শীতলক্ষ্যায় লাশের মিছিল থামছে না

নিহত মেধাবী শিক্ষার্থী ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি ও ফারদিন নুর পরশ
নিহত মেধাবী শিক্ষার্থী ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি ও ফারদিন নুর পরশ  © টিডিসি ফটো

ফারদিন নুর পরশ। ২৩ বছর বয়স। পৈত্রিক বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়, ঢাকায় থাকত। বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১৮তম ব্যাচের মেধাবী ছাত্র। বুয়েটে মেধা তালিকায় তৃতীয় হয়েছিল ফারদিন। সে তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। তার বাবা সাংবাদিকতা করেন। আর্থিক টানাপোরেনের সংসারে ফারদিন নিজে টিউশনি করে নিজের খড়চ চালিয়ে পরিবারে কিছুটা সহায়তা করতো। তাকে নিয়ে পরিবারে নানা স্বপ্ন তৈরী হয়েছিল।

অথচ গত শুক্রবার নিখোঁজ হয় ফারদিন, আর তিন দিন পর গত পড়শু তার লাশ পাওয়া যায়। ঘাতকরা ছেলেটিকে হত্যা করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে রাখে। এই শীতলক্ষ্যায় ভেসেছে অসংখ্য লাশ। ১৯৭১ সালে দেখেছি শতশত লাশ এই নদীতে ভেসে চলেছে। পাকিস্তানী ঘাতকরা বাঙালিদের হত্যা করে এই শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দিত। তারপর ত্বকী, আশিক, চঞ্চল, বুলু, সাতখুন অসংখ্য লাশ।

এই নদী প্রতিনিয়ত বয়ে চলেছে লাশের মিছিল। এ মিছিল থামছেই না। এক সময় এই শীতলক্ষ্যার পানি ছিল এ অঞ্চলের মানুষের পানের একমাত্র অবলম্বন। তা বেশীদিন আগের কথা নয়। অথচ এখন এই নদী লাশের ভাগার।

দেশ স্বাধীন হলেও ঘাতকরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। বরং আরও শক্তিশালি হয়েছে। সরকারের ছত্রছায়ায় তারা এখন সর্বশক্তিমান। এদের আইনের আওতায় আনা যায় না। এ সবের বিচার হয় না। এইটি এক ফারদিনের মৃত্যু শুধু নয়, একটা পুরো পরিবারের স্বপ্ন আকাঙ্খার অপমৃত্যু।

আরও পড়ুন: ফারদিনের হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার চান বুয়েট শিক্ষার্থীরা

ত্বকী হত্যা: ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

আশিক হত্যা: নারায়ণগঞ্জের আশিক ইসলাম (৩০) নামের এ ব্যবসায়ী নিখোঁজের দুদিন পরে সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর মেঘনা ডিপোর সামনে থেকে ২০১১ সালের ১৫ মে উদ্ধার হয়েছিলেন। 

আশিক একটি প্রিন্টিং কারখানার মালিক। ঘটনার দিন রাতে একটি টেলিফোন পেয়ে শহরের খানপুরের বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি আর বাড়ি ফিরে আসেননি। পরেরদিন এ ব্যাপারে তার বড় ভাই ফাহিম সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

চঞ্চল হত্যা: ২০১২ সালের ১৬ জুলাই গভীর রাতে বাসা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়ে নিখোঁজ হন চঞ্চল। ১৮ জুলাই বন্দর উপজেলার শান্তিনগর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে চঞ্চলের লাশ উদ্ধার করে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করে পুলিশ। ১৯ জুলাই লাশের ছবি ও কাপড় দেখে লাশটি চঞ্চলের বলে শনাক্ত করেন তাঁর বড় ভাই জোবায়ের ইসলাম। দিদারুল আলম চঞ্চল নারায়ণগঞ্জের তরুণ নাট্যকার ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ