খাসজমি দখল করে বিএনপি নেতার মার্কেট ও দলীয় অফিস নির্মাণ

মার্কেট ও বিএনপির দলীয় অফিস
মার্কেট ও বিএনপির দলীয় অফিস  © সংগৃহীত

ভোলার চরফ্যাশনের দক্ষিণ আইচা থানা সদর বাজারে চর মানিকা ইউনিয়ন পরিষদ এবং বাজারের সরকারি খাসজমি দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে দক্ষিণ আইচা থানা বিএনপির একাংশের (বিলুপ্ত) সাধারণ সম্পাদক ফারুক মাস্টারের বিরুদ্ধে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির ওই নেতা প্রভাবে খাটিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের মালিকানাধীন জমিতে ১০টি এবং দক্ষিণ আইচা বাজারের সরকারি খাসজমিতে ২১টি পাকা দোকানঘর নির্মাণকাজ শুরু করেন। এ ছাড়া খাসজমিতে দক্ষিণ আইচা থানা বিএনপির কার্যালয় স্থাপনেরও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

জানা যায়, বৃহত্তর রসূলপুর ইউনিয়নকে ভাগ করে ১৯৯৩ সালে ৯ নং চর মানিকা ইউনিয়ন গঠন করা হয়। তখন পরিষদের অনুকূলে দক্ষিণ আইচা বাজারের ওপর ১ একর জমি দলিল নেওয়া হয়। ২০০৪ সালে পরিষদের জমিতে ৪০ শতাংশজুড়ে পরিষদ ভবন এবং বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। পরিষদ ভবনের সামনে বাজার সড়ক সংলগ্ন ৬০ শতাংশ জমি খোলামেলা পরে ছিল।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, এই জমির ওপর এখন দক্ষিণ আইচা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং তার ঘনিষ্ঠজনদের চোখ পড়ে। পরিষদ ভবনের লাগোয়া চর মানিকা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পাশের দক্ষিণ আইচা থানা সদর বাজারের এক একর সরকারি খাসজমিও বিএনপির এই নেতা জবরদখলে নিয়েছেন। দখলে নেওয়া খাসজমিতে ২১টি দোকান ঘরের পাশাপাশি দক্ষিণ আইচা থানা বিএনপির কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। খাসজমিতে গড়ে তোলা ২১টি ঘর দক্ষিণ আইচা থানা বিএনপি একাংশের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয়দানকারী ফারুক মাস্টার নিজের একক মালিকানায় নিয়েছেন। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের জবরদখল করা জমিতে ১০টি পাকাঘর ফারুকের ছত্রচ্ছায়ায় তার মামাতো ভাই বিএনপি কর্মী মো. স্বপন হাওলাদার, সুমন হাওলাদারের মালিকানায় গড়ে তোলা হয়েছে।

এ বিষয়ে চর মানিকা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তাহের জানান, ২০১০ সালে দক্ষিণ আইচা থানা স্থাপনের পর দক্ষিণ আইচা বাজারটি থানা সদর বাজারে পরিণত হয়। এতে এই বাজারের জমির দাম হঠাৎ শতগুণ বেড়ে যায়। ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর ফারুক মাস্টার ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সমনের পাকারাস্তা সংলগ্ন ১০টি পাকা ভিটা নির্মাণকাজ শুরু করেন। একই সঙ্গে পরিষদ ভবনের লাগোয়া চর মানিকা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পাশের দক্ষিণ আইচা থানা সদর বাজারের ১ একর খাসজমিতে ২১টি পাকাঘর নির্মাণ করছেন। এই খাসজমি দখলকে জায়েজ করতে তিনি দক্ষিণ আইচা থানা বিএনপির কার্যালয়ের নাম দিয়েও একটি ঘর নির্মাণ করেছেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফারুক মাস্টার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পার্টি অফিস-সংলগ্ন ওই জমিগুলো আমার বাবার মালিকানাধীন। তাই ওই জমিতে আমি মার্কেট নির্মাণ করেছি।

সড়কের পাশের জমি খাস খতিয়ানভুক্ত। এসব জমি মালিকানা হয় না, এমন প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আর ইউনিয়ন পরিষদের জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই জমি আমি জবরদখল করিনি। সেটা কারা করেছে, আমার জানা নেই।

ইউনিয়ন পরিষদের জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত বিএনপি কর্মী সুমন হাওলাদার জানান, তার বাবা নূরুল ইসলাম পরিষদকে এক একর জমি দান করেছেন। সামনের অংশের কিছু জমি পরিষদের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়নি। তাই তাদের পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে তারা ওই জমিতে বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণ করেছেন।

বিষয়টির সত্যতা নিয়ে চর মানিকা ইউনিয়ন পরিষদ সচিব নান্নু মাতাব্বর দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসককে অবহিত করেছি।

জানতে চাইলে চরফ্যাশন বিআরডিবি কর্মকর্তা ও চর মানিকা ইউনিয়ন পরিষদের নবনিযুক্ত প্রশাসক হুমায়ুন করিব বলেন, তিনি সম্প্রতি পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। পরিষদ সচিব জমি দখলের বিষয় অবহিত করলেও বিশদভাবে তিনি কিছু অবগত নন। তাই খোঁজখবর নিয়ে এবং দালিলিক তথ্যাদি পর্যালোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবুল হাছনাত বলেন, আমি ইতোমধ্যেই এই কর্মস্থল থেকে বদলির আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি। তারপরও স্থানীয় ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তাকে (তহশিলদার) সরকারি খাসজমি রক্ষায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সরকারি খাসজমি কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের জমি কোনোটাই ব্যক্তিপর্যায়ে দখলের সুযোগ নেই। বিষয়টি এখন পর্যন্ত কেউ আমাকে জানায়নি। আমি অবশ্যই ওই জমি জবরদখলমুক্ত করতে যা করা দরকার করবো।


সর্বশেষ সংবাদ