নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা ঘটনায় অস্থিতিশীল ছিল হাবিপ্রবি

  © টিডিসি সম্পাদিত

২০২৪ সাল ছিল হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) জন্য একটি উল্লেখযোগ্য এবং ঘটনাবহুল বছর। বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন, প্রশাসনিক রদবদল এবং ছাত্ররাজনীতি সহ বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। কোটা আন্দোলন, নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতি, শিক্ষক আন্দোলনসহ নানা ঘটনায় ক্যাম্পাস ছিল অস্থিতিশীল। বছরজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির গুরুত্বপূর্ণ নানা আলোচিত ঘটনা তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিনিধি রিয়া মোদক

কোটা আন্দোলন ও প্রশাসনিক অস্থিতিশীলতা

বছরের মাঝামাঝি সময়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে এবং রাজনৈতিক রূপ নেয়। ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর উপাচার্যসহ প্রশাসনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য হয়ে পড়ে। কৃষি অনুষদের অধ্যাপক ড. ফুয়াদ এল তাজকে আর্থিক জরুরি দায়িত্ব দেওয়া হয়, যা সংকটময় মুহূর্তে কিছুটা স্থিতিশীলতা আনেন। পরে নতুন উপাচার্য হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রফেসর ড. মো. এনামউল্যা নিয়োগ পান এবং প্রথমবারের মতো প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে এগ্রোনমি বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম শিকদার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

শিক্ষকদের কর্মবিরতি 

শিক্ষকরা 'প্রত্যয়' পেনশন স্কিম বাতিল এবং সুপার গ্রেড পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকে।শিক্ষক আন্দোলন এবং প্রশাসনিক অস্থিরতায় ক্যাম্পাসে এক ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।

ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা 

১১ আগস্ট রেজিস্টার সাইফুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের সকল ধরনের দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পদত্যাগ করে।

ছাত্রলীগের কার্যক্রম 

বছরের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা  ছিল সরকার পতনের পর পরই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের শক্ত ঘাঁটি ভেঙে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ প্রকাশ পায়। অনেক শিক্ষার্থী দাবি করেন, ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী অতীতে ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাব বিস্তারে লিপ্ত ছিলেন। এছাড়াও কোটা আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। শিক্ষার্থীদের দাবি, আন্দোলন দমন করতে তারা বলপ্রয়োগ করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহিংস পথ অবলম্বন করে।এরই ধারাবাহিকতায়, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে পরীক্ষা বা অন্য কাজে আসলেই তাদের গলায় জুতার মালা ঝোলানোর ঘটনা ঘটে।

কর্মকর্তা নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতি 

সাবেক ভিসি কামরুজ্জানের সময় কর্মকর্তা নিয়োগে বেশ কিছু অনিয়ম,  দুর্নীতি দেখা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে নবম ও দশম গ্রেডে বিভিন্ন পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ৬ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ মোট ১৬ জন নিয়োগ পান। শুরু থেকে বিশ্ববিদ্যিালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলেন। শিক্ষার্থীরা নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানালেও সাবেক প্রশাসন নিয়মের তোয়াক্কা না করে খেয়াল খুশি মত নিয়োগ দেন।

ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের কার্যক্রম 

দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে রাজনীতিতে ফিরে শিবির এবং নবীন শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আত্মপ্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি এবং সেক্রেটারি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এক রিসোর্টে নবীন শিক্ষার্থীদের নিয়ে নবীন বরণ করে তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় দলীয় ব্যানারে ফুল না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যানারে ফুল দেওয়ার কথা জানায় প্রশাসন। তবে সেই নিয়মের তোয়াক্কা না করে বিজয় দিবসে মধ্যরাতে শহিদ মিনারে ফুল দেয় ছাত্রদল। শিক্ষার্থীদের দাবি, দলীয় লেজুরভিত্তিক কোনো রাজনীতি যেন ক্যাম্পাসে আবার পুনরায় মাথাচাড়া দিতে না পারে এজন্য ছাত্রসংসদভিত্তিক নির্বাচন চালু করা এখন উপযুক্ত সময়। 

গবেষণায় অগ্রগতি

অ্যালপার ডগার সায়েন্টিফিক ইনডেক্সে হাবিপ্রবির ২১৩ জন গবেষকের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়।গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১১২।অর্থাৎ একবছরের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ সেরা গবেষক পেয়েছে হাবিপ্রবি।গবেষকদের গুগল স্কলারের রিসার্চ প্রোফাইলের বিগত ৫ বছরের এইচ-ইনডেক্স, আই-১০ ইনডেক্স স্কোর এবং সাইটেশনের ওপর ভিত্তি করে তালিকাটি প্রকাশ করেছে এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স।

গণিত অলিম্পিয়াডে সাফল্য

জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডে তিন শিক্ষার্থী সেরা দশে স্থান অর্জন করেন।হাবিপ্রবি থেকে যথাক্রমে  সপ্তম এবং নবম স্থান অধিকার করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী কাবির আবদুল্লাহ ও রত্না ঘোষ দিশা এবং দশম স্থান অধিকার করেন গণিত বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু বকর সিদ্দিক।

আন্তর্জাতিক স্থাপত্য প্রতিযোগিতা

আর্কিটেকচার বিভাগের শিক্ষার্থীদের টিম এলিয়ান্স ভারতের একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়। হাবিপ্রবির টিম এলিয়ান্সের হয়ে অংশ নেয় আর্কিটেকচার বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী রইচ উদ্দীন আলিফ, মো. সাজ্জাদ হোসেন ও ইমদাদুল হক ইমন। তাদের প্রজেক্টের নাম ছিল -PRESENCE : The Experience Center.

২০২৪ সাল ছিল পরিবর্তন, প্রতিবাদ এবং চ্যালেঞ্জের একটি বছর। শিক্ষার্থীদের জন্য এটি ছিল সেশনজট ও অনিশ্চয়তার বছর, তবে প্রশাসনিক পুনর্গঠনের ফলে ক্যাম্পাসে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসে। সামনের বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়টি তার শিক্ষার মান এবং প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উন্নত শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলবে এমনটাই প্রত্যাশা।


সর্বশেষ সংবাদ