক জরিপের এমন ফল পাওয়া গেছে।
স্টাডি গ্রুপ অন রিজিওনাল অ্যাফেয়ার্স জরিপের পর্যবেক্ষণে বলছে, তালেবানের সঙ্গে ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থকে সমার্থক ও এক করে দেখার প্রবল প্রবণতা রয়েছে। এটি অতিশয় উদ্বেগজনক বলে তাদের কাছে মনে হচ্ছে। তালেবানদের জয়কে এই উত্তরদাতারা ইসলাম ও মুসলমানদের বিজয় হিসেবে দেখছেন। তালেবানদের যারা সমর্থন করছেন তাদের ২১.৭ শতাংশ বলেছেন ইসলামের বিজয় হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ইসলাম রক্ষার সংগঠন বলেছেন ১২ শতাংশ এবং এ অঞ্চলে ইসলামী দলগুলোর শাসন ও শক্তি ও মুসলিম দেশগুলোর শক্তি বাড়বে এমন জবাব দিয়েছেন ২৯.৭ শতাংশ।
জরিপে অংশ নেওয়া ১৯.১ শতাংশ মনে করে তালেবানের উত্থানের ফলে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয় হয়েছে, ভারত চাপে থাকবে, কাশ্মীরের মুসলমানদের মুক্তির সম্ভাবনা বাড়বে বলে মনে করেন ১৯.১ শতাংশ।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টাডি গ্রুপ অন রিজিওনাল অ্যাফেয়ার্স (এসজিআরএ) আজ বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ‘আফগান তালেবানদের সম্পর্কে বাংলাদেশের তরুণদের প্রতিক্রিয়া ও মতামত’ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির চিফ এক্সিকিউটিভ সাংবাদিক আমির খসরু গবেষণা জরিপের ফল উপস্থাপন করেন।
সংস্থাটি জানিয়েছে, চলতি মাসের ১০ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত করা জরিপে ১৫ থেকে ২৫-এর সামান্য বড় বয়সী প্রধানত; শিক্ষার্থীদের ওপরে এই গবেষণা জরিপ করা হয়। ঢাকা মহানগরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভাবনাগুলো জানার চেষ্টা করাই ছিল এ গবেষণার প্রধানতম উদ্দেশ্য।
সরাসরি লিখিত প্রশ্নপত্রে এই জরিপ করা হয়। জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৭৭ দশমিক ৬ শতাংশ ছেলে এবং ২২ দশমিক ৪ শতাংশ মেয়ে। গবেষণায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭ দশমিক ১ শতাংশ, আলিয়া মাদ্রাসার ২০ দশমিক ৭ শতাংশ, কওমী মাদ্রাসা ১১ দশমিক ২ শতাংশ , সরকারি কলেজ ৬ দশমিক ৯ শতাংশ এবং বেসরকারি কলেজের ৬ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশ নেন। গবেষণায় স্নাতক, অনার্স ও সমমানের ৫৬ দশমিক ৯ শতাংশ; মাস্টার্স ও সমমানের ১২ দশমিক ৯ শতাংশ; এইচএসসি ও সমমানের ২৪ দশমিক ১ শতাংশ; ৬ শতাংশ অষ্টম থেকে এসএসসি ও সমমানের এবং স্কুলের এক শতাংশ শিক্ষার্থী অংশ নেন।
আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতা দখলের প্রেক্ষিতে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের ওপরে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে? এ প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের ওপরে প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন ২৩.২ শতাংশ উত্তরদাতা। বাংলাদেশে ইসলামপন্থিদের সাহস ও মনোবল বৃদ্ধি পাবে এমন উত্তর দিয়েছেন ২৫.৪ শতাংশ, বাংলাদেশে ইসলামপন্থিরা ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করতে পারে ১৪.৭ শতাংশ, বাংলাদেশ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে ১০.২ শতাংশ, জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটতে পারে ১৫.৮ শতাংশ এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরে চাপ বাড়বে এমন জবাব দিয়েছেন ১০.৭ শতাংশ।
কওমি মাদ্রাসার একশ’ ভাগ উত্তরদাতাই মনে করছেন তালেবানরা ক্ষমতায় আসায় ইসলামের বিজয়, ইসলাম ও মুসলমানদের বিজয়, ইসলামী শরীয়ত কায়েম, খেলাফতের শুরু, আল্লাহর দিন ও ইসলামী হুকুমত কায়েম, ইসলামী বিধিবিধান জারি করা, দুর্নীতিমুক্ত শাসন, দারিদ্র্যমুক্ত শাসন ব্যবস্থা কায়েম সম্ভব হবে এবং বাংলাদেশে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলামী দলগুলোর শক্তি বৃদ্ধি পাবে। আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা ভিন্ন ধরনের।
তালেবান এবং তালেবান সরকারকে আলিয়া মাদ্রাসার ৫২.১৭ শতাংশ পরিপূর্ণভাবে সমর্থন করেন, শর্ত সাপেক্ষে সমর্থন করেন ৮.৭ শতাংশ, সমর্থন করেন না এমন রয়েছে ১৩.০৪ শতাংশ এবং ১৭.৩৯ শতাংশ একই প্রশ্নে হ্যাঁ এবং না মিলিয়ে জবাব দিয়েছেন। তবে এটাও কিছুটা শর্ত সাপেক্ষ বলেই মনে হয়। জবাব দেননি ৮.৭ শতাংশ। তালেবানদের ক্ষমতা দখল সম্পর্কে খুব ও মোটামুটি সন্তুষ্টের মোট সংখ্যা ৫০ শতাংশ আর অসন্তুষ্ট ও খুব অসন্তুষ্টের সংখ্যা ২৬.৭ শতাংশ। বাকিদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
অন্যদিকে তালেবান কি ধরনের সংগঠন প্রশ্নের জবাবে মাত্র ১৯ শতাংশ বলেছেন সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগঠন। সঙ্গে সঙ্গে তালেবানকে ইসলামী সংগঠন বলেছেন ৩১.৭ শতাংশ এবং বিশ্বব্যাপী নিপীড়িত মুসলিমদের মুক্তির দিশারী বলেছেন ৬.৯ শতাংশ অর্থাৎ ৩৮.৬ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করছেন- ইসলাম ও মুসলিমদের পক্ষের সংগঠন হচ্ছে তালেবান।
তালেবানদের ক্ষমতা দখলে যারা অসন্তুষ্ট তাদের ৪৫.৭ শতাংশ মনে করেন আফগানিস্তান, বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের জঙ্গিবাদের বিস্তার ও ইসলামী মৌলবাদের বিজয় বলে তারা চিহ্নিত করেছেন। অসন্তুষ্টের কারণ একাধিক এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষ।
অসন্তুষ্ট হলে তার জন্য প্রশ্ন ছিল অসন্তুষ্টির কারণ কী? এ প্রশ্নেরও একাধিক উত্তর দানের ব্যবস্থা ছিল। জবাবে আফগানিস্তানে জঙ্গিবাদের উত্থান হবে মনে করেন ১৯.১ শতাংশ, বাংলাদেশসহ অন্যান্য অঞ্চলে জঙ্গিবাদ বিস্তৃত হবে ১৮.১ শতাংশ, আফগান নারীরা শোষিত ও নির্যাতিত হবে ২৮.৭ শতাংশ, পাকিস্তানের শক্তি বাড়বে ৬.৪ শতাংশ, এ অঞ্চলে চীন ও রাশিয়ার কর্তৃত্ব বাড়বে ৭.৪ শতাংশ, ভারত চাপে থাকবে ৪.৩ শতাংশ, মাদক ব্যবসার বিস্তৃতি ঘটবে ৫.৩ শতাংশ এবং বিশ্বব্যাপী ইসলামী মৌলবাদের বিজয় হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে উত্তর দিয়েছেন ৮.৫ শতাংশ। কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি ২.১ শতাংশ উত্তরদাতা।
জরিপে অংশ গ্রহণকারীরা তালেবান-সম্পর্কিত খবরাখবর জানার উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ইউটিউবসহ সোশ্যাল মিডিয়ার কথা জানিয়েছেন ৪৩ দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা। অনলাইন নিউজ সাইট ২৪ দশমিক ১ শতাংশ, সংবাদপত্র ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ, টেলিভিশন ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। এ ছাড়া ৪ দশমিক ৪ শতাংশ কোনোটিই দেখেন না।