‘কিডনি প্রায় ড্যামেজ, ভুঁড়ির অর্ধেকটা কেটে ফেলে দিতে হয়েছে’

রাইসুল রহমান রাতুল ও পরিবার
রাইসুল রহমান রাতুল ও পরিবার  © বিবিসি বাংলা

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯শে জুলাই ঢাকার উত্তরায় পুলিশের গুলিতে আহত হন কলেজ শিক্ষার্থী রাইসুল রহমান রাতুল। সেদিন আন্দোলনের এক পর্যায়ে দুপুরে মসজিদে যান জুমার নামাজ পড়তে। নামাজ শেষে বের হতেই পড়ে যান পুলিশের সামনে। রাইসুল রহমান রাতুলের লোমহর্ষক স্মৃতি এবং পরবর্তীতে চিকিৎসা ব্যয় বহনের বিষয়ে বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে আজ।

সেই স্মৃতি স্মরণ করে রাতুল জানান, ‘পুলিশ হয়ত আমাকে আগে থেকেই টার্গেট করেছিলো। কারণ সেদিন সকাল থেকেই আমি আহতদের ফার্স্ট এইড দিয়ে সাহায্য করছিলাম। তো মসজিদ থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কয়েকজন পুলিশ এসে আমাকে ধরে ফেলে। আমার কোমরের বেল্ট ধইরা বলতেছে, সাইডে চলো, তোমার সঙ্গে কথা আছে।’ 

তবে ঝুঁকি বুঝতে পেরে রাইসুল যেতে চাননি। ফলে সেখানেই তাকে ‘গুলি করা হয়’। রাইসুল রহমান বলেন, ‘আমি যাইতে চাই নাই। জাস্ট এটুকুই বলছি, কেন যাবো? সঙ্গে সঙ্গেই পাশের একজন পুলিশ বলে যে তুমি যাবা না? আচ্ছা ঠিক আছে, বলেই সে ডিরেক্ট আমার পেটে বন্দুক ঠেকিয়ে ফায়ার করে। একদম তলপেটে শটগানের গুলি বিস্ফোরণের মতো হলো। পেট থেকে আমার ভুঁড়ি বের হয়ে যায়। আমি নিজ হাতে আমার ভুঁড়ি ধরে রেখেছিলাম।’

ঘটনার এক পর্যায়ে পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার পর তার চিকিৎসার পুরো খরচ বহন করে পরিবার। কিন্তু এই পর্যায়ে এসে চিকিৎসার ভার বহন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে বলে জানান রাইসুল। তিনি বলেন, ‘আমার আব্বু ধার-দেনা করে প্রায় চার লাখ টাকা খরচ করেছে আইসিইউ বিল আর চিকিৎসার খরচে। আমি মোট ১৩ দিন আইসিইউতে ছিলাম।”

তবে এমন করুণ অবস্থাতেও পুলিশি ঝামেলা থেকে রেহাই পাননি তিনি। হাসপাতালেই পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হয় একাধিকবার। রাইসুল জানান, ‘তখন আমরা যে কী অবস্থায় ছিলাম! প্রায় প্রতিদিন হাসপাতালে পুলিশ আসতো। আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতো। এমনকি আইসিইউতে ঢুকেও তারা আমাকে ঐ অবস্থাতেই জেরা করেছে।’
পুলিশের হয়রানির ভয়ে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরই রাইসুল রহমানকে বাড়িতে আনা হয়। কিন্তু দুই মাস পরও এখনও পুরোপুরি সুস্থ হননি তিনি।

রাইসুল রহমান আরও বলেন, তাদের হাতে এখন চিকিৎসা চালানরো কোনও টাকা নেই। ‘আমার ভেতরে অনেকগুলো গুলি ঢুকেছিলো। ডাক্তাররা যেটা বলেছে যে, আমার একটা কিডনি প্রায় ড্যামেজ, ভুঁড়ির প্রায় অর্ধেকটা কেটে ফেলে দিতে হয়েছে। ভেতরে আরও গুলি থাকতেও পারে। কিন্তু সেটা অপারেশনের কারণে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে দেখা যাচ্ছে না। ডাক্তাররা বলেছেন, ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। কিন্তু সেটা চিন্তাই করতে পারছি না।’

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার সাথে কথা বলে বিবিসি বাংলা। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘স্বল্প পরিসরে হলেও ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। ফাউন্ডেশন থেকে সরকার প্রাথমিক অনুদানটা দিয়েছে। এখন আমরা আহ্বান করেছি, দেশি-বিদেশি যারা যারা আছেন তাদের অনুদান দিতে।’

আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, শহীদ পরিবারের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা, আহতদের জন্য সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা করে দেয়া হবে। ইতোমধ্যেই সিএমএইচ এ যারা চিকিৎসাধীন আছে, তাদের এক লাখ টাকা করে দেয়া হয়েছে। সারাদেশে আমরা তালিকা করছি। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সবাইকে টাকা পাঠানো হবে। আমরা সেসব তথ্য সংগ্রহ করছি।’


সর্বশেষ সংবাদ