পরিশ্রম আর সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদই ছিল ঢাবিতে চান্স পাওয়া প্রান্তীর মূল চাবিকাঠি

ময়মনসিংহের মুমিনুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন প্রান্তী পাল অমি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষায় কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ২৩তম (মানবিক বিভাগ) হন। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ও আইন অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় নবম স্থান অর্জন করেছেন তিনি। পরীক্ষায় নিজের সাফল্যের গল্প নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। তার কথাগুলো শুনেছেন—আমান উল্যাহ আলভী।
ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আপনার অনুপ্রেরণা কী ছিল?
আমার কাছে মনে হয়, জীবনে সফলতার চাবিকাঠি দুটি। প্রথমত পরিশ্রম, দ্বিতীয়ত সৃষ্টিকর্তা আর মানুষের আশীর্বাদ। এ সফলতার পেছনেও আমার মানসিক শক্তি, অনুপ্রেরণা ছিল আমার সৃষ্টিকর্তা ও পরিবার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও আমি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের এফএএসএস ইউনিটে ৩১তম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটে ৭৫তম ও ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ২৪৯তম স্থান অর্জন করেছি।
প্রস্তুতিকালীন কীভাবে পড়ালেখা করতেন...
আমি ভর্তি প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই শুরু করেছিলাম। উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম থেকেই আমার গৃহশিক্ষকের সহায়তায় মূল অ্যাডমিশন ফেজের আগেই সব কিছু একবার করে শেষ করেছিলাম। এরপর আমি আমার প্রস্তুতিকে আরও শানিত করতে ভর্তি হয়েছিলাম ফোকাসের ময়মনসিংহ শাখায়। তাদের সার্বিক সহযোগিতায় আমার প্রস্তুতি পুঙ্খানুপুঙ্খ হয়েছিল। তাই আমার ভর্তি প্রস্তুতিকালীন আমার পড়াশোনার প্রক্রিয়াগুলোকে আরও বেশি সহজ করে দিয়েছিল আমার পারিপার্শ্বিকতা।
আমি ভর্তি প্রস্তুতির সময়ে কিছু ট্রিক ব্যবহার করতাম। আমি কখনো কিছু স্কিপ করে পড়তে পছন্দ করতাম না। আমি প্রতিটা টপিক ভীষণ সুক্ষ্মভাবে পড়তে চেষ্টা করতাম। সেই টপিকটি আয়ত্তে আসার পর সেখানে যে সমস্যাগুলো সম্মুখীন হতাম, সেগুলো দাগিয়ে পড়তাম। শেষে যেন সেগুলো দেখে নিতে পারি।
আমি ততক্ষণই পড়তে চেষ্টা করতাম যতক্ষণ না আমি নিজে সন্তুষ্ট হই। আমি ভর্তি প্রস্তুতির সময়ে প্রচুর বই কিনেছি। কোনো টপিক যেখানে সহজ এবং বিস্তারিত আকারে পেয়েছি, সেখান থেকেই পড়েছি। এভাবেই আসলে আমি নিজেকে প্রস্তুত করেছি।
আরো পড়ুন: ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হলেও সেনাবাহিনীতে যেতে চান তাহমিদ
প্রস্তুতিতে অনেক সময় হতাশা কাজ করে পড়া নিয়ে। এ সময়গুলোয় কীভাবে সামলে উঠতেন...
কোনো শিক্ষার্থী যতই নিজেকে প্রস্তুত করুক না কেন, হতাশা ভর করবেই। আমিও অনেক সময় হতাশ হয়েছি, কান্না করেছি আর ভেবেছি হয়তো কোথাও চান্স পাব না। কিন্তু তখনি আমার মনে পড়েছে আমার বাবার অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা। বাবা ব্যবসাসূত্রে নেত্রকোনা থাকেন। বাবা যখন বাসায় আসতেন, তখন ওনার পরিশ্রান্ত চেহারাই ছিল আমার অনুপ্রেরণা। বারবার নিজেকে বুঝিয়েছি আর খুব বেশি খারাপ লাগলে সৃষ্টিকর্তাকে ডেকেছি, কান্না করেছি। তিনিই আমার মন ভালো করেছেন।
পরীক্ষার হলে কী কৌশল অবলম্বন করে পরীক্ষা দিয়েছেন?
পরীক্ষার হলে মাথা ঠান্ডা রেখে সময়টাকে কাজে লাগানোই আসল। আমি সৃষ্টিকর্তার নাম স্মরণ করে পরীক্ষা শুরু করেছি। সময়কে প্রথমেই ভাগ করে নিয়েছিলাম এমসিকিউ ও রিটেন অনুযায়ী। পরীক্ষার হলে মাথা কিছুটা টেনশনের কারণে অপূর্ণ হয়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। আমারও তাই হয়েছিল। কিন্তু আমি চেষ্টা করেছিলাম যে আমি যেগুলো পারি, সেগুলো আগে লিখব এবং কিছু রেখে আসব না। আমার এ কৌশলটাই কাজে লেগেছে।
কোন বিষয়ে পড়ার ইচ্ছা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী...
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়তে চাই এবং ভবিষ্যতে বিচারক হতে চাই। উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে যাওয়ার ও ইচ্ছা রয়েছে।
পরবর্তী সময়ে যারা পরীক্ষা দেবেন, তাদের জন্য যদি কিছু বলতেন...
আমার অনুজদের বলব, প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই নিতে। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি প্রস্তুতিকালীন পড়াগুলো একটু গুছিয়ে নিলে এ সময়টায় ভীষণ সহজ হবে এবং চাপ কম থাকবে। আগে এটা বিশ্বাস করতে হবে যে আমি পারব, তবেই হবে। প্রতিটি টপিক সুক্ষ্মভাবে পড়ার চেষ্টা করতে হবে। নিজের প্রস্তুতি গুছিয়ে নেওয়ার জন্য সহায়ক বই সেটা কোনো বই হোক বা কোচিং, এ ক্ষেত্রে সচেতনতার সঙ্গে সেগুলো নির্বাচন করতে হবে। সবশেষে সৃষ্টিকর্তা ও পরিবারের আশীর্বাদের কোনো বিকল্প নেই।