ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে নামের মিলে ৪৩তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত হতে যাচ্ছেন বাকৃবির মোতাসীন!
- শিহাব উদ্দিন
- প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৫ PM , আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৯ PM

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে নামের উচ্চারণ কাছাকাছি হওয়ায় ৪৩তম বিসিএসের দ্বিতীয় গেজেট থেকে বাদ পড়েছেন মোতাসীন হোসেন নামে এক চাকরিপ্রার্থী। একই কারণে বাদ পড়তে পারেন ২৬৭ জনের গেজেট পুনর্বিবেচনার তালিকা থেকেও।
তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) সূত্র জানিয়েছে, তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। প্রার্থীরও দাবি, ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কখনো কোনো পদপদবিও পাননি। কোনো দলের রাজনীতিও করেননি। বরং তার বড় ভাই বরিশাল মহানগর ছাত্রদল নেতা এবং পরিবারের সদস্যরা বিএনপি সমর্থক।
৪৩তম বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশপত্র, প্রথম ও দ্বিতীয় গেজেট, গোয়েন্দা প্রতিবেদন এবং প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে বিষয়টি সামনে এসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোতাসীন হোসেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিল হলের ২৩৮/ডি নম্বর রুমে থাকতেন তিনি। অন্যদিকে নামের উচ্চারণ প্রায় একই রকম হওয়া ছাত্রলীগ নেতা মোতাসিম বিল্লাহ মুকুল বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি একই হলের ৪০৫/ক নম্বর রুমে থাকতেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ৪৩তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। নিয়োগের সুপারিশ পাওয়া ২ হাজার ১৬৩ জনের মধ্যে ছিলেন মোতাসীনও। চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে ৯৯ জনকে বাদ দিয়ে ২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবর ৪৩তম বিসিএসের প্রথম গেজেট প্রকাশ করে সরকার। প্রশাসন ক্যাডার হিসেবে গেজেটেড হন মোতাসীন হোসেন। তবে এই গেজেট নিয়ে বিতর্ক ওঠায় একই বছরের ৩০ ডিসেম্বর নতুন করে (দ্বিতীয়) গেজেট প্রকাশ করা হয়। প্রথম গেজেটে সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকেই দ্বিতীয় গেজেট থেকে বাদ পড়েন। এই বাদ পড়াদের মধ্যে মোতাসীনও রয়েছেন।
মোতাসীন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলাম। প্রথম গেজেটে নাম এলেও দ্বিতীয় গেজেটে আমার নাম আসেনি। কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল না আমার, কোনো পদপদবি ছিল না। আমি ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত হলে অবস্থান করি। এ বিষয়ে হল প্রশাসন একটি প্রত্যয়নপত্রও দিয়েছে।’
তার মতে, ২০১৬-২০২২ সালের মধ্যে ফজলুল হক মুসলিল হলে একবারই ছাত্রলীগের হল কমিটি দেওয়া হয়। হল কমিটিতে সদস্য হিসেবে একজনের নাম আছে, যার নামের সঙ্গে আমার নামের উচ্চারণের কিছুটা মিল আছে। তিনি বলেন, ‘মুতাসিম বিল্লাহ মুকুল’ ২০১১-১২ সেশনের ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থী। মুতাসিম আর মোতাসীন উচ্চারণ কাছাকাছি হওয়ার ৪৩তম বিসিএসের দ্বিতীয় গেজেট থেকে আমি বাদ পড়তে পারি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় গেজেট থেকে বাদ পড়া ২৬৭ জনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে প্রার্থীদের তথ্য যাচাই করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়া শেষে ইতোমধ্যে একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এই তালিকা থেকে মোতাসীন বাদ পড়তে পারেন।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, মোতাসীনের তথ্য যাচাইয়ের পর একটি গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক তাকে অসুপারিশকৃত অর্থাৎ গেজেটেড না করার সুপারিশ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে মোতাসীন সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘ব্যক্তি হল শাখা ছাত্রলীগের সদস্য।’
যদিও মোতাসীন কখনো কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এ বিষয়ে হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি প্রত্যয়নপত্রও দেওয়া হয়েছে।
গত ২ জানুয়ারি ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রভোস্টে সই করা প্রত্যয়নপত্রে বলা হয়, ‘মোতাসীন হোসেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের ২৩৮/ডি নং কক্ষের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী ছিল। হলে অবস্থানকালীন সে কোনো রাজনৈতিক দল বা কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল না এবং আমার জানামতে অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত অবস্থায় সে কোনো রাষ্ট্রবিরোধী ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত নয়।’
মোতাসীন বলেন, ‘আমার পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আমার বাবা বিএনপির রাজনীতি করতেন, আমার বড় ভাই মাইনুল হাসান সিকদার বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সহসভাপতি। তিনি বিগত সরকারের আমলে একাধিকবার হামলা মামলার শিকার হয়েছিলেন। এ নিয়ে তখন পত্রিকায় সংবাদও প্রকাশিত হয়। অথচ আমাকে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। এর চেয়ে দুঃখের বিষয় নেই। আশা করি সরকার সুষ্ঠু তদন্ত করে ন্যায্য ব্যবস্থা নেবেন।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব রহিমা আক্তার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বাদ পড়া ২৬৭ জনের বিষয়ে এনএসআই এবং ডিজিএফআই নতুন করে তথ্য যাচাই করেছে। এবার যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, সেটি নিয়ে প্রার্থীদের অভিযোগ থাকবে না।’
ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে নামের উচ্চারণে মিল থাকায় কেউ গেজেটবঞ্চিত হবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘এমন কিছু হওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। কেননা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রতিটি তথ্য যাচাই করেছে। যাচাইকৃত তথ্যগুলো শতভাগ নিশ্চিত হয়েই তারা প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তারপরও যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে ঊর্ধ্বতনরা বিষয়টি দেখবেন।’