অবহেলায় নষ্ট ৩০ লাখ টাকার নৌ-অ্যাম্বুলেন্স, বহন করেনি রোগীও
- ভোলা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৩ AM , আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৯ AM
সাগর ও নদীবেষ্টিত দেশের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার দুর্গম জনপদের রোগীদের আনা-নেয়ার জন্য সরকারের প্রায় ৩০ লাখ টাকার আধুনিক নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছিল। তবে তা এলাকার মানুষের কাজে আসেনি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ময়লা-আবর্জনা জমে রোগী পরিবহনের অনুপযোগী হয়ে গেছে নৌযানটি। অযত্ন-অবহেলায় সেটি জোয়ার ভাটার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হওয়ার পথে। না চললেও ৫০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে তেল খরচের কথা বলে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে জানা গেছে, উপকূলীয় দুর্গত এলাকার মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৯-২০ অর্থবছরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেয় সরকার। ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি এটি হস্তান্তর করা হয়। এর বরাদ্দ মূল্য ছিল ৩০ লাখ টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্সটি শশীগঞ্জ সুইসঘাটের দক্ষিণ পাশে বেড়িবাঁধের ভিতরে একটি বাধা (নদীর সঙ্গে সংযোগ নেই) খালে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। সামনের ও পাশের গ্লাস ও যন্ত্রাংশ ভাঙা। ভেতরে রোগী শোবার ও স্বজনদের বসার সিট নেই। জানা গেছে, একজন রোগীও বহন হয়নি নৌযানটি দিয়ে। এরমধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে চর জহিরউদ্দিন ও চর মোজাম্মেলে চলাচল বাবদ ৫০ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে তেল খরচ দেখিয়ে। যদিও তেল খরচের কোনো বিল-ভাউচার দেখাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
উপজেলার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল চর মোজাম্মেল, চর জহিরউদ্দিন, চর নাসরিন, সিডার চর, চর উরিলে বসবাসরত মানুয়ের জরুরি চিকিৎসাসেবা সরকার এটি বরাদ্দ দিলেও একদিনের জন্যও কাজে আসেনি তাদের।
ভোলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানসহ নানা কারণে তজুমদ্দিন উপজেলার অ্যাম্বুলেন্সটি ২০২০ সালের ২২ মে বিকল দেখানো হয়। কিন্তু ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি আউটসোর্সিং থেকে মহিউদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে চালক হিসেবে ৫ দিনের ট্রেনিং করায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কমিউনিটি বেইসড হেলথ কেয়ার প্রকল্প মাধ্যমে তাকে বেতন-ভাতা দেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছরের পর বছর নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি পড়ে থেকে নষ্ট হয়েছে। চরাঞ্চলবাসীর কোনো কাজেই আসেনি এটি। তারা যে কোনো সমস্যায় শশীগঞ্জ সুইসঘাটের ট্রলারে পারাপার হন। রাতে কারও চিকিৎসা বা অন্য জরুরি প্রয়োজনে ঘাটের মাঝিদের ফোন দিলে তারাই পার করেন তাদের। অনেকে অ্যাম্বুলেন্স আছে, এ তথ্য জানেন না।
আরো পড়ুন: শিবিরকে ফাঁসাতে ছাত্রদল কর্মীর কাণ্ড, ক্ষমা প্রার্থনা
শশীগঞ্জ সুইসঘাটের ব্যবসায়ী মো. আব্দুল্যাহ বলেন, চরাঞ্চলের মানুষের জন্য নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি বরাদ্দ দেয়া হলেও এ পর্যন্ত একজন রোগীও বহন করতে পারেনি অ্যাম্বুলেন্সটি। বর্তমানে শশীগঞ্জ সুইসঘাটের দক্ষিণ পাশে বেড়িবাঁধের ভেতরে একটি খালের মধ্যে অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে রাষ্ট্রের টাকায় কেনা অ্যাম্বুলেন্সটি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. উত্তম কুমার সরকার বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। তারপরও যতদূর জানতে পেরেছি, কমিউনিটি বেইসড হেলথ কেয়ার প্রকল্পটি বন্ধ হওয়ার কারণে এটি চালু করা সম্ভব নাও হতে পারে। এটি একেবারেই মেরামতের অযোগ্য। তবুও যোগাযোগ করে দেখতে হবে, অ্যাম্বুলেন্সটি কি করা যায়।’