বানর যখন ফটোগ্রাফার!
- মো: রাসেল হোসাইন
- প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০১৯, ০৫:১০ PM , আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:৩৪ PM
বানরের কান্ড কারখানা দেখে মুগ্ধ হয় না এমন মানুষ খুব কমই আছে। আর শিশুরাতো বানর দেখলে সেখান থেকে নড়তেই চায় না। এ বানর প্রজাতির সাথে আছে মানুষের অনেক মিল। তাইতো বিখ্যাত বিজ্ঞানী বলেই পেললেন মানুষ বানর থেকে এসেছে। এটা অবশ্য তাঁর চুক্তি।
এ পর্বে বানরের জীবনবৃত্তান্ত তুলে ধরার চেষ্টা করব।
বানর কি: বানর, বান্দর বা বাঁদর এক প্রকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী। বানর বুদ্ধিমান ও সামাজিক জš‘, এরা মানুষের মত বৈচিত্র্যভাবে জীবন যাপন করতে পারে।বানরদের লম্বা হাত ও পা আছে যার সাহায্যে এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফ দেয়, খেলা করে। লম্বা লেজ ওয়ালা বানর তাদের লেজ দিয়ে গাছে ঝুলে থাকতে পছন্দ করে। বানর প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে ছোট হল পাইগিমিই মারমোসেটা। যেটি প্রায় আঙুল আকৃতির।বানরের স্বভাবে আছে হিংস্রতার ছাউনি।
আবাস্থল: প্রধানত দক্ষিণ এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকায় বানর বেশি দেখা যায়। নব বিশে^র বানর দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া যায়। পুরাতন বিশ্বে বানরেরা আফ্রিকা এবং এশিয়ায় বাস করে। অধিকাংশ বানর গাছে বাস করে। এছাড়াও এশিয়ার আফিগানিস্তান, জাপান, ফিলিপাইন এবং বোর্নিওতে। বাংলাদেশে সুন্দর বনে বিচিত্র্য প্রজাতির বানর বাস করে। তাছাড়া বান্দরবন, খুলনা, সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চলে, খাগড়াছড়ি এবং বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় ও বানরের রাজ্যত্ব বিরাজমান।
বানরের প্রকার: বর্তমানে দুই দলের বানর রয়েছে। যারা হল নব বিশ্বের বানর আর পুরাতন বিশ্বের বানর। পুরাতন বিশ্বের বানর নব বিশ্বের বানর থেকে আকারে ছোট। পৃথিবীতে ১৯ প্রজাতির বানব দেখা যায়। ছোট প্রজাতির কথা আগেই উল্লেখ করলাম। বাংলাদেশে ১০ প্রজাতির প্রাইমেটের মধ্যে রয়েছে ৫ প্রজাতির বানর। যার মধ্যে রয়েছে লাল বানর, মাকড়শা বানর ইত্যাদি।
বানরের খাবারের বৈচিত্র্যতা: বানরের খাবারের মধ্যে বৈচিত্র্যতা লক্ষ্য করা যায়। এরা নিরামিষভোজী প্রাণী। বানরের প্রধান এবং পছন্দের খাবার হলো কলা। এছাড়া এরা মানুষের মত বিভিন্ন খাবার খেতে দেখা যায়। এরা নারিকেল, বাদাম, পাখির ছানা এবং বিভিন্ন ফল খেয়ে থাকে। তাইতো একটা গল্প আছে আঙুর ফল তিতা। ছেলেমেয়েরা বানরকে খাওয়াতে পছন্দ করে। তাই দেখা যায় বানর বাদাম, চানাচুর খারচ্ছ। আবার গরমে আইসক্রিমও খায় বানর!
বুৎপত্তি: অনুমান করা হয় বানরের উৎপত্তি সুদূর ৩.৫-৪ মিলিয়ন বছর পূর্বে।
এখন বানরের কিছু প্রজাতি নিয়ে আলোচনা করবো
সাস বানর বা লাল বানর: এটি সবেেচয়ে প্রাচীন প্রজাতির বানর। এটি পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের প্রাদেশিক প্রাণী হিসেবে পরিচিত। এদের দেহ বাদামী অথবা ধূসর বর্ণের লোমে আবৃত। এদের লেজের দৈর্ঘ্য ৮.১-৯ ইঞ্চি। স্ত্রী বানর আকারে পুরুষ বানর থেকে ছোট হয়। স্ত্রী এবং পুরুষ উভয়ের দাঁতের সংখ্যা ৩২ টি।
এ প্রজাতির প্রাণীটি আইইউসিএন লাল তালিকায় বিপদগ্রস্ত হিসেবে উল্লেখ হয়েছে। এদের আবা¯’ল দক্ষিণ, মধ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াদেশসমূহে তৃণভূমি এলাকায়। তাছাড়া এরা মানব বসতির কাছাকাছি থাকতেও পছন্দ করে।
আমরা সাধারণত এ প্রজাতির বানরকে বেশি দেখতে পাই। গ্রামে বানরের খেলায়ও এ বানর দক্ষ। এদের সাথে আছে মানুষের অনেক মিতালী। মনস্তাত্তিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, লাল বান্দর জটিল মানসিক সক্ষমতার অধিকারী। বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ, নিয়ম কানুন-পালন, নিজস্ব মানসিক রাজ্যে বিচরণ করতে পারে। এরা সচেতনতায়ও পারদর্শী।
লাল বান্দর কলহপ্রিয় জাতি। এরা অনুপ্রবেশকারীকে চোখ বড় বড় করে ও মুখ হা করে ভয় দেখায়। ভয় পেলে কাশির মত খক খক শব্দ করে ডাকে। দলের প্রধান থাকে একটি প্রভাবশালী পুরুষ বানর। এরা দিনের বেশির ভাগ সময় খাবারের খোঁজে ব্যয় করে। এরা হরিণের প্রিয় বন্ধু । হরিণকে বাঘ থেকে বাঁচতে গাছের ডাল ঝাকিয়ে সাহায্য করে।
ল্টোলেজি বানর: এরা কুলু বান্দর, শুকরলেজি বানর, ছোটলেজি বানর, উলু বানর, সিংহ বানর, সিঙ্গা বানর ইত্যাদি নামেও পরিচিত। এদের উপরের লোম জলপাই-ধূসর, নিচের অংশ ধূসর-সাদা ও মুখ গোলাপি। নাকের আগা থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৪০-৬০ সেমি। লেজ ১৮-২৫ সেমি। শূকরের মতো লেজটি উল্টানো থাকে। দলনেতার মাথায় মাঝে মাঝে সিংহের মতো কেশর থাকে। এরা দলগত ভাবে বাস করে।
উল্টোলেজি বানর নিচু এলাকায় বন, উপকূল, জলা ও পাহাড়ি বনে দেখা যায়। বাংলাদেশে এরা সিলেট ও চট্রগ্রাম অঞ্চলে চিরসবুজ বনে বাস করে। পুরুষ বানর বেশ রাগী, স্ত্রী বানর তুলনামূলক শান্ত। এরা দঁত-মুখ খিঁচিয়ে ভয় দেখায়। ফল, মূল, কচি পাতা পাখির বা”চা ইত্যাদি খায়। ১৬২-১৮৬ দিন পর একটি বা”চা দেয়। এরা ১০-১২ বছর বাঁচে। এরা আইইউসিএন লাল তালিকায় সংকটাপন্ন প্রাণী। দক্ষিণ এশিয়ায় বিপন্ন এবং বাংলাদেশে মহাবিপন্ন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত।
মাকড়শা বানর: এদের ওজন গড়ে ১৩.২৫ পাউন্ড। উচ্চতা প্রজাতি ভেদে ২-৫ ফুট। এরা ২৪-২৭ বছর বেঁচে থাকে। এদের প্রতিটি বাহু খুব শক্তিশালী। আরও শক্তিশালী এদের লেজ। লেজ এবং বাহু মিলিয়ে অনেকটা পাঁচ বাহুর প্রাণীর মত দেখায়। এদের বুড়ো আঙ্গুল নেই। এরা হাত পায়ের আঙ্গুল, লেজ ও বাহু গাছের শাখায় পেঁছিয়ে স্বাধীন ভাবে গাছ থেকে ঝুলতে পারে। তখন এদের মাকড়শার মত দেখায়। এখান থেকে এরা মাকড়শা বানর নামে পরিচিত।
এদের প্রধান খাদ্য হলো ফল। এরা ফুল, বীজ, গাছের বাকল, পাতা, পখির ডিম এবং ছোট পোকামাকড় খেয়ে বাঁচে। মাকড়শা বানর দুই প্রজাতির। বাদামী মাথার বানর আর কালো মাথার বানর। পুরুষ মাকড়শা বানরেরা বাচ্চাদের প্রতিদ্বদ্বী মনে করে এবং মেরে পেলতে চায়। সদ্য জন্মানো ছানাকে শক্ত হওয়া পর্যন্ত মা বানর নিজের কাছে রাখে। মাকড়সা বানরেরা খুবই বুদ্ধিমান ও প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী। এরা নিজেদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক রেখে চলে। এরা শুভে”ছা বিনিময় করতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। এ বানর দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকায় দেখা যায়।
পিগমি মারমোসেট বা আঙ্গুল আকৃতির বানর: বিচিত্র পৃথিবীর প্রাণীজগতের বৈচিত্রের শেষ নেই। কিন্তু কেউ কি ভেবেছেন, একটি বানরের ওজন ৮৫-১৪০ গ্রাম। যা একটা কমলা বা আপেলের ওজনের চেয়েও কম। উচ্চতা মাত্র ৪-৫ ইঞ্চি হতে পারে।
পৃথিবীতে পিগমি মারমোসেট নামে এক প্রজাতির বানর আছে, যারা অনায়াসে মানুষের আঙ্গুলে বসে ঘুরে বেড়াতে পারে! কেউ কেউ একে পকেট বানরও বলে। এই ক্ষুদ্র প্রাণীটিকে মূলত দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন রেইনফরেস্টে দেখা যায়। এরা পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট প্রজাতির বানর। মারমোসেট গাছে চড়তে অত্যন্ত পটু। এরা আকারে ছোট হওয়ায় খুব স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে পারে। এদের আরও একটা গুণ হলো ১৮০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ঘাড় ঘোরাতে পারে। যা তাদের শিকার ধরতে সাহায্য করে। ফল, গুঁড়ি ও ছোট পোকামাকড়, গাছের পাতা খেতে এরা পছন্দ করে। এরা গর্ত খুঁড়ে অনেক সময় নষ্ট করে। এরা ব্রাজিল, কলম্বিয়া, পেরু ও ইকুয়েডরেও বাস করে থাকে।