বেহাল অবস্থায় রেলওয়ের স্কুলগুলো

বাংলাদেশ রেলওয়ে বিদ্যালয়
বাংলাদেশ রেলওয়ে বিদ্যালয়   © সংগৃহীত

বাংলাদেশ রেলওয়ের মতোই বেহাল তাদের ১০টি বিদ্যালয়ের। ১৯১৮ সাল থেকে বিদ্যালয় পরিচালনা করা হলেও এখন দুর্দশায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। সাধারণ বিদ্যালয়ের মতোই রেলওয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম দেখভাল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু বিদ্যালয় চলে রেলওয়ের টাকায়। শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয় রেলওয়ে। তবে তারা বেতন-ভাতা পান আর দশটি সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীর সমান।

১৯১৮ সাল থেকে ১৯৭৩ সালের মধ্যে ১০টি রেলওয়ে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিদ্যালয়গুলো হলো, ঈশ্বরদী রেলওয়ে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও রেলওয়ে সরকারি চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ময়মনসিংহ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সল্টগোলা রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকার শাহজাহানপুর রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, পাবনায় রেলওয়ে সরকারি নাজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, লালমনিরহাট রেলওয়ে সরকারি চিলড্রেন পার্ক উচ্চ বিদ্যালয় ও নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। 

প্রতিষ্ঠার পর থেকে রেলওয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা ছিলেন মহাপরিচালকের অধীন সংস্থাপন শাখার জনবল। কিন্তু গত বছর ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে রেলের জনবল কাঠামোতে বদল এসেছে। বিদ্যালয় ও জনবল, অনুদান শাখায় স্থানান্তর করা হয়েছে। এতে সরকারি চাকরিজীবী হয়েও শিক্ষক-কর্মচারীরা তিন মাস বেতন পাচ্ছেন না।  আর্থিক নিরীক্ষার দায়িত্বে থাকা অর্থ ও হিসাব বিভাগকে রেলের মহাপরিচালকের অধীনে নেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তকে আর্থিক শৃঙ্খলার পরিপন্থি বলেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) কার্যালয়। 

আরও পড়ুনঃ করোনার পর বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের চীন যাত্রার প্রথম ফ্লাইট আজ

এসব কারণেই সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হলেও সেখানে মিলছে না শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা। বিদ্যালয়গুলোতে ধীরে ধীরে কমানো হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। 

রেলওয়ের পরিচালক (অর্থ) সোহেল আহমদ বলেন, 'রেলের সংস্থাপন শাখা জনবল কাঠামো তৈরি করেছে। বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ইন্টিগ্রেটেড বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস সিস্টেম প্লাস প্লাস (আইবাস) থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেতন পান। নতুন জনবল কাঠামো শিক্ষকদের অনুদান খাতে স্থানান্তর করায়, বেতন বন্ধ হয়ে গেছে। অনুদান খাত থেকে তাদের বেতন দিলেও ভবিষ্যতে পেনশন নিয়ে জটিলতা হবে।'

আরও পড়ুনঃ আমরণ অনশনের ঘোষণা ইডেন ছাত্রলীগ বহিষ্কৃতদের

রেলওয়ের লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রবীর বিশ্বাস জানান, তিন মাস বেতন না পেয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা খুব কষ্টে আছেন। ঈদের উৎসব ভাতা পর্যন্ত পাননি। রেলমন্ত্রী, সচিব, মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, 'রেলওয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকারি চাকরিজীবী। আইবাসের মাধ্যমে বেতন পাচ্ছেন বহু বছর। কেন তাদের আইবাস থেকে বাদ দেওয়া হবে? আইবাস থেকে বাদ পড়লে কেউ কী আর সরকারি চাকরিজীবী থাকেন?' 

এদিকে রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষায় বিনিয়োগের চেয়ে রেলওয়ের আগ্রহ বেশি প্রকল্প কেনাকাটায়। ভারতীয় রেলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দেশের সেরা। মনোযোগ না দেওয়ায় রেলের মতো এখন বিদ্যালয়গুলোও ডুবছে। তবে রেল সচিব জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ের বিষয়ে তারা খুবই আন্তরিক।


সর্বশেষ সংবাদ