বাবার পথ ধরেই ঢাবিতে প্রকৃতি, ভর্তি পরীক্ষায় অবস্থান সেরাদের কাতারে

প্রকৃতি খান
প্রকৃতি খান  © টিডিসি সম্পাদিত

ঢাকার নৌবাহিনী কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী প্রকৃতি খান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষায় কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় নবম স্থান (বিজ্ঞান বিভাগ) অধিকার করেন। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ১৮তম স্থান অর্জন করেছেন তিনি। পরীক্ষায় নিজের সাফল্যের গল্প নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। তার কথাগুলো শুনেছেন—আমান উল্যাহ আলভী। 


ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আপনার অনুপ্রেরণা কী ছিল?
অনেকগুলো অনুপ্রেরণা কাজ করত তখন। কিন্তু সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিল আমার মা-বাবা। সব সময় তারা আমাকে সাপোর্ট দিয়ে গেছেন, যখন যা প্রয়োজন, তা পূরণ করেছেন, আমি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাই সমর্থন করেছেন, দ্বিমত থাকলেও কখনো কোনো কিছুর জন্য জোর করেননি বা তাদের কোনো মতামত আমার ওপর চাপিয়ে দেননি। 

তাদের একটাই চাওয়া ছিল যেন দিনশেষে ভালো রেজাল্ট করে দেখাতে পারি। আবার কোনো পরীক্ষায় খারাপ করলেও কখনো শাসন করেননি, বরং বুঝিয়ে বলতেন এবং উপদেশ দিতেন পরের বার থেকে যেন ভালো করি। তাদের এই সাপোর্টের জন্যই ভর্তি পরীক্ষার সময় মনে হতো তারা তো আমার জন্য অনেক করেছেন, তাদের জন্য অন্তত একটু কষ্ট করে ভালো জায়গায় চান্স পেতেই পারি, যাতে তারা আমাকে নিয়ে গর্ব করতে পারেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও আমি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এফএসএসএস ইউনিটে ১২২তম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটে ২২তম ও ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় দশম স্থান অর্জন করেছি।

প্রস্তুতিকালীন কীভাবে পড়ালেখা করতেন...
যতটা সম্ভব প্রতিদিন কাজে লাগানোর চেষ্টা করতাম যেন আগের দিনের চেয়ে একটু হলেও এগিয়ে থাকতে পারি। রুটিন ফলো করার চেষ্টা করতাম, আগের দিন রাতে ডায়েরিতে খুব ডিটেইলসে টাস্ক আকারে লিখে রাখতাম, পরের দিন কোন বইয়ের কোন চ্যাপ্টার কতটুকু পড়ব, কোন ক্লাস করব। পরের দিন ওই নির্ধারিত পড়া কমপ্লিট করে নিতাম। কোনো কারণে পড়া শেষ করতে না পারলে রাত জেগে বাড়তি পড়ে নিতাম।

এভাবে আমার দিনের পড়া দিনেই শেষ হয়ে যেত। চেষ্টা করতাম একটা বিষয়ের একটা বই যেন ভালোভাবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো শেষ করতে পারি। এ ছাড়া যতটা সম্ভব মডেল টেস্ট দেওয়ার চেষ্টা করতাম, অন্তত প্রতিদিন অন্তত একটা পরীক্ষা দিতাম-ই।

প্রস্তুতিতে অনেক সময় হতাশা কাজ করে পড়া নিয়ে। এ সময়গুলোয় কীভাবে সামলে উঠতেন?
অ্যাডমিশনের সময়টা সবার জন্যই অনেক কঠিন। আমিও মানসিকভাবে অনেক দুবর্ল ছিলাম তখন। অনেক দুশ্চিন্তা আর ভয় কাজ করত। বারবার মনে হতো আমি পারব তো? এসব হতাশা কাটানোর জন্য সব সময় প্রার্থনা করতাম। নিজের প্রস্তুতি নিয়ে সংকোচবোধ করলে বন্ধু অথবা সিনিয়রদের সঙ্গে কথা বলে মনে হালকা করতাম। সৃষ্টিকর্তার কাছে চাইতাম যত কষ্টই হোক তিনি যেন আমাকে সেই কষ্ট সহ্য করার শক্তি দেন, আমার কঠোর পরিশ্রমটা যেন তিনি বৃথা যেতে না দেন এবং তার যথাযথ ফল আমাকে দান করেন। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তায়ালা আমার দোয়া কবুল করেছেন এবং চাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি দিয়েছেন।

পরীক্ষার হলে কী কৌশল অবলম্বন করে পরীক্ষা দিয়েছেন...
পরীক্ষার হলে মাথা ঠাণ্ডা রাখা আর টাইম ম্যানেজমেন্ট—এই দুটি জিনিস ঠিক রাখার জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। মাথা ঠাণ্ডা রাখার জন্য মেডিটেশন অনেক সাহায্য করেছে। প্রেরণা অবলোকন করতাম আমি পরীক্ষার হলে বসে খুব খোলা মনে পরীক্ষা দিচ্ছি, প্রতিটি প্রশ্ন আমার কাছে সহজ লাগছে এবং আমি সব সঠিক উত্তর করতে পারছি। কোনো টেনশান করছে না। এই মানসিক প্রস্তুতির কারণে পরীক্ষার হলে আমার তেমন ভয় হয়নি। আর সময় পরিকল্পনা ঠিক রাখার জন্য পরীক্ষা দিতাম নিজে নিজে কিংবা কোচিংয়ে। ঘড়ি ধরে কতটুকু টাইম কোন প্রশ্নের পেছনে ব্যয় করব, তা আগে থেকে ঠিক করে নিয়েছিলাম।

কোন বিষয়ে পড়ার ইচ্ছা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
ভবিষ্যতে দেশের যত অপরাধ কিংবা আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড বিদ্যমান তা নিরসনে কাজ করার ইচ্ছা আছে। তাই আইন বিষয়টি নিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আরো পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার অনুপ্রেরণায় অর্থনীতি নিয়ে পড়তে চান ঢাবিতে চান্স পাওয়া মাহজাবিন

ঢাবিতে সুযোগ না হলে পরিকল্পনা কী ছিল...
ঢাবিতে চান্স পাওয়াটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমার কাছে। কারণ আব্বুও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে পড়াশোনা করেছেন। তার অনুপ্রেরণায় বিশ্ববিদ্যালয় বলতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই চিনতাম। বইমেলায় গেলেই টিএসসি ঘুরে বেড়াতাম আব্বুর সঙ্গে। তখন থেকেই ইচ্ছা ছিল এখানেই পড়াশোনা করার। এ ছাড়া বাসা থেকে অনেকটা কাছাকাছি হওয়ায় যাতায়াত সুবিধাও পাওয়া যায়। তাই প্রাণপণ চেষ্টা করেছি ঢাবিতেও যেন হয়ে যায়। তবে পরবর্তী পরিকল্পনা রেখেছিলাম ঢাকার মধ্যে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, যেমন জাহাঙ্গীরনগর, বিউপি, জগন্নাথ। আলহামদুলিল্লাহ, প্রতিটিতেই ভালো পজিশন নিয়ে চান্স নিশ্চিত করতে পেরেছি। এমনও ভেবেছিলাম যদি কোথাও না হয় তাহলে আবার সেকেন্ড টাইম ট্রাই করে দেখব।

পরবর্তী সময়ে যারা পরীক্ষা দেবেন, তাদের জন্য যদি কিছু বলতেন...
জুনিয়রদের উদ্দেশে প্রথমত বলব, ভর্তি পরীক্ষার সময়টা অনেক বাস্তব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। এ কারণে অনেকেই শেষ পর্যন্ত মনোবল ধরে রাখতে পারে না। তাই এই টাইমে অনেক শক্ত থাকতে হবে। মিড লেভেলের প্রস্তুতি নিয়েও অনেকে চান্স পেয়ে যায় কিন্তু হাল ছেড়ে দিলে যেটুকু সম্ভাবনা ছিল তা-ও আর কাজে লাগে না। এ ছাড়া নিজের ক্যারিয়ার ইচ্ছা অনুযায়ী কোন কোন ভার্সিটির কোন কোন বিভাগে পরীক্ষা দেবে, তা আগে থেকে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মানুষের কথায় বা পারিবারিক চাপে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে মাঝপথে এসে বড় একটা হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা আছে।

অনেকেই নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পরিবার থেকে চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তের ভিকটিম হয়ে শেষ পর্যন্ত কোথাও ভর্তি হতে পারে না। আবার একসঙ্গে অনেকগুলো ইউনিটের চাপ নিতে গেলেও স্ট্র্যাটেজি ফলো করে সব ম্যানেজ করা লাগে। এটাও মাথায় রাখতে হবে যে পছন্দের সাবজেক্ট পাওয়ার জন্য সে রকম মেরিট টার্গেট রেখে প্রিপারেশন নিতে হবে। এসব দিকগুলো বিবেচনা করে খুব কেয়ারফুলি প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন।


সর্বশেষ সংবাদ