প্রাথমিকের ২৭ দশমিক শতাংশ শিক্ষার্থী চলে যায় মাদরাসায়

মাদ্রাসার শিক্ষার্থী
মাদ্রাসার শিক্ষার্থী  © সংগৃহীত

প্রাথমিক বিদ্যালয় ছেড়ে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলে যাওয়ার গড় হার ৩৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্থানান্তর হচ্ছে মাদরাসায়, যেখানে ২৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে। এছাড়া অন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংযুক্ত সরকারি প্রাথমিকে ৩ দশমিক ০৪ শতাংশ, কিন্ডারগার্টেনে ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং এনজিও বিদ্যালয়ে ১ দশমিক ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী স্থানান্তরিত হচ্ছে। এসব তথ্য উঠে এসেছে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পরিচালিত একটি গবেষণা সমীক্ষায়।

গবেষণায় দেখা যায়, মাদরাসায় চলে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে অভিভাবকদের ধর্মীয় অনুভূতি, করোনাকালীন স্কুল বন্ধ থাকলেও মাদরাসা চালু থাকা এবং মাদরাসায় সন্তানকে নিরাপদ মনে করার বিষয়টি উঠে এসেছে। অনেক অভিভাবক মনে করেন, সরকারি বিদ্যালয়ে লেখাপড়া ও শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাবের কারণে তারা সন্তানকে মাদরাসায় ভর্তি করছেন। কিছু অভিভাবক মনে করেন, সরকারি প্রাথমিকে পরীক্ষার সংখ্যা কম হওয়া এবং চাকরির সুযোগ কম থাকায় মাদরাসায় সন্তানদের ভর্তি করানো হচ্ছে।

এছাড়া, গবেষণায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝরে পড়ার গড় হার ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে বালক শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং বালিকা শিক্ষার্থীদের ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ঝরে পড়ে জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, যেখানে হার ১২ দশমিক ৯১ শতাংশ। শহর এলাকার বিদ্যালয়ে এই হার ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ, গ্রামীণ এলাকায় ১১ দশমিক ০১ শতাংশ, পুরনো সরকারি প্রাথমিকে ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং এ গ্রেডভুক্ত বিদ্যালয়ে ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দারিদ্র্য, অভিভাবকদের অসচেতনতা, শিশুশ্রম, লেখাপড়ায় অমনোযোগিতা, পারিবারিক সমস্যা এবং শিক্ষকদের অবহেলা ও অদক্ষতা চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হার দিনমজুর ও শ্রমিকদের সন্তানদের মধ্যে, যার হার ৪৭ শতাংশ। এরপর কৃষকদের সন্তান ১৭ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সন্তান ১৩ শতাংশ।

গবেষণায় ১৩ দফা সুপারিশও করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের তথ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ডাটাবেজ তৈরি, শ্রেণীকক্ষ সুসজ্জিত করা, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা, স্কুল ফিডিং ব্যবস্থা চালু করা, গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে দক্ষ শিক্ষকের ব্যবস্থা করা এবং বিদ্যালয়ের সঙ্গে স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ানো।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে খাবার কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে এবং বিদ্যালয়গুলোকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা হবে। শিক্ষার্থীদের সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলারও গুরুত্ব আরোপ করা হয়, যাতে তারা বাস্তব জীবনে শিখা বিষয়গুলো প্রয়োগ করতে পারে।

এ ধরনের উদ্যোগগুলো যদি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তবে দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নত হতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমানো সম্ভব হবে।


সর্বশেষ সংবাদ