আ’লীগ ও বিএনপির পক্ষে-বিপক্ষে যে ধরনের ভুয়া খবর ছড়ানো হচ্ছে

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় লোগো
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় লোগো  © সংগৃহীত

বাংলাদেশে গত ৯ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় একটি ফেসবুক পেজ থেকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নামে লেখা একটি ভুয়া বক্তব্য প্রকাশ করা হয়। মনোনয়ন বাণিজ্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জড়িয়ে লেখা ঐ ভুয়া বক্তব্যটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অন্তত ১৯টি ফেসবুক পেজ পুনরায় প্রকাশ করে। এর মধ্যে ১৮টি পেজেই হুবহু একই শিরোনাম এবং হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়।

প্রায় কাছাকাছি সময়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনকে জড়িয়েও একটি ভুয়া খবর ছড়ানো হয়। গ্রাফিক কার্ড আকারে ছড়ানো ঐ ভুয়া খবরে স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে দাবি করা হয়, 'বিএনপির অবরোধ চলাকালে পেট্রোল ঢেলে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার সময় দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ'।এটিও অল্প সময়ে মধ্যে অসংখ্য ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে প্রায়ই এ ধরনের ভুয়া খবর ও অপতথ্য ছড়ানোর ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। ভুয়া খবর ও অপতথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাব বলছে, চলতি বছর বাংলাদেশ সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যত বিভ্রান্তিকর তথ্য পাওয়া গেছে, তার ৪৪ শতাংশই ছিল রাজনীতি নিয়ে।এক্ষেত্রে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে যেখানে ৭২টি রাজনৈতিক ভুয়া খবর প্রকাশিত হয়েছিল, গত তিন মাসে সেটি তিন গুণেরও বেশি পরিমাণে বেড়ে আড়াইশ ছুঁয়েছে। রাজনৈতিক এসব অপতথ্য ও ভুয়া খবরের অধিকাংশ ছড়িয়েছে বাংলাদেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে নিয়ে।

বাংলাদেশে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময়ও এই দুই দলের পক্ষে-বিপক্ষে ভুয়া খবর ছড়ানোর ঘটনা ঘটেছিল। তখন অবশ্য তারা দু’দলই নির্বাচনে ছিল। কিন্তু এবার বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তারপরও রাজনৈতিক ভুয়া খবর ও অপতথ্য ছড়ানোর ঘটনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।

আরও পড়ুন: ‘হানিফ ভাইয়ের অ্যাগেইনেস্টে কে নেমেছেন আমরা দেখছি কিন্তু’

ফ্যাক্ট ওয়াচের পরিচালক অধ্যাপক সুমন রহমান বলেন, “নির্বাচনকে সামনে রেখে জনমতে প্রভাব বিস্তার করাই এসব কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য।” তার মতে, বিএনপি নির্বাচনে না আসায় আওয়ামী লীগ যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, সেটি মোকাবেলার অংশ হিসেবেই দলটির কর্মী-সমর্থকরা বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

অন্যদিকে, বিএনপির কর্মী-সমর্থকরাও ক্ষমতাসীন দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে যেন সাধারণ ভোটাররা আগামী নির্বাচনে ভোট দেয়ার আগ্রহ না পায়। ফলে নির্বাচনকে সামনে রেখে দু'দলের পক্ষে-বিপক্ষে "উদ্দেশ্যমূলক প্রোপাগান্ডা" চালানো হচ্ছে বলে মনে করছেন অধ্যাপক সুমন রহমান।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসেবে, বাংলাদেশে বর্তমানে ১৩ কোটিরও বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, যাদের একটি বড় অংশই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক ব্যবহার করেন।

দেশটিতে ঠিক কতজন ফেসবুক ব্যবহার করেন, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোন তথ্য প্রকাশ করেনি এর মালিকানা প্রতিষ্ঠান মেটা। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত প্রতিষ্ঠান নেপোলিয়নক্যাটের এক হিসেবে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে সাড়ে চার কোটিরও বেশি মানুষ ফেসবুকে যুক্ত আছেন।

ফলে বিপুল সংখ্যক এই মানুষকে নিজেদের পক্ষে আনতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকেই বেছে নিচ্ছে রাজনৈতিক দল ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। সূত্র: বিবিসি বাংলা


সর্বশেষ সংবাদ