ইউনানী ও আয়ূর্বেদিক চিকিৎসার ‘ইন্ডিজিনাস মেডিকেল কলেজে’ কীভাবে চলে পাঠদান

ঢাকা ইন্ডিজিনাস মেডিকেল কলেজ
ঢাকা ইন্ডিজিনাস মেডিকেল কলেজ  © টিডিসি ফটো

বর্তমানে দেশে সরকারিভাবে চারটি চিকিৎসা পদ্ধতি স্বীকৃত রয়েছে। এ পদ্ধতিগুলো হলো অ্যালোপ্যাথিক, ইউনানী, আয়ূর্বেদিক এবং হোমিওপ্যাথিক। এর মধ্যে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক অন্যতম। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ এ চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল। কথাগুলো রাজধানীর সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজের ডা. মো. নাজমুল হুদার। প্রতিষ্ঠানটির নতুন নাম ঢাকা ইন্ডিজিনাস মেডিকেল কলেজ।

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে জানা যায়, এখানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কোর্স পরিচালনা করা হয়। সেগুলো হলো- ব্যাচেলর অব ইউনানী মেডিসিন ও সার্জারি (বিইউএমএস) এবং ব্যাচেলর অব আয়ূর্বেদিক মেডিসিন ও সার্জারি (বিএএমএস)। এ দুটি কোর্স এমবিবিএস কোর্সের সমপর্যায়ের। এটি দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত। কোর্সগুলোর মেয়াদ ৬ বছর, যার মধ্যে ৫ বছর অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম এবং ১ বছর ইন্টার্নশিপ অন্তর্ভুক্ত। এটি শিক্ষার্থীদের আধুনিক চিকিৎসা জ্ঞান অর্জন এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভের জন্য একটি সুদৃঢ় ভিত্তি তৈরি করে।

প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে জড়িত আছেন প্রায় ৪২ জন দেশ-বিদেশের উচ্চতর ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষক ও শিক্ষিকা। তারা অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ। তারা শিক্ষার্থীদের গুণগত শিক্ষা প্রদানে অনবদ্য ভূমিকা রাখছেন। এছাড়া এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক সহায়ক সুবিধা রয়েছে। এসব সুবিধার মধ্যে রয়েছে, একটি সুবিশাল লাইব্রেরি, যেখানে বিভিন্ন বিষয়ক বই ও গবেষণাগ্রন্থ সহজেই পাওয়া যায়। এনাটমি মিউজিয়াম, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পর্কে বাস্তব ধারণা প্রদান করে। 

প্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তি ও ভর্তির যোগ্যতা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন কর্তৃক নির্ধারিত এমবিবিএস এবং বি.ডি.এস কোর্সের মতোই। এ মানদণ্ড অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের অবশ্যই নির্দিষ্ট যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এটি ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য প্রাথমিক শর্ত। ভর্তি প্রক্রিয়া প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। এখানে প্রতি কোর্সের জন্য ২৫ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে বিইউএমএস কোর্সে ২৫ জন এবং বিএএমএস কোর্সে ২৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন। অর্থাৎ প্রতি বছর ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়।

ফার্মাকোলজি ও ফার্মাকোগনসি মিউজিয়াম, যেখানে ঔষধি উপাদান এবং তার ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা বিস্তারিত জানতে পারেন। এছাড়া, প্যাথলজি, ফিজিওলজি এবং ফার্মেসি ল্যাবরেটরি শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ও ল্যাবরেটরি কাজের দক্ষতা বাড়ায়।

ডা. মো. নাজমুল হুদা বলেন, ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতি একটি বিজ্ঞানভিত্তিক এবং সুপরিচিত চিকিৎসা বিজ্ঞান। এ পদ্ধতি অনেক প্রাচীন এবং এটি যুগের পর যুগ ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং নেপালসহ বিশ্বের আরও অনেক দেশে এ চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে।

তার ভাষ্য, এ চিকিৎসা পদ্ধতি মানুষের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানেও এ চিকিৎসার জনপ্রিয়তা কমতি নেই। এছাড়া ইউনানী এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতি স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক, যেমন রোগ প্রতিরোধ, চিকিৎসা এবং সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের এখানে আরও গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাদি রয়েছে, যেমন প্রোডাকশন ইউনিট এবং গবেষণাগার। এখানে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয় এবং নতুন উদ্ভাবনগুলো সৃষ্টির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ থাকে। এছাড়া ভেষজ বাগান এবং শিক্ষা সফর শিক্ষার্থীদের আরও বাস্তবিক অভিজ্ঞতা অর্জন এবং প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কিত জ্ঞান বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে-তিনি যোগ করেন। 

আরো পড়ুন: নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এনসিপি নেতারা, কে কোন আসনে

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তি ও ভর্তির যোগ্যতা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন কর্তৃক নির্ধারিত এমবিবিএস এবং বি.ডি.এস কোর্সের মতোই। এ মানদণ্ড অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের অবশ্যই নির্দিষ্ট যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এটি ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য প্রাথমিক শর্ত। ভর্তি প্রক্রিয়া প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। এখানে প্রতি কোর্সের জন্য ২৫ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে বিইউএমএস কোর্সে ২৫ জন এবং বিএএমএস কোর্সে ২৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন। অর্থাৎ প্রতি বছর ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৩০০ জন। তারা বিভিন্ন ব্যাচে অধ্যয়নরত আছেন। এর মধ্যে বর্তমানে ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, এবং ৩৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তারা তাদের কোর্সের নির্ধারিত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সফলভাবে অনুসরণ করছে এবং ক্লিনিক্যাল প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন থিওরি ও প্র্যাকটিক্যাল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে।

দুটি কোর্স ১০টি টার্ম, তিনটি কলেজ ফাইনাল এবং ৩টি পেশাগত পরীক্ষার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। কোর্সটি সম্পূর্ণ করার জন্য মোট ৪ হাজার ৯০০ নম্বরের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়। এখানে ছেলেদের জন্য একটি অত্যাধুনিক এবং সুসজ্জিত হোস্টেল রয়েছে।

মেডিকেল কলেজের ২০১৯-২০ সেশনের ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থী তানভীর হোসাইন বলেন; ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে গবেষণা কার্যক্রম তেমনভাবে দৃশ্যমান নয়। এখানে যে ধরনের গবেষণা হয়, তা মূলত অ্যাসাইনম্যান্ট টাইপের। এটি অবশ্য শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে করতে হয়। তবে এগুলো প্রকৃত গবেষণার তুলনায় অনেকটা সীমিত। গবেষণার সুযোগ এবং উৎসাহ বাড়ানো দরকার যাতে, শিক্ষার্থীরা আরও ভালোভাবে অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানে উন্নতি করতে পারে।

তিনি ব্যবহারিক ক্লাস নিয়ে বলেন, আমাদের প্রাকটিক্যাল ক্লাসগুলো সাধারণত ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে সম্পন্ন করা হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাস্তব পরিস্থিতির মাধ্যমে আরও ভালোভাবে শিখতে পারে। তবে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকার কারণে কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষাদানে সমস্যা তৈরি হয়। গবেষণার জন্য আমাদের একটি ল্যাব রয়েছে। কিন্তু এটি বর্তমানে আধুনিকায়ন প্রয়োজন। ক্লাসরুমগুলো সাধারণত ভালো যেখানে শিক্ষার্থীরা অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেন। এছাড়া আমাদের চারটি ভেষজ বাগান রয়েছে। ফলে আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রকৃতির চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর প্রতি গভীর আগ্রহ এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা করে।

প্রতিষ্ঠানের সফলতার বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলছেন, অনেক মানুষ প্রকৃতির দিকে ঝুঁকছেন এবং তারা ভেষজ চিকিৎসা ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতির প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছেন। রোগীরা এখন এ ধরনের চিকিৎসার প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এটি আমাদের প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা পদ্ধতির প্রতি মানুষের আস্থার প্রতিফলন। এছাড়া কাউন্সেলিং এবং মানসিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ফলে রোগীদের সার্বিক সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

আরো পড়ুন: বুয়েটে প্রথমবর্ষে হলে উঠতে সর্বোচ্চ ফি ২৭ হাজার ৮৫০ টাকা টাকা

প্রতিষ্ঠানে দুটি কোর্সে ১৪টি করে ২৮টি বিষয় রয়েছে। এ বিষয়গুলো বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। নন-ক্লিনিকাল সাবজেক্টগুলো অন্তর্ভুক্ত: এনাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি এবং বেসিক প্রিন্সিপল অব ইউনানী ও আয়ূর্বেদিক। ক্লিনিকাল সাবজেক্টগুলো অন্তর্ভুক্ত: মেডিসিন, গাইনি, পেডিয়াট্রিক, ইএনটি, অবথলমোলজি এবং সার্জারি। এছাড়া সেন্ট্রিস্ট (মাঝামাঝি) সাবজেক্টগুলো অন্তর্ভুক্ত: প্যারাক্লিনিকাল, ফার্মাকোলজি, ফার্মাসি, ফরেনসিক মেডিসিন, প্যাথলজি, এবং কমিউনিটি মেডিসিন।

দুটি কোর্স ১০টি টার্ম, তিনটি কলেজ ফাইনাল এবং ৩টি পেশাগত পরীক্ষার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। কোর্সটি সম্পূর্ণ করার জন্য মোট ৪ হাজার ৯০০ নম্বরের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়। এখানে ছেলেদের জন্য একটি অত্যাধুনিক এবং সুসজ্জিত হোস্টেল রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আরামদায়ক ও উৎসাহব্যঞ্জক পড়াশোনার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। হোস্টেলটির অভ্যন্তরে সব ধরনের সুবিধা আছে। এর মাধ্যমে ছেলেরা একাধারে শারীরিক, মানসিক এবং একাডেমিকভাবে সুস্থ ও ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারেন। 

এখানে তারা অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং রাজকীয় পরিবেশে থাকতে পারে। এটি তাদের পড়াশোনার প্রতি আরও বেশি মনোযোগী এবং উৎসাহী করে তোলে। বর্তমানে মেয়েদের জন্য কোনো হোস্টেল সুবিধা নেই জানিয়ে  জানিয়ে ডা. নাজমুল হুদা বলেন, এটি মেয়েদের শিক্ষা কার্যক্রমে কিছুটা বাধা সৃষ্টি করছে। 


সর্বশেষ সংবাদ