সাবধান হন, না হলে ঘাড় মটকাতে সময় লাগবে না: নওফেল

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল  © ফাইল ফটো

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতাকারীদের উদ্দেশে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, ‘যতটুকু বলেছেন ক্ষমা চেয়ে সাবধান হয়ে যান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করলে ঘাড় মটকাতে সময় লাগবে না।’ 

শনিবার (১৪ নভেম্বর) শ্যামাপূজা উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরীর গোলপাহাড় মহাশ্মশান পরিচালনা পরিষদ আয়োজিত ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতাকারী ধর্মীয় সংগঠনটির নেতাদের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে গত শুক্রবার রাজধানীর ধূপখোলা মাঠে তৌহিদি জনতা ঐক্য পরিষদের এক সমাবেশ থেকে ধোলাইপাড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শীর্ষ নেতারা।

শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘এই মুষ্টিমেয় মৌলবাদী গোষ্ঠী, আমরা তাদের কাছে মাথা নত করব না। দুয়েকদিন আগে আমরা যা দেখলাম। একটি খুবই ছোট মৌলবাদী দলের একজন নেতা মঞ্চে দাঁড়িয়ে মঞ্চ কাঁপাচ্ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যাপারে তারা কথা বলছিলেন।’

‘মঞ্চ কাঁপিয়ে, ভয় ডর সৃষ্টি করে, বড় গলায় যারা কথা বলছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- মঞ্চ বেশি কাঁপাবেন না। মঞ্চ বেশি কাঁপালে পায়ের নিচের মাটিও নরম হয়ে যাবে। আপনাদের হুমকি-ধমকি এগুলো বন্ধ করুন।’

নওফেল বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রকে শ্রদ্ধা করে। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে আপনারা আছেন। হ্যাঁ, মৌলবাদী গোষ্ঠীও গণতান্ত্রিক পরিবেশে মাঝে মাঝে রাজনীতি করার অধিকার রাখে। কিন্তু মৌলবাদী কথা বলা, জনমনে শঙ্কা আনা এবং জাতীয় প্রতিষ্ঠান, জাতির পিতার ব্যাপারে আলোচনা করার ‍ধৃষ্টতা যারা দেখাবে তাদেরকে আমরা বলতে চাই- আপনারা বাড়াবাড়ি বন্ধ করুন।’

শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, ‘সরকারেরঊর্ধ্বে কেউ নয়। এই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঘাড়ে হাত রেখে বন্ধুত্বও করতে জানে, বেশি বাড়াবাড়ি করলে ঘাড় মটকে দিতেও জানে। সুতরাং ঘাড়ে হাত দিয়ে বন্ধুত্ব করেছে বলে, সহনশীল আচরণ দেখিয়েছে বলে মনে করবেন না সেটা দুর্বলতা।’

‘দেশে হানাহানি করবে, আইনশৃঙ্খলার পরিবেশ বিনষ্ট করবে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করবে- ঘাড় আমরা মটকে দিব। সুতরাং সাবধান হয়ে যান, সময় থাকতে সাবধান হয়ে যান। মৌলবাদের জায়গা এই বাংলাদেশ নয়।’

তিনি বলেন, ‘আইনত রাজনৈতিক দল করেছেন, রাজনৈতিক কথা বলুন। কাউকে কোনো ঠিকাদারি দেওয়া হয়নি দ্বীনে ইসলাম রক্ষার। সেটার দায়িত্ব আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন সবাইকে দিয়েছেন। আপনারা মঞ্চ কাঁপিয়ে জাতির পিতার নামে যে কথা বলেছেন, দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য যে কথা বলছেন তাদের দিকে শেষবারের মত বলতে চাই- সহনশীল আচরণকে, গণতান্ত্রিক আচরণকে দুর্বলতা ভাববেন না। আমাদের শক্তি মাটির অনেক গভীরে। এই বাংলাদেশের সংবিধান আমাদের শক্তিশালী করেছে।’

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ এনে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের সতর্ক করে দিয়ে নওফেল বলেন, ‘এই দেশে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া যেমন আমরা কেউ সহ্য করবো না, তেমনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের নাম করে মানুষকে হেনস্থা করাও সহ্য করবো না। দেশে আইন আছে, আদালত আছে, সরকার আছে, সেখানে না গিয়ে যারা নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে আমাদের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভীতি ও শঙ্কার পরিবেশ আনার চেষ্টা করছেন, তাদের আমরা সাবধান হয়ে যেতে বলছি। মুষ্টিমেয় মৌলবাদি গোষ্ঠীর কাছে আমরা মাথা নত করবো না।’

সব ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ভয় পাওয়ার কিছু নেই, নির্ভয়ে থাকুন। কারণ আমাদের নেতৃত্বে আছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমরা দেখছি— কিছু ষড়যন্ত্রকারী, মুষ্টিমেয় গোষ্ঠী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করে শঙ্কার পরিবেশ আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু যতদিন শেখ হাসিনার হাতে থাকবে বাংলাদেশ, ততদিন আমাদের শঙ্কার কোনও কারণ নেই।’

 


সর্বশেষ সংবাদ