বাগেরহাটে দুপক্ষের বিরোধে ৮ বাড়িতে আগুন, আহত ৫
- বাগেরহাট প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৫ AM , আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:২৮ AM
বাগেরহাটে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিজ দলের আট সদস্যের বাড়িতে আগুন দিয়েছে প্রতিপক্ষরা। হামলা-পাল্টা হামলায় নারী-শিশুসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। বুধবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কুলিয়াদাইড় গ্রামে বাড়ি-ঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ওই ঘটনা ঘটে।
এর আগে বিকেলে উভয় পক্ষের মধ্যে একাধিকবার হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ৫ আগস্টের পর থেকে বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন ওরফে রুহুল মেম্বর ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের মধ্যে প্রকাশ্যে বিরোধ দেখা যায়। এ নিয়ে উভয় পক্ষের লোকজনের মাঝে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
সম্প্রতি ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে এই বিরোধ চরমে পৌঁছায়। সব শেষ গত ৬ জানুয়ারি রাতে উভয় পক্ষের মধ্যে মারপিট ও মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হয়।
ওই ঘটনার জেরে বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে ও বিকেলে উভয় পক্ষের লোকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে সন্ধ্যার দিকে শতাধিক লোকজন রুহুল মেম্বর ও তার সাত ভাইয়ের বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। আগুনে পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় রুহুল মেম্বরসহ তার আট ভাইয়ের বাড়ি-ঘর।
সরেজমিনে বুধবার রাত ৮টায় গেলে দেখা যায়, রুহুল মেম্বরসহ তার আট্ ভাইয়ের বসতঘরের সব মালামাল সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। ছয়টি মোটরসাইকেল, কয়েকটি ফ্রিজসহ মূল্যবান জিনিসপত্র পুড়ে গেছে। পুরুষশূন্য বাড়িগুলোতে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা বিলাপ করছেন। বসতঘরের বাইরেও হামলা ও ভাঙচুরের ক্ষত চিহ্ন, আগুন দেওয়া হয়েছে গোয়ালঘর, হাঁস-মুরগির খোপ ও খড়ের গাঁদায়। বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে চিরুলিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের ব্রিজের ওপর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দেখা যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত রুহুলের পরিবারের সদস্যদের দাবি, মোস্তাফিজের লোকজন কয়েক দিন ধরে তাদের মারধরের চেষ্টা করছিল। এর জন্য তাদের পুরুষরা গা ঢাকা দিয়েছিল। আর আজ বাড়ির মধ্যে এসে তাদের সবশেষ করে দিয়ে গেল বলে অভিযোগ করেন তারা।
রুহুল মেম্বারের স্ত্রী রজিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী রুহুল আমিন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হতে চায়। প্রতিপক্ষ আমাদের ওপর হামলা করে, বাড়িতে থাকা টাকা পয়সা, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান মালামাল নিয়ে যায়। এক স্বৈরাচারী খেদায়ে দেশে এ কোন স্বৈরাচার আনিছে। সাধারণ মানুষজন নিরিবিলি থাকতি পারতিছে না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালামের লোক মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে ইমরান, কামরান, মাহবুব, মাসুমসহ স্থানীয়রা তাদের বাড়ি ঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
রুহুল মেম্বরের ছোট বোন ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমার ভাই তালিম ভাইয়ের গ্রুপ করেছিল। প্রতিপক্ষরা বাড়িতে হামলা করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদেরও রক্তাক্ত জখম করেছে। আমরা বলেছি, ঘরে শিশুরা আছে। তাও কোনো ছাড় দেয়নি। আগুন দিয়ে দিছে। পুলিশ-আর্মি দাঁড়ায়ে রইছে, আমাদের বাড়ি পোড়ায়ে দেল, কোন সাহায্যই করেনি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানকে ফোন করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
আগের দিনের ঘটনা নিয়ে গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রুহুল মেম্বরের ভাই আওয়ামী লীগের ক্যাডার শেখ রেজাউল করিম রেজার নেতৃত্বে সোমবার রাতে ১৫ থেকে ২০ জন সন্ত্রাসী ঢাল-সরকি ও ধারালো দা ও লাঠি নিয়ে হামলা চালিয় আমাদের পাঁচ নেতাকর্মীকে আহত করে। এ সময় তারা আমাদের পাঁচটি মোটরসাইকেল ও একটি অটো গাড়িসহ একটি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
মোস্তাফিজুর রহমান গ্রুপের নেতা বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাসুম মোল্লা বলেন, সোমবার রাতে ভাঙচুর করা মোটরসাইকেল নিয়ে আজ দুপুরে থানায় যাচ্ছিল। আমার ভাই মামুন মোল্লা। তখন রুহুল মেম্বরের লোকজন তার ওপর হামলা করে। আমরা তার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ছিলাম।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে বিকেলে আমার আরেক ভাই মাহমুদ মোল্লাকে কুপিয়ে রাস্তার ওপর ফেলে রেখে যায় প্রতিপক্ষরা। সন্ধ্যার দিকে তারা ঢাল-সরকি নিয়ে আবারও বের হয়, তখন পুলিশও ছিল। এ সময় আমাদের লোকজন তাদের ধাওয়া করে। পরে তারা নিজেরা বাড়িতে আগুন দেয়।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল আরিফ বলেন, বিএনপির কাউন্সিল নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। গেল পরশুও মারামারি হয়েছে। এর জেরেই আজ দুপক্ষ আবার মারামারি করেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।