প্রশাসক হতে আসিনি: কুবি উপাচার্য

কুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এফ. এম. আবদুল মঈন
কুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এফ. এম. আবদুল মঈন  © টিডিসি ফটো

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ৭ম উপাচার্য হিসেবে গত ৩১ জানুয়ারি যোগদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. এফ. এম. আবদুল মঈন। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। তিনি বরিশালে বেড়ে ওঠেন। বরিশাল জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও বিএম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৮১-৮২ সেশনে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে ১৯৮৯ সালে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

১৯৯১ সালে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাজ্যে পিএইচডির জন্য পাড়ি জমান। এরপর ১৯৯৭ সালে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ২০০৬ সালে পোস্ট ডক্টোরাল করতে যান অস্ট্রেলিয়ায়। এসময় ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেশন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা শুরু করেন। এরমধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে চাকরি ছেড়ে দেন। ২০০৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৩ বছর ফেডারেশন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। এর মাঝেই ২০১৯ সালে ফের অধ্যাপক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেয়ার ভাবনা ও প্রত্যাশা নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে কথা বলেছেন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মঈন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শাহাদাত বিপ্লব।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন এক সপ্তাহ হলো। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কেমন দেখছেন?

অধ্যাপক আবদুল মঈনঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ইয়াং ইউনিভার্সিটি। আমি যোগদানের পর অনেকের সাথে কথা বলেছি। প্রত্যেককেই অনেক যোগ্য মনে হলো। এখানে অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে। নবীণ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক কিছু সৃষ্টির সুযোগ থাকে। এখানে ডিবেটিং সোসাইটি, সায়েন্স ক্লাবসহ অনেকেই অনেক ভালো করছে। যতটা সুনাম আছে এটা উন্নতি করতে হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ চার বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়কে কোন অবস্থানে দেখতে চান? আপনার স্বপ্ন কী?

অধ্যাপক আবদুল মঈনঃ চার বছর পর আমি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের মধ্যে লিডিং পজিশনে দেখতে চাই। এখন যে অবস্থানে আছে, তার চেয়ে অনেক ভালো করবে এ প্রত্যাশা আমার রয়েছে। এর জন্য গবেষণা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণায় দুর্বলতা রয়েছে। গবেষণা একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। গবেষণার জন্য শুধুমাত্র শিক্ষকদের দোষ দিলে হবে না। বরাদ্দ, মন-মানসিকতা, প্রশিক্ষণ সবগুলোই গুরুত্বপূর্ণ। আর বিশ্বব্যাপী এখন বিজ্ঞানমূখী গবেষণার খুব দাম। এর মাধ্যমেই সূচক নির্ধারণ হয়। এজন্য বিজ্ঞানের প্রতি নজর দিতে হবে। আমি চাই গবেষণার মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাক। আমি এখানে প্রশাসক হতে আসিনি। আমি শিক্ষক হিসেবে থাকবো। ক্লাস নিবো। একজন ভিসি হিসেবে যখন আমি ক্লাস নিবো, তখন সবাই ক্লাসে ফিরবে। আমরা তো শিক্ষার্থীদের জন্যই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ আপনি বিদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। বলেছেন, গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গবেষণামুখী শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

অধ্যাপক আবদুল মঈনঃ গবেষণার একটি পোর্টফলিও করার ইচ্ছে আছে আমার। গবেষণার দুটো ইমপ্যাক্ট থাকে। একটি হছে একাডেমিক ইমপ্যাক্ট। অর্থাৎ আমার ডিসিপ্লিনে এটা কি ইমপ্যাক্ট ফেলছে। আর আরেকটি হচ্ছে পলিসিতগত ইমপ্যাক্ট। অর্থাৎ আমি যে রিসার্চ করছি, তা আমার দেশের সোসাইটি বা পলিসিতে কিভাবে ইমপ্যাক্ট ফেলছে। আমাদের যে গবেষণা হয়, তা আমাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এটা তো গবেষণার উদ্দ্যেশ্য না৷ গবেষণা ছড়িয়ে দিতে হবে। এজন্য আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবো। গবেষণা প্যাশনের বিষয়। যে গবেষণা করবে তাকে আটকিয়ে রাখলেও সে করবেই। আমরা এমন কিছু মানুষকে তুলে আনতে চাই।

আরও পড়ুন- কুবি শিক্ষার্থীদের নিজ শহরে নিরাপদে পৌঁছে দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ স্বতন্ত্র লাইব্রেররি ভবন নেই। রয়েছে স্থান ও বইয়ের সংকট। লাইব্রেরিকে ডিজিটালাইজড করার বিষয়ে কী ভাবছেন?

অধ্যাপক আবদুল মঈনঃ আমি ই-লাইব্রেরির বিষয়ে জোর দিব। একটি আধুনিক লাইব্রেরি করতে হলে ই-লাইব্রেরির বিকল্প নেই। তাহলে অনেক সংকট দূর হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ ভর্তি কার্যক্রম, ফরম ফিলাপ, ফলাফলসহ এখনও অনেক বিষয় অ্যানালগ নিয়মে চলছে। রয়েছে ওয়েবসাইটের দুর্বলতাও। এসব কার্যক্রম ডিজিটাইজড করার পরিকল্পনা আছে কি না?

অধ্যাপক আবদুল মঈনঃ সারাবিশ্বই এখন অনলাইনের উপর জোর দিচ্ছে। যার ফলাফল আমরা করোনার মধ্যেই দেখেছি। বাইরের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় একদিনের জন্যেও তাদের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়নি। আমি ইতিমধ্যে একটা আধুনিক ওয়েবসাইট করার জন্য কথা বলেছি। এটা প্রক্রিয়াধীন। খুব শীঘ্রই আমরা এটার বাস্তবায়ন দেখবো৷ তথ্যবহুল ওয়েবসাইট হবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এছাড়া অনলাইনে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করলে বিষয়গুলোর স্বচ্ছতা থাকে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ বিশ্ববিদ্যালয়ে শেণীকক্ষ সংকট রয়েছে। সংকট রয়েছে ল্যাব ও শিক্ষকদের কক্ষেরও। এক্ষেত্রে নতুন বিভাগ খোলার পরিকল্পনা আছে কি না?

অধ্যাপক আবদুল মঈনঃ নতুন বিভাগ খোলার পরিকল্পনা অবশ্যই রয়েছে। বিশেষ করে বিজ্ঞান বিষয়ক। যেগুলোর কারণে গবেষণায় প্রভাব পড়বে। রিজিওনাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটি ভিন্ন বিষয়ের জন্যই বিশ্বে অনেক বেশি পরিচিত হতে পারে। ধরেন, সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ পড়ার জন্য সারাবিশ্ব থেকে পড়তে আসে। আমি এমন বিষয়গুলো খুলতে চাই যেগুলোর কারণে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং পজিশনে যাবে। তবে সেটা অবশ্যই সংকট সমাধান করে। আমাদের একটি মেগা প্রকল্প আছে৷ সেখানে আমরা এসব বিষয় চিন্তা করবো।

আরও পড়ুন- কুবির নতুন উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মঈন

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ সাড়ে ৩ বছরেও মেগা প্রকল্পের দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এ প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে প্রকল্পকে কিভাবে এগিয়ে নিবেন?

অধ্যাপক আবদুল মঈনঃ আমিতো বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন যোগ দিয়েছি। এখনই অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে পারছি না। এটার সাথে প্রাসঙ্গিক কর্তৃপক্ষ আছে৷ তারা এগুলো মনিটরিং করছে। তবে শুধু মেগা প্রকল্প নয়, সব প্রকল্পই যেন সময়মতো শেষ হয় সেদিকে খেয়াল রাখবো। আমি প্রজেক্টকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবো। প্রজেক্ট যেন কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে জোর দিব।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। ভোগান্তি না কমে উলটো বেড়েছে কয়েকগুণ। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কি গুচ্ছ পরীক্ষা থেকে বেরিয়ে আসবে?

অধ্যাপক আবদুল মঈনঃ আমিতো আসলে নতুন। এটার সাথে সংযুক্ত ছিলাম না। যেহেতু এটা কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করা হয়েছে। আমি সমস্যাগুলো নোট করেছি। এটা আমি মিটিংয়ে উপস্থাপন করবো। কিভাবে আমাদের এ সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণ করতে পারবো সে বিষয়ে আলোচনা করবো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

অধ্যাপক আবদুল মঈনঃ ডেইলি ক্যাম্পাসকেও ধন্যবাদ।


সর্বশেষ সংবাদ