আক্রমণটা নারীদের উপরই আসে বারবার

আহত নারী শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাচ্ছে
আহত নারী শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাচ্ছে  © সংগৃহীত

রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়লেও নারীদের বারবার আক্রমণের মুখে পড়তে হয় বলে উল্লেখ করেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আদৃতা রায়। আজ মঙ্গলবার (৪ মার্চ) তার ফেসবুক পোস্টে দেওয়া এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তিনি এসব কথা বলেন।

ওই স্ট্যাটাসে আদৃতা লিখেছেন, জুলাই-অগাস্টে তিনি সহযোদ্ধাদের সঙ্গে হাতে হাত রেখে দৌড়েছেন, পাথর ছুড়েছেন, ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। অথচ এখন তাঁর অবস্থান নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনার পতনের পরও নারীদের নিরাপত্তা ও বিচারহীনতার ভয় দূর হয়নি। বরং সেই একই আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে।  

পোস্টে তিনি লেখেন, ‘হাসিনাকে ফেলে দিয়েছি আমরা, হাসিনার এই দেশ থেকে রীতিমতো পালিয়ে বাঁচতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও, কোনও আনন্দ মিছিলে যোগ দেওয়ার আগেই লক্ষ্য করলাম, যেই বদলের জন্য শহীদ নাফিসা প্রাণ দিলো, সেই বদলের আশেপাশেও নাই আমরা।’  

তিনি উল্লেখ করেন, নতুন সরকার ও রাজনৈতিক শক্তির প্রতি আস্থা রেখেও তাঁরা সংস্কারের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু যখন আর ধৈর্য ধরতে পারেননি, তখন আবার নারীরাই প্রথম রাস্তায় নেমেছেন। কিন্তু বদল কী এসেছে? তিনি বলেন, কয়েক মাস আগেও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলে বাহবা পেয়েছেন, আর আজ যখন মব লিঞ্চিং ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তখনই তাঁর ওপর নানা তকমা সেঁটে দেওয়া হচ্ছে।  

স্ট্যাটাসে আদৃতা জানান, তার বাবার রাজনৈতিক বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁর বিশ্বাস কখনো মেলেনি, বরং বহুবার তাঁদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু আজ যখন তিনি নিজের অবস্থান স্পষ্ট করছেন, তখনও তাঁকে ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে যে, তিনি আওয়ামী লীগের কেউ নন।  

তিনি আরও লিখেছেন, ধর্ষণ সামান্য ইস্যু না, আমার অত শক্তিও নাই দেশ অস্থিতিশীল করে দেওয়ার মতো। বিড়ি খাওয়া নিয়ে একটা শব্দও আমি আমার আজকের বক্তৃতায় বলিনি, কেউ বললেও তার সঙ্গে আমি নাই। কিন্তু আমার কথায় ধাক্কা লেগেছে অনেকের, ঠিক যেমনটা লেগেছিল আওয়ামী নেতাদেরও।

জুলাই আন্দোলনের সময় দেওয়া তার একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিওর নিচে যেসব মন্তব্য এসেছে, তার সঙ্গে তার সাম্প্রতিক পোস্টের মন্তব্যের তুলনা করে আদৃতা বলেন, তফাত খুঁজে পেতে কষ্ট হবে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাকে নিয়ে একই রকম আক্রমণ চলছে, শুধু অভিযুক্তদের পরিচয় বদলে গেছে।  

আদৃতা লেখেন, অ্যাডভোকেট আলিফ খুন হওয়ার পর সবার আগে কয়েকটা পোস্টের মধ্যে একটা আমার ছিল। তখন হাজার হাজার মানুষ সেটি শেয়ার করেছিল। তখন আমাকে জামাতের খানকি, শিবিরের মাগী বলা হয়েছিল। আর এখন যখন মবলিঞ্চিং, ধর্ষণের বিপক্ষে কথা বলছি, তখন আমাকে বানানো হচ্ছে ভারতের দালাল। আক্রমণটা নারীদের ওপরই আসে বারবার, শুধু ভাষা বদলায়, গালি বদলায়।

শেষে তিনি লেখেন, জুলাই আমারই থাকবে, কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না, কসম।


সর্বশেষ সংবাদ