আন্দোলনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়নি—দাবি র‍্যাবের

র‍্যাব
র‍্যাব  © ফাইল ছবি

কোটা আন্দোলনে আকাশ পথে টহলের সময় র‌্যাবের হেলিকপ্টার থেকে কোনও ধরনের গুলি করা হয়নি বা কোনও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি বলে দাবি করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব এ দাবি করে।

র‌্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অনেকটা নিরুপায় হয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চলাচলের পথ সুগম করা এবং দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে জনগণের জানমালের ক্ষতি সাধন ও ধ্বংসযজ্ঞ প্রতিরোধে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য র‌্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে হেলিকপ্টার থেকে কোনও প্রকার গুলি করা হয়নি বা কোনও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি।’

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সহিংসতা ও নাশকতার সময় দুর্বৃত্তরা কোমলমতী শিশু-কিশোরদের আত্মরক্ষার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রাস্তা অবরোধ করে। তখন ধ্বংসযজ্ঞ প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছালে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তারা। কোমলমতী শিশু-কিশোররা সামনে থাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ বল প্রয়োগ থেকে বিরত থাকে।’

‘জনসাধারণের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় র‌্যাব ফোর্সেসের হেলিকপ্টার টহল কার্যক্রম’ নিয়ে র‌্যাব সদর দফতর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা গত ১৮ জুলাই সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। ওই শাটডাউন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালীন কতিপয় দুষ্কৃতিকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ ও নাশকতার মাধ্যমে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি এবং সরকারি ও জনগণের সম্পত্তির ক্ষতি সাধন করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা চালায়।’

‘রাষ্ট্রবিরোধী দুষ্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসীচক্র পরিকল্পিতভাবে বিটিভি ভবন, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, হানিফ ফ্লাইওভার, সেতু ভবন, ডাটা সেন্টার, বিআরটিএ ভবন এবং পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনাসহ সরকারি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও যানবাহনে নজীরবিহীন হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। সাধারণ শিক্ষার্থী ও দেশের আপামর জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার্থে এবং দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাব রাজধানীসহ সারা দেশে টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দায়িত্বপালনকারী র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর দুষ্কৃতিকারী ও নাশকতাকারীরা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মধ্যযুগীয় কায়দায় অতর্কিত হামলা চালায়। ওই  হামলা ও আক্রমণে শতাধিক র‌্যাব সদস্য আহত হয়।’

‘রাজধানীর বাড্ডা ও নারায়ণগঞ্জের শিমরাইলে দুর্বৃত্তরা হামলা ও আক্রমণ করে সাধারণ জনগণ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবরুদ্ধ করে ভবনে অগ্নিসংযোগ করে। গত ১৮ জুলাই আন্দোলনকারীদের আক্রমণের শিকার হয়ে আটকে পড়া ডিএমপি’র সদস্যরা কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির ছাদে অবস্থান নিলে দুপুর ২টা ১৬ মিনিটে ৬১ জন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে র‌্যাবের হেলিকপ্টার। গত ২০ জুলাই বিকালে নারায়ণগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় দুর্বৃত্তরা মা হাসপাতাল ভবনের নিচে অগ্নিসংযোগ করলে ওই ভবনের বাসিন্দা ও হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা ছাদে অবরুদ্ধ হয়। ওই সময় ভবনের নিচে ৩ জন শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করে। ভবনের ছাদে অবরুদ্ধরা র‌্যাবের সহায়তা চাইলে ওই হাসপাতালের কর্মচারীসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ৩৬ জন সদস্যকে র‌্যাবের হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয়।’

‘আকাশ পথে র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল ও উদ্ধারসহ সব কার্যক্রমের ভিডিও চিত্র র‌্যাবের পক্ষ থেকে ধারণ করা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, র‌্যাবের ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত, সরকারি স্থাপনা রক্ষা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে র‌্যাবের সব সদস্য বদ্ধ পরিকর। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও দেশব্যাপী নিরাপত্তা নিশ্চয়নে র‌্যাবের টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।’


সর্বশেষ সংবাদ