বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে স্কুলশিক্ষককে লাঞ্ছিতের অভিযোগ

জমিদার হাট উচ্চ বিদ্যালয়
জমিদার হাট উচ্চ বিদ্যালয়  © সংগৃহীত

নোয়াখালী সদর উপজেলার একটি মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ে এক শিক্ষকের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। গত বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী মো. আবদুল হক (৩৫) এওজবালিয়া ইউনিয়নের জমিদার হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষক। 

এ ঘটনায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কয়েকজন কর্মী-সমর্থক, প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিচার চেয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি-সম্পাদক বরাবর একটি  লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. মহি উদ্দিন ও যুবদল সভাপতি মো. লিটনের নেতৃত্বে সাত-আটজন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে প্রবেশ করে বিজয় দিবস উদযাপনবিষয়ক আলোচনা করেন। আলোচনাকালে বিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের কক্ষে প্রবেশ করামাত্রই মো. হক সাব (৫০) নামের এক ব্যক্তি নিজেকে বিএনপির নেতা পরিচয় দিয়ে আবদুল হকের গায়ে হাত তুলেন। এ ঘটনা মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

আরও পড়ুন: নোয়াখালীতে ভয়াবহ বন্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ৪০ কোটি

এর আগে গত নভেম্বর মাসে স্কুলের এডহক কমিটিতে অভিভাবক সদস্য পদে নিজেদের পছন্দের লোককে নিয়োগ প্রদান করতে প্রধান শিক্ষককে চাপ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বিএনপির স্থানীয় এই নেতাকর্মীরা।

ভুক্তভোগী মো. আবদুল হক বলেন, ‘আমি একটা কাজে প্রধান শিক্ষকের রুমে প্রবেশ করামাত্রই সবার সামনে আমার ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়। পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমার ওপর হামলা চালানো হয়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন এক শিক্ষার্থী ‘দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস’ প্রতিবেদককে বলেন, ‘প্রকাশ্য-দিবালোকে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে একজন শিক্ষককে এভাবে মারধর করায় আমরা খুবই আতঙ্কিত। এভাবে শিক্ষকরা লাঞ্ছিত হতে থাকলে দেশটিকে ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে। দলের সাইনবোর্ড ব্যবহারকারী এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর কবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন লোকের সামনে আমাদের একজন সহকর্মীর ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়, যা খুবই দুঃখজনক। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা এটি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করি।’

আরও পড়ুন: নোয়াখালীতে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমার সামনেই ঘটনাটা ঘটেছে। পরে তাৎক্ষণিক বিষয়টির সমাধান করা হয়।’

এওজবালিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আকবর হোসেন বলেন, ‘আমি ফেসবুকের মাধ্যমে শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাটি জেনেছি। এটি একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা। তবে যারা স্কুলে গিয়ে এ হামলা ঘটিয়েছে, তারা ঘটনার বিষয়ে আমার জানায়নি। ভুক্তভোগী কিংবা স্কুল কর্তৃপক্ষ কেউই বিষয়টি জানায়নি।’ 

নোয়াখালী সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ভিপি জসিম বলেন, ‘বিষয়টি আমরা শুনেছি। একজন শিক্ষকের ওপর এ রকম হামলার ঘটনা মেনে নেওয়ার মতো নয়। স্থানীয় নেতাকর্মীদের এ বিষয়টি সমাধান করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।’


সর্বশেষ সংবাদ