বাংলা ভাষার স্বাধীন ব্যাকরণ, বানান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন

আবু সাঈদ
আবু সাঈদ  © সম্পাদিত

বাংলা ভাষার ব্যাকরণ দীর্ঘদিন ধরে সংস্কৃত ব্যাকরণের প্রভাব বহন করে আসছে। যদিও বাংলা একটি স্বাধীন ভাষা, তবুও এর ব্যাকরণিক কাঠামোতে সংস্কৃতের জটিল রীতিনীতির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। বাংলা একাডেমির উচিত বাংলা ভাষার জন্য একটি স্বতন্ত্র ব্যাকরণ তৈরি করা, যা ভাষার স্বাভাবিক প্রবাহ ও সাধারণ ব্যবহারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। এর ফলে বাংলা ভাষা সহজবোধ্য ও প্রাকৃতিকভাবে বিকশিত হতে পারবে।

বাংলা উচ্চারণ ও বানানের সমঞ্জস্য বিধান করাও জরুরি। অনেক শব্দের বানান উচ্চারণের সাথে মেলে না, শব্দের মধ্যে ধ্বনিগত পার্থক্য থাকলেও বানানগত জটিলতা রয়ে গেছে। বাংলা একাডেমি একটি মানক উচ্চারণ ও বানান রীতি নির্ধারণ করলে তা লেখার ও উচ্চারণের মধ্যে সামঞ্জস্য আনবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য শেখা সহজ হবে।

বর্তমানে প্রযুক্তির বিকাশের ফলে বাংলা ভাষাকে ডিজিটাল মাধ্যমে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন। এর জন্য বাংলা ভাষার বর্ণগুলোর সঠিক কোড নির্ধারণ করা দরকার, যা ইউনিকোড ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে কার্যকর হবে। এতে টাইপিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ভাষা প্রক্রিয়াকরণ (এনএলপি) ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত প্রয়োগ সহজ হবে। একইসঙ্গে, বাংলা ভাষার জন্য এমন বানান রীতি নির্ধারণ করা দরকার যা সহজবোধ্য এবং প্রযুক্তির জন্য উপযোগী হয়।

বাংলা ভাষার প্রযুক্তিগত ব্যবহারে বানানের সরলীকরণও গুরুত্বপূর্ণ। অনেক বাংলা শব্দের একাধিক প্রচলিত বানান রয়েছে, যা বিভ্রান্তি তৈরি করে। বাংলা একাডেমি যদি একটি সরল ও যুক্তিযুক্ত বানান কাঠামো নির্ধারণ করে, তবে সাধারণ মানুষের জন্য লেখা ও পড়া সহজ হবে এবং প্রযুক্তি-নির্ভর ভাষা প্রক্রিয়াকরণেও সুবিধা হবে।

এছাড়া বাংলা ভাষার জন্য একটি আধুনিক ভাষাগত মডেল তৈরির প্রয়োজন, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ভাষা প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তির জন্য উপযোগী হবে। সহজবোধ্য ব্যাকরণ, সরলীকৃত বানান ও উচ্চারণের সঠিক নির্দেশনা থাকলে এই মডেল উন্নতভাবে কাজ করতে পারবে।

আরো পড়ুন: তথ্য সুরক্ষা দিবস: প্রযুক্তি নির্ভর পৃথিবীর নিরাপত্তার অঙ্গীকার

বাংলা একাডেমির নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্থিতিশীলতা রক্ষা করা জরুরি। একাডেমি কর্তৃক অনুমোদিত বানান হুটহাট পরিবর্তন না করে কমপক্ষে ১০ বছরের জন্য স্থিতিশীল রাখতে হবে, যাতে শিক্ষার্থী, গবেষক এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য নীতিমালা অনুসরণ করতে পারে। নির্ধারিত সময়ের পরে প্রয়োজন অনুসারে গবেষণা ও ভাষার প্রাকৃতিক বিবর্তন বিবেচনায় এনে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা যেতে পারে।

বাংলা একাডেমি যদি এসব উদ্যোগ গ্রহণ করে, তবে বাংলা ভাষার বিকাশ আরও সুসংহত ও বিজ্ঞানসম্মত হবে। সহজ, ব্যাকরণগতভাবে সুগঠিত ও প্রযুক্তির জন্য উপযোগী একটি বাংলা ভাষা তৈরি হলে তা বিশ্বমঞ্চেও আরও শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারবে।

লেখা: সফটওয়্যার প্রকৌশল বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।


সর্বশেষ সংবাদ