আন্দোলন প্রতিহত করতে চাওয়া সেই ব্যাংক কর্মকর্তা এখনো বহাল তবিয়তে

  © সংগৃহীত

‘ঘরে ঘরে খবর দে, এক দফার কবর দে’ স্লোগান ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কোটা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়া রংপুরের অগ্রণী ব্যাংকের সেই সিনিয়র কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম (সোহেল সিরাজ) এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। গত ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা দেখিয়ে ব্যাংকে পদ-পদবি বাগিয়ে নেয়া, দলীয় লোকজনকে বিশেষ সুবিধা দেয়া, বিরোধী দলের লোকজনকে হয়রানিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংকে এখনো একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন এই কর্মকর্তা। এ নিয়ে জনমনে জেগেছে নানা প্রশ্ন। 

জানা যায়, সিরাজুল ইসলাম (সোহেল সিরাজ) রংপুর জোনাল অফিসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা রংপুর পুলিশ ট্রের্নিং সেন্টারে এডিশনাল এসপি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কারণে ব্যাংকে একক আধিপত্য বিস্তার করেছেন তিনি। কেউ তার অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বললেই বিভিন্নভাবে হয়রানি করতেন এই কর্মকর্তা। বর্তমানেও স্ত্রীর পদ-পদবি ব্যবহার করে ব্যাংকে আধিপত্য বজায় রেখেছেন ছাত-জনতাকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়া এই কর্মকর্তা।

ব্যাংকটির রংপুর জোনাল ম্যানেজারকে তার এসব অনিয়ম ও জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে বিরোধীতার ব্যাপারে জানিয়েও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের। তাদের অভিযোগ, পতিত স্বৈরচারী দল আওয়ামী লীগের দোসর, কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের বিরুদ্ধে অর্থ সরবরাহকারী, আন্দোলনে প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের প্রতিহতের ঘোষণাকারী সোহেল সিরাজ এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন, আধিপত্য বজায় রেখেছেন। আন্দোলনের সময় সে সরাসরি শিক্ষার্থীদের প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর দেশ দ্বিতীয় স্বাধীনতার যুগে প্রবেশ করলেও আন্দোলনের বিরোধীতাকারী এই ব্যাংক কর্মকর্তা শত শত শহীদের রক্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দাপটের সাথেই অফিস করছেন, রয়েছেন বহাল তবিয়তে। সেই সাথে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের জন্য গোপনে কাজ করে চলেছেন বলে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুরের সমন্বয়ক ইমতিয়াজ আহমদ ইমতি বলেন, আপনারা জানেন, ফ্যাসিবাদ হাসিনা সরকার ৫ আগস্টের পর পালিয়ে গেছে। এই ফ্যাসিবাদ সরকারের দোসররা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে এখনো কর্মরত রয়েছেন। আমরা যদি রংপুরের দিকে খেয়াল করি, সেক্ষেত্রে অগ্রণী ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা (সিরাজুল) অন্যতম। তার স্ত্রীও একজন পুলিশের বড় কর্মকর্তা। প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের প্রতিহত করতে চাওয়া এমন একজন কর্মকর্তা এখনো বহাল তবিয়তে আছেন, যা আমাদের জন্য লজ্জাজনক এবং ভয়ের কারণ। আমরা মনে করি, এসব মানুষেরা এমন জায়গাগুলোতে থেকে ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কিভাবে ফ্যাসিবাদকে প্রতিষ্ঠা করা যাবে, কিভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করা যাবে তারা ঠান্ডা মাথায় সেটার পরিকল্পনা করে যাচ্ছে। 

আহবায়ক ইমতি আরো বলেন, আমরা চাই, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কিংবা অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়া যা আছে সে অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা হোক। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এসব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। সেই সাথে দেশের সকল মানুষের প্রতি বিভিন্ন জায়গায় এমন ঘাপটি মেরে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান এই নেতা।

অগ্রণী ব্যাংক রংপুর জোনাল অফিসের ম্যানেজার এস এম মোস্তফা ই কাদের বলেন, এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রংপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, আমি বিষয়টি জেনেছি। তার (সিরাজুল ইসলাম) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা অগ্রণী ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করছি, যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জুলাইয়ে সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়লে রংপুরেও তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনে রংপুরের ছাত্র-জনতা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের প্রতিহত করার ঘোষণা দেন রংপুর নগরীর অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম (সোহেল সিরাজ)। সে সময় নিজের ফেসবুক ওয়ালে ‘ঘরে ঘরে খবর দে, এক দফার কবর দে’, ‘স্ট্যান্ড উইথ শেখ হাসিনা’ স্লোগান সহ নানা ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আন্দোলনের সক্রিয় বিরোধীতা করেন তিনি। এছাড়াও আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অর্থ দিতেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ