হিসাববিজ্ঞানে এমবিএ করা রফিকুলের জীবিকা চলে রাজমিস্ত্রির কাজ করে

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম  © সংগৃহীত

আজ মহান মে দিবস। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। প্রতি বছর ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসাবে পালন করা হয়। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এই দিনকে সারাবিশ্বে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করা শ্রমিকদের জীবনযাত্রার চিত্র উঠে আসে এই মে দিবেসে। তেমনি এক অভিজ্ঞতা ও বিশাদের গল্প জানালেন রাজধানীতে রাজমিস্ত্রির জোগালি হিসেবে কাজ করা রফিকুল ইসলাম।

রফিকুল ইসলাম জানান, ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে মাস্টার্স পাস করেছেন মো. রফিকুল ইসলাম। পড়াশোনা করেও চাকরি না পেয়ে সংগ্রামমুখর জীবন পার করছেন তিনি। রাজধানীতে রাজমিস্ত্রির জোগালি হিসেবে কাজ করেন। কাজ পেলে দিনে তার আয় হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। আর কাজ না থাকলে খালি হাতেই ফিরতে হয় বাসায়।

শ্রমিক দিবস প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বছর ঘুরে শ্রমিক দিবস এলেও শ্রমিকদের ভাগ্যের চাকা কখনো ঘুরে না। দিবস ছাড়া কেউ কোনোদিন খোঁজও নেয় না। কাজ করলে খাবার জোটে আর না করতে পারলে উপোস থাকতে হয়।

পড়াশোনা করেও শ্রমিকের কাজ করতে হচ্ছে আক্ষেপ করে রফিকুল বলেন, চাকরির জন্য গেলে ঘুষ চায়। কিন্তু আমরা তো জন্মগতভাবে গরিব। তাই চাইলেই ঘুষ দিয়ে চাকরি নিতে পারি না। ২০২২ সালে আনন্দমোহন কলেজ থেকে এমএ পাস করে আজকে শ্রমিকের কাজ করছি।

আরও পড়ুন: যেভাবে এসেছে শ্রমিক দিবস।

জোগালি হিসেবে কাজ করে কত টাকা আয় হয়, জানতে চাইলে রফিকুল বলেন, কোনদিন কাজ পাই, আবার কোনোদিন পাই না। তাছাড়া প্রতিদিন মজুরিও সমান আসে না। কোনোদিন ৫০০ টাকা আবার কোনোদিন ৬০০ টাকা আয় হয়। কিন্তু যাতায়াত খরচ ও খাওয়া-দাওয়া শেষে আর কিছুই থাকে না। চাল, ডাল ও তরিতরকারি সবকিছুই তো কিনতে হয়। আর সবকিছুরই দাম এখন বাড়তি।

শ্রমিক দিবসে প্রত্যাশার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি চাকরিজীবীর নির্দিষ্ট বেতন নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু আমার মতো শ্রমিকদের নির্দিষ্ট কোনো বেতন নেই। কাজের জন্য পথে বসে থাকি, যদি কাজ পাই তাহলে করি, আর নয়তো বাসায় ফিরে যাই। এভাবে আমাদের চলাটা খুবই কঠিন হয়ে যায়। সরকারের কাছে আবেদন, আমাদের মতো খেটে খাওয়া শ্রমিকদের একটু দেখাশোনা করবেন, খোঁজখবর নেবেন। পাশাপাশি শ্রমিকদের একটা মানসম্মত মজুরি নির্ধারণ করে দেবেন।’

প্রসঙ্গত, বিশ্ব শ্রমিক দিবস আজ, যা ‘মে দিবস’ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে পয়লা মে জাতীয় ছুটির দিন। আরও অনেক দেশে দিন বেসরকারিভাবে পালিত হয়। বাংলাদেশে দিনটি যথাযথভাবে পালিত হয়ে আসছে। মে দিবসে সরকারি ছুটি থাকে। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়ে থাকেন। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন দিনটি পালন করতে শোভাযাত্রা, শ্রমিক সমাবেশ, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানান কর্মসূচি হাতে নিয়ে থাকে।


সর্বশেষ সংবাদ