সিভিল-পলিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে জাতীয় নাগরিক কমিটি

জাতীয় নাগরিক কমিটি
জাতীয় নাগরিক কমিটি  © সংগৃহীত

তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ ঘটেছে গতকাল শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি)। জুলাই আন্দোলনের সম্মুখসারির নেতা নাহিদ ইসলামকে আহ্বায়ক ও আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করল দলটি।

সবার বক্তব্যে নতুন দেশ গড়ার এবং রাজনীতিকে মানুষের হাতে ছেড়ে দেওয়া বা কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের জন্য নয়, শুধু মানুষের জন্য রাজনীতি করার প্রতিজ্ঞা করেন। এ সময় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দলের পক্ষে লিখিত ঘোষণাপত্র পাঠ করে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা জানিয়ে দেন।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, জাতীয় নাগরিক পার্টি গঠনের পর জুলাই আন্দোলনের পর গঠিত হওয়া জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যকলাপ কী হবে? নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে যাত্রা শুরুর আগেই দলটির নেতৃত্ব নিয়ে অনেক বিরোধ ও মতভেদ তৈরি হয়েছিল। নতুন দলের শীর্ষ পদে কারা আসবেন, কারা বাদ পড়বেন, সেসব প্রশ্নেই বিরোধ তৈরি হয়েছে।

তবে জাতীয় নাগরিক কমিটি সিভিল-পলিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনটি। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় নাগরিক কমিটির ১১তম সাধারণ সভায় গৃহীত বেশ কিছু সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছিল।

আরও পড়ুন : জাতীয় নাগরিক পার্টি নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের প্রতিক্রিয়া

জাতীয় নাগরিক কমিটির তখনকার মুখপাত্র সামান্তা শারমিনের সই করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় সদস্যদের উপস্থিতিতে ১১তম সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়-

১. আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠক ছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটির অবশিষ্ট অর্গানোগ্রাম, নির্বাহী কমিটি, সেলসমূহ ও সার্চ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আসন্ন রাজনৈতিক দলে যোগদানকারী সব কেন্দ্রীয় সদস্যের সদস্য পদ আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি দল ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত বহাল থাকবে। রাজনৈতিক দলে অন্তর্ভুক্তির সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সদস্যের জানাক সদস্য পদ বাতিল হিসেবে গণ্য হবে। দলে যোগ দিচ্ছেন না, এমন সদস্যদের সদস্য পদ বহাল থাকবে।

২. আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠক আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী ১৫ দিন অনানুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের উদ্যোগে জাতীয় নাগরিক কমিটির তিনজনের আনুষ্ঠানিক ফোরাম পরবর্তী অর্গানোগ্রাম নির্ধারণ করবেন।

৩. ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন দল আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে জানাকের রাজনৈতিক দল গঠনের ঐতিহাসিক দায়িত্ব সম্পন্ন হয়েছে। দল গঠনের পর থেকে জানাক সিভিল-পলিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে থেকে যাবে। আর কোনো দল গঠনের উদ্যোগ নেবে না।

এ ছাড়া ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জনগণের স্বার্থে জাতীয় নাগরিক কমিটি সর্বদা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাবে।

আরও পড়ুন : ঢাবির হলে ছাত্রদল নেতাকে তিন ঘণ্টা পেটায় ছাত্রলীগ, পুলিশে দেন প্রক্টর

পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া স্বাক্ষরিত ‘স্পষ্টকরণ’ শিরোনামে আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া হয়। সেখানে ১১তম সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোকে পরিমার্জন করে বলা হয়-

১. আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র ও মুখ্য সংগঠক ব্যতীত জাতীয় নাগরিক কমিটির অবশিষ্ট অর্গানোগ্রাম, নির্বাহী কমিটি, সেলসমূহ ও সার্চ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ, জাতীয় নাগরিক কমিটির সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষা, সংস্কৃতি, জলবায়ু, কূটনীতি, দপ্তর, সোশ্যাল মিডিয়া বিষয়কসহ ইত্যাদি যে সেলগুলো করা হয়েছিল, সোগুলো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠক এর পাশাপাশি ‘যুগ্ম’ ও ‘সহ’ যে পদগুলো ছিল (যেমন যুগ্ম আহ্বায়য়ক, যুগ্ম সদস্য সচিব, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক, সহ-মুখপাত্র ইত্যাদি) সেগুলোও বিলুপ্ত করা হয়েছে। তা ছাড়া জরুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ৩৪ সদস্যের যে নির্বাহী কমিটি এবং কমিটিতে নতুন সদস্য নেওয়ার জন্য যে সার্চ কমিটি ছিল, সেগুলোও বিলুপ্ত করা হয়েছে। কারণ এই পদগুলোতে থাকা অনেক সদস্য আসন্ন রাজনৈতিক দলে যুক্ত হতে যাচ্ছেন।

তাই ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন দল গঠিত হওয়ার পর পরবর্তী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে বর্তমান আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র ও মুখ্য সংগঠক দায়িত্ব নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করবেন। বর্তমানে দায়িত্ব থাকা ব্যক্তিরা তাদের দায়িত্ব নতুনদের কাছে হস্তান্তর করবেন। নতুন নেতৃত্বরাই পরে তাদের সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন নির্বাহী কমিটিতে কারা থাকবেন, সেল ও সম্পাদকগুলোতে কারা থাকবেন।

এককথায়, নতুন দলে বর্তমান অনেক সদস্য চলে যাওয়ায় জাতীয় নাগরিক কমিটি নতুন করে পূর্ণগঠন করা হবে। দলে যোগ দিচ্ছেন না, এমন সদস্যদের সদস্য পদ বহাল থাকবে। জাতীয় নাগরিক কমিটি পুনরায় নতুন উদ্যমে তার নিজস্ব কার্যক্রমে ফিরে যাবে।

আরও পড়ুন: নতুন দলকে সরকারের ‘কিংস পার্টি’ বললেন নুর, সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা

২. ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন দল আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক কমিটির রাজনৈতিক দল গঠনের ঐতিহাসিক দায়িত্ব সম্পন্ন হয়েছে। দল গঠনের পর থেকে জানাক সিভিল-পলিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবেই থেকে যাবে। আর কোনো দল গঠনের উদ্যোগ নেবে না। এ ছাড়া ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জনগণের স্বার্থে জাতীয় নাগরিক কমিটি সর্বদা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাবে।

অর্থাৎ, জাতীয় নাগরিক কমিটি আত্মপ্রকাশের সময় দেশকে একটি নতুন রাজনৈতিক দল উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। জনগণের পক্ষ থেকে চলমান বাস্তবতায় বাংলাদেশমুখী, মধ্যপন্থী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক একটি রাজনৈতিক দলের যে প্রয়োজনীয়তা অনুভব হচ্ছিল, তারই পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় নাগরিক কমিটি ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি নতুন রাজনৈতিক দল জাতীকে উপহার দিতে যাচ্ছে। এই দল আত্মপ্রকাশের পর নতুন করে আর দ্বিতীয় কোনো রাজনৈতিক দল গঠনের কাজ জাতীয় নাগরিক কমিটি করবে না। জাতীয় নাগরিক কমিটি তার সাংগঠনিক কার্যক্রম বর্তমানের মতোই একটি সিভিল পলিটিক্যাল প্লাটফর্ম হিসেবেই চালিয়ে যাবে।

জানাকের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, উপজেলা, থানা, ওয়ার্ডে আমাদের যে প্রতিনিধি কমিটিগুলো গঠিত হয়েছিল এবং পেশাজীবীদের নিয়ে যে উপকমিটি বা প্রতিনিধি কমিটি হয়েছিল, সেসব কমিটির যেসব সদস্য আসন্ন রাজনৈতিক দলে যুক্ত হতে ইচ্ছুক, তারা নাগরিক কমিটি থেকে রাজনৈতিক দলে কোন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে, সেটি আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যেই জানিয়ে দেব।


সর্বশেষ সংবাদ