বিএনপি জোট ছেড়েছে জামায়াত, পর্দার আড়ালে নতুন হিসাব নিকাশ

জামায়াত আর বিএনপির জোটে নেই
জামায়াত আর বিএনপির জোটে নেই  © ফাইল ছবি

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ছেড়েছে জামায়াত! বক্তব্যটা যেহেতু জামায়াতের আমিরের মতো দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এসেছে এটাকে আর অবিশ্বাস করারও কোনো সুযোগ নাই। এই সিদ্ধান্তে কার কী লাভ হলো? মানুষ কিভাবে নিচ্ছে এই সিদ্ধান্ত? এটাই ফ্যাক্ট।

১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, জামায়াতের আমির গোলাম আজম এবং ইসলামি ঐক্যজোটের আমির শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক মিলে চারদলীয় ঐক্যজোট প্রতিষ্ঠা করেন।

তেইশ বছরের পথ চলায় এই জোট ছেড়ে কিছু দলের অংশ বিশেষ মাঝে মাঝে চলে গেছে, আবার অনেকেই যুক্তও হয়েছে। চার দলীয় জোট বিশ দলে পরিনত হয়েছে। অনেক ঝড় বয়ে গেছে কিন্তু বিএনপি জামায়াতের ঐক্যে ফাটল ধরাতে পারেনি। এবার জামায়াত নিজে থেকেই চলে গেল!

জামায়াতের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃত্বের ফাঁসি হয়েছে। যে পরিবারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত তাদের কাছেও দায় আছে দলটির। বিএনপি জোট ছাড়া মানে আওয়ামী লীগের লাভ। জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্বের ফাঁসি হওয়ার পরে তাদের কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যদি সরকারকেই লাভবান করে থাকে তাহলে নৈতিকভাবে দলটিকে অনেক প্রশ্নের সামনে দাঁড়াতে হবে।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো যদি প্রশ্ন তোলে এই ধরনের সিদ্ধান্ত আগে নিলে তো অনেকের ফাঁসি ফেরানো যেত! পরিবারগুলোকে জবাব দেয়া কঠিন হবে দলটির। এই প্রশ্ন সাধারণ মানুষও তুলতে পারে। আওয়ামী লীগ যদি আরেকটি চৌদ্দ এবং আটারো মডেলের নির্বাচন করতে চায় সেখানে স্পষ্ট করে বিএনপি বলছে তারা সেই নির্বাচনে যাবে না। যেনতেন ধরনের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে সাধারণ মানুষও বিএনপির কাছ থেকে মুখ ফেরাবে। আশা করি বিএনপিও সেই পথে হাঁটবে না।

আওয়ামী লীগের বিএনপিবিহীন কোনো পাতানো নির্বাচনে জামায়াত হয়ত সংসদীয় রাজনীতির মারপ্যাচে কয়েকটা আসন পেলে পেয়েও যেতে পারে। বিএনপিকে ছাড়া সরকার আরেকটি নির্বাচন করে ফেললে সেখানে যদি গণতন্ত্র মঞ্চ, জামায়াত এবং ছোট খাট কিছু দল অংশ নেয় তারা সরকারের কাছ থেকে সহযোগীতা পাবে এটা স্পষ্ট। সরকার এমনই চায়।

আমি বিশ্বাস রাখতে চাই দীর্ঘদিন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করা এই দলগুলো শেষ মুহূর্তে কোনো ফাঁদে পা দেবে না।

আরও পড়ুন: জামায়াত আর বিএনপির জোটে নেই, জানিয়ে দিলেন ডা. শফিক

জোট ভোটের জন্য, আদর্শের জন্য নয়। এই বক্তব্যও সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বিএনপি-জামায়াত জোটের তেইশ বছরের ঐক্য এন্টি ইন্ডিয়ান এবং এন্টি ফ্যাসিবাদবিরোধী জায়গায় শুধু ভোট নয়, একটা জায়গায় দুপক্ষের একটা আদর্শিক মিল তো ছিলই। যেটা জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান। জামায়াতের এখান থেকে সরে আসা গণতন্ত্রের লড়াইকে যদি কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে জনগণ তাহলে সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করবেই।

সুষ্ঠু নির্বাচনে বিএনপি এককভাবেই সরকার গঠনের ক্ষমতা রাখে। এটা শতভাগ সত্য। মানুষ বিএনপিকে ভোট দিতে চায়। এখানে কোনো সন্দেহ নেই। এজন্যই সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে হাটতে নারাজ। অনেকেই বলছে জামায়াতের আওয়ামী লীগের সাথে জোট হয়ে যেতে পারে। আমি এমনটা মনে করি না। তবে আওয়ামী লীগের সাথে জামায়াতের নির্বাচন নিয়ে একটা আন্ডারস্টেন্ডিং হয়ে যেতে পারে, যেহেতু তারা আর বিএনপির সাথে নেই।

যদি বিএনপিকে ছাড়া আরেকটা নির্বাচন করার কোনো অশুভ চক্রান্ত হয় সেখানে জামায়াত হয়ত স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে পারে যেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকলেও কিছু আসনে জামায়াতকে সুবিধা দেবে। এমনটি কিছু আসনে হলে হয়েও যেতে পারে। অবাক হওয়ার কিছু নাই। রাজনীতিতে অনেক অসম্ভব ঘটনাই ঘটে। অবাক হওয়ার কিছু নাই।

প্রশ্ন হচ্ছে জামায়াতের জোট ছাড়ায় বিএনপির কী খুব ক্ষতি হলো? এর ব্যাখ্যা হবে নির্বাচনটা কার অধীনে হয় তার ভিত্তিতে? নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে বিএনপির তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ মানুষ বিএনপিকে ভোট দিতে চায়।

সম্প্রতি উপজেলা পর্যায়ে বিএনপির কর্মসূচীতেও জনতার ঢল নেমেছে। বিএনপির জনপ্রিয়তা কমেনি, বেড়েছে। এমন কিছু আসন আছে যেগুলোতে জামায়াতের পাঁচ থেকে দশ কিংবা পনের হাজার ভোট আছে সেই আসনগুলোতে এর কিছুটা প্রভাব পড়বে।

আটারো সালের মতো নির্বাচন হলে বিএনপি সেই নির্বাচন বয়কট করলে সরকার জামায়াতসহ কিছু ছোট খাটো দলকে কিছুটা ছাড় এবং কিছু আসন ছেড়ে দিতে পারে। জামায়াত কী এমন কিছুই ভেবেই জোট ছেড়েছে? সামনে এমন কিছু হলে দল এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে জামায়াত সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা প্রতিষ্ঠিত হবে। নানামুখী হিসাব নিকেশই এখন হবে।

দল এবং জোট ভাঙা-গড়ার খেলা ভোটের আগে খুব সাধারণ ঘটনা। বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করতে সক্ষম হলে ভোটের রাজনীতিতে জামায়াত চলে যাওয়ায় বিএনপি বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক ঝুঁকিতে পড়বে না।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক


সর্বশেষ সংবাদ