বন্ধুত্বের সম্পর্কে সৎ থাকা জরুরী

বন্ধুত্ব
বন্ধুত্ব   © সংগৃহীত

বন্ধু শব্দটি অতি ক্ষুদ্র হলেও খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এই এক শব্দই দুটি ভিন্ন মানুষকে এক ফ্রেমে বন্দি করে। ফলে তারা যেমন নির্দ্বিধায় পরস্পরকে বিশ্বাস করতে পারে, তেমনি নিঃসংকোচে তারা মনের কথাগুলো পরস্পরের কাছে প্রকাশ করতেও পারে।

শুধু তাই নয়, বিপদে বন্ধু একটি শক্তির নাম। কেননা তারা বিপদে একে অন্যের পাশে যেমন ছুটে আসে, তেমনি বিপদ কেঁটে উঠতে পরস্পরকে জোগায় সাহস ও শক্তি। এমনকি এ সম্পর্ক মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। তাই বন্ধুত্ব মানে হাসি-তামাশা, হট্টগোল, খুনসুটি, মান-অভিমান, বিরক্তি এবং দিন শেষে ভালোবেসে মিলে যাওয়া।

প্রখ্যাত মনীষী ও কবি শেখ সাদী বলেছেন, ‘আগম্ভকের কোন বন্ধু নেই, আর এক আগন্তুক ছাড়া।’ তাই বন্ধুত্বের সম্পর্কে সর্বদা সৎ ও বিশ্বাসী থাকা জরুরি। কারণ অবিশ্বাস নিয়ে প্রকৃত সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব নয়। বন্ধুত্ব যেমন খুব সহজে গড়ে উঠে না, তেমনি একবার হয়ে গেলে সহজে সেটা ভাঙ্গাও যায় না। এ সম্পর্কে জুড়ে থাকে অগাধ আস্থা ও বিশ্বাসের লেনাদেনা।

আরও পড়ুন: আমরা মানের চেয়ে সংখ্যা বাড়ানোয় এক্সপার্ট জাতি

বন্ধু যে কেউ হতে পারে। সেটা মা-বাবা, ভাই-বোন কিংবা খুব কাছের কেউ। যার সাথে মনের মিল বেশি, যার সঙ্গ আনন্দ দেয়, যাকে পাশে পেলে বিষন্ন মন ভালো হয়ে যায়। তাই জীবনে চলার পথে এমন একজন বন্ধু প্রয়োজন। কেননা বন্ধুহীন জীবন ব্রেকবিহীন গাড়ির মতো। যেটা যেকোন সময় গতি হারিয়ে বিলিন হতে পারে।

প্রকৃত বন্ধুর স্বরূপ

প্রকৃত বন্ধুতের উদাহরণ দিয়ে বিখ্যাত কমেডিয়ান চার্লি চ্যাপলিন বলেছেন, ‘আমার সবথেকে ভাল বন্ধু হলো আয়না, কারন আমি যখন হাসি, তখন সে কাঁদে না।’

প্রকৃত বন্ধুত্বের সম্পর্ক হলো বর্ষাকালে ছাতা আর শীতেকালে কাঁথার মতো। এ সম্পর্ক বিপদে আগলে রাখে। একরাশি বিশ্বাস নিয়ে পাশে থাকে। সকল মান-অভিমান ভুলে কাছে আসে। আবেগ অনুভূতির মূল্য দিতে জানে। অন্যের কাছে বন্ধুর হাজারো দোষ গোপন রাখে। এমনকি বন্ধুর ভাল গুণগুলো অন্যের কাছে নিঃস্বার্থভাবে প্রকাশ করতে দ্বিধা করে না। মূলত গুণের অধিকারীরাই প্রকৃত বন্ধু হওয়ার যোগ্যতা রাখে।

স্টালিন বলেন, ‘প্রকৃত বন্ধু তো সেই, যে খারাপ সময়ে বন্ধুর সঙ্গ ত্যাগ করেনা। এমনকি নিছক কোন স্বার্থে এ সম্পর্ক নষ্ট হয় না।'’

প্রকৃত বন্ধুত কখনো হারিয়ে যায় না। উপমা হিসেবে বলা যেতে পারে, জীবন হলো একটা রেল স্টেশনের মতো, যেখানে ভালোবাসা হলো ট্রেন। যা আসে আবার চলেও যায়। কিন্তু বন্ধুত্বটা হলো রেল লাইনের মতো, যা চিরকাল থেকে যায়। তাই প্রকৃত বন্ধু অমর। যারা স্বার্থ শেষে কালের প্রবাহে নিমেষেই হারিয়ে যায় না। এমন বন্ধু হারানো উচিক নয়। কারণ প্রকৃত বন্ধুত্ব বারবার গড়ে উঠে না।

আরও পড়ুন: ‘ক্যাম্পাসে রুচিশীলতার চরম অধপতন ঘটছে’

জোসেফের ভাষ্যমতে, ‘বিপদে কিংবা খারাপ সময়ে যে বন্ধুর কথা সবার আগে মনে হয়। তাকে কখন হারিয়ে ফেলো না। যেদিন সে সত্যিই থাকবে না, সেদিন তুমি তাকে হাজার মিস করেও আর পাবে না’। বিখ্যাত মনীষী নিৎসে বলেছেন, ‘একজন বিশ্বস্ত বন্ধুত্ব হচ্ছে প্রাণরক্ষাকারী ছায়ার মতো। যে তা খুঁজে পেলো, সে যেন একটি গুপ্তধন পেলো’।

বন্ধুহীনরা দূর্ভাগা!

বন্ধুহীন মানুষকে দুর্ভাগা বলেছেন এরিস্টটল। তাঁর মতে, ‘দূর্ভাগ্যবান তারাই, যাদের ভাল কোন বন্ধু নাই।’ তাই জীবনে চলার পথে অন্তত একজন হলেও বন্ধু প্রয়োজন। যে তার আবেগ ও অনুভূতির মূল্যায়ন করবে। বিষন্নতায় অনুপ্রেরণা জোগাবে। অন্ধকারে ভরসা হবে। যে সম্পর্ক গড়ে উঠবে হৃদয়ে বন্ধন থেকে।

ইউরিপিদিস বলেছেন, ‘একজন ভাল বন্ধু হাজার আত্মীয়ের সমান’। হেলেন কেলার মনে করেন, ‘অন্ধকারে একজন বন্ধুর সঙ্গে হাঁটা, আলোতে একা হাঁটার চেয়ে উত্তম।’

তাই জীবনে একজন হলেও প্রকৃত থাকুক। যারা আয়না ও ছাঁয়ার মত বন্ধু সর্বদা পাশে থাকবে। যারা কখন স্বার্থের টানে ছেড়ে দিবেনা হাত। তবে যদি এমন কাউকে খুঁজে না পাও, তবে নিজে হয়ে যাও।

লেখক- শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 


সর্বশেষ সংবাদ