ছেলে ফারহানকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে আচমকা গুলিতে প্রাণ হারান শিবলু

আবু বকর ছিদ্দিক শিবলু
আবু বকর ছিদ্দিক শিবলু  © সংগৃহীত

চারদিন অজ্ঞান থাকার পর ঢাকার আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন আবু বকর ছিদ্দিক শিবলু। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের সময় গত মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) আবদুল্লাহপুর রেলগেট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। বুধবার রাত আড়াইটার দিকে মারা গেলে বৃহস্পতিবার বিকালে মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফেরেন বড় ভাই আবদুল হাকিম বাবলু, স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার রিমাসহ স্বজনরা। ওইদিন রাতে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঁনপুর এলাকায় তাকে দাফন করা হয়।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকেলে শিবলুর গ্রামের বাড়ি ঘুরে জানা যায়, তিনি দক্ষিণ চাঁনপুর এলাকার ওছি উদ্দিন ভূঞা বাড়ির মৃত আবুল হাসেমের ছোট ছেলে। তার বড় ভাই বাবলু ইয়াকুবপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। অপর ৫ বোন বিবাহিত। ঢাকায় এলিট পেইন্টের সহকারী হিসাবরক্ষক পদে কর্মরত থাকার সুবাদে গত প্রায় চার বছর ধরে উত্তরা ৮নং সেক্টর এলাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন শিবলু। দুই শিশু সন্তানের একজন ফারহান ছিদ্দিক (৮ বছর) ও নুসাইবা ছিদ্দিক (১০ মাস)। ফারহান উত্তরা এলাকায় স্থানীয় একটি মাদরাসায় দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ছে।

বাড়ির সামনে বসেই কথা হয় আবদুল হাকিম বাবলুর সঙ্গে। প্রথমেই তার মোবাইল ফোনে থাকা দুটি ছবি দেখালেন। প্রথম ছবিতে রয়েছে ছেলে ফারহানের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে পাঞ্জাবি পরা হাস্যোজ্জ্বল শিবলু। আরেকটি ছবিতে শিবলুকে দেখা যাচ্ছে কফিনবন্দি। মাথার পাশে কানের ওপর গুলির চিহ্ন ছবিতে স্পষ্ট।

শিবলুর স্ত্রী রিমার উদ্বৃতি দিয়ে বাবলু বলেন, ‘ঘটনার দিন গত ২১ জুলাই রোববার বিকেলে ছেলে ফারহানকে নিয়ে ঘুরতে বের হন শিবলু। সেখানে আবদুল্লাহপুর রেলগেটে হাঁটাহাঁটির পর দুইজনে বসে ছিলেন। তখন সংঘর্ষ শুরু হলে বাসায় যেতে ছেলেকে নিয়ে উঠে দাঁড়ালে শিবলুর মাথার বামপাশে গুলিবিদ্ধ হয়। আশপাশের লোকজন তাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে কর্তব্যরত চিকিৎসক আগারগাঁও নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে পাঠান। রিমার কাছ থেকে খবর পেয়ে ঢাকায় ছুটে যাই।’

বাবলু বলেন, ‘মঙ্গলবার তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। ততক্ষণে ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু একটু একটু করে শিবলুর আঙুল নড়ে ওঠায় সবার মধ্যে আশা জেগে উঠে। বুধবার সন্ধ্যার পর সেই নড়াচড়াও থেমে যায়। একপর্যায়ে রাত আড়াইটার দিকে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

বাবলু আরো বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর শিবলুর আর জ্ঞান ফেরেনি। এ কারণে তার কাছ থেকে কোনো কিছুই জানতে পারিনি। ওইদিন পূর্ব উত্তরা থানায় সংঘর্ষ হলেও দক্ষিণখান থানা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয় শিবলু। উভয় থানার শরণাপন্ন হলেও কেউই মামলা নেয়নি। ফলে পোস্টমর্টেম ছাড়াই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একমাত্র ভাইটি দাফন করা হয়।’

ইয়াকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার জয়নাল আবদীন জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে শিবলুর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। সেখানে স্বজনদের আর্তনাদে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। রাত ১০টায় বাড়ির সামনে জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। সংবাদ সূত্র বণিক বার্তা।


সর্বশেষ সংবাদ