প্রধান উপদেষ্টার অনুপ্রেরণায় অর্থনীতি নিয়ে পড়তে চান ঢাবিতে চান্স পাওয়া মাহজাবিন

মাইশা মাহজাবিন অর্ণি
মাইশা মাহজাবিন অর্ণি  © টিডিসি সম্পাদিত

গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী মাইশা মাহজাবিন অর্ণি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষায় বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ১১তম স্থান (মানবিক বিভাগ) অধিকার করেন। এ ছাড়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি ’ইউনিটের ভর্তি চতুর্থ স্থান অর্জন করেছেন। পরীক্ষায় নিজের সাফল্যের গল্প নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। তার কথাগুলো শুনেছেন— আমান উল্যাহ আলভী। 


ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আপনার অনুপ্রেরণা কী ছিল?
কলেজের শুরু থেকেই বন্ধুরা আমাকে ঢাবিয়ান ডাকত। তাই নিজের সেই ঢাবিয়ান মান রক্ষা করাটাই আমার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। এ ছাড়া আরও অনেক অনুপ্রেরণা ছিল। কলেজের শিক্ষক, আমার পরিবার, বিশেষ করে আমার আম্মু। তিনি কখনো আমাকে হেরে যেতে দেননি। নিজের যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য সব উপাদান আম্মু জুগিয়েছে। 

এ ছাড়া আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘বি’ ইউনিটে ১৮০তম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ইউনিটে ১৭তম ও সি১ ইউনিটে ২৪তম ও জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডি’ ইউনিটে ১৩৮তম হয়েছি।

প্রস্তুতিকালীন কীভাবে পড়ালেখা করতেন?
আমার পড়ালেখা কখনোই খুব বেশি পরিকল্পিত ছিল না। মাসের কিছু সময় খুব পড়তাম, আবার কিছু সময় দিনের পর দিন চলে যেত, বই ধরতাম না। পড়ার জন্য কোনো সময় বেঁধে দেওয়া ছিল না। যতক্ষণ জেগে থাকতাম, ততক্ষণ পড়তাম। যতক্ষণ না কোনো টপিক শেষ হতো, ততক্ষণ খাওয়া-ঘুমও পিছিয়ে যেত। টপিক ধরে ধরে পড়তাম। সব টপিকই যেন আমার অল্প বিস্তর জানা থাকে এই চেষ্টা করেছি।

যেসব বিষয়ে আমি এমনিতেই ভালো, সেগুলোয় সর্বোচ্চ নম্বর তোলার জন্য পড়েছি। আর যেগুলোয় দুর্বল, সেগুলোয় ন্যূনতম একটা ভালো নম্বর রাখার জন্য পড়েছি। কোনো টপিকই বাদ দেইনি। যতটুকু মনে হয়েছে, আমি পড়তে পারব। এর চেয়ে বেশি পড়া এক দিনের জন্য ঠিক করেছি। এতে পুরোটুকু পড়া না হলেও বেশ অনেকটাই পড়া এগিয়ে যেত। এ সময়ে নানা গাইড বইয়ের চেয়ে বেশি কাজে লাগে টেক্সট বই। তাই টেক্সট বইকেই গুরুত্ব দিয়েছি সবচেয়ে বেশি।

প্রস্তুতিতে অনেক সময় হতাশা কাজ করে পড়া নিয়ে। এ সময়গুলোয় কীভাবে সামলে উঠতেন?

নিজের ওপর আত্মবিশ্বাসটা আমার সব সময়ই প্রবল। তবে হতাশ যে হইনি, তা নয়। মনে হতো এত পড়া আমার একার পক্ষে পড়ে শেষ করা কখনোই সম্ভব নয়। তবে আবার ভাবতাম, এত দূর এসে এখন ছেড়ে দিলে ফল শূন্যে দাঁড়াবে। আমার সব সম্ভাবনা বৃথা যাবে। তাই চালিয়ে যেতাম। ভাবতাম নিজেকে নিজের সেরা হতে হবে। প্রতিযোগিতাটা ছিল নিজের সঙ্গে। নিজেকে আউটশাইন করার জন্যই পড়তাম।

পরীক্ষার হলে কীভাবে কৌশল অবলম্বন করে পরীক্ষা দিয়েছেন...
পরীক্ষার সময় মাথা ঠান্ডা রাখতাম। কখনোই এটা ভাবতাম না যে আমার এখানে চান্স পেতেই হবে। ভাবতাম হলে ভালো, না হলেও আমার জ্ঞান আমারই থাকবে। তাতে কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন থাকুক বা না থাকুক। এই গা ছাড়া ভাবের কারণেই খুব ভেবে, চিন্তা করে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতাম। এমনও হয়েছে পরীক্ষার হলে একটা ম্যাথের নিয়ম মনে নেই, তখন হলে বসেই ভেবে ভেবে অন্য নিয়ম দিয়ে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতাম। কারণ আমি ভর্তি প্রস্তুতির সময়ে ম্যাথ পড়িনি। সেই নবম-দশম শ্রেণিতে যা পড়েছি, তা মনে করে করে উত্তর করেছি। মাথা ঠান্ডা রাখার ফলেই অত আগের পড়া মনে করতে পেরেছি।

আরো পড়ুন: ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হলেও সেনাবাহিনীতে যেতে চান তাহমিদ

আমার ইচ্ছা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে পড়ার এবং ভবিষ্যতেও অর্থনীতি নিয়েই উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করার। যেহেতু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া অন্য সব স্বাধীনতা অর্থহীন, তাই অর্থনীতিটা ভালোভাবে বুঝে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার স্বপ্ন বুনছি। এ ক্ষেত্রে আমার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে আমাদের দেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

পরবর্তী সময়ে যারা পরীক্ষা দেবেন, তাদের জন্য যদি কিছু বলতেন...
জুনিয়রদের উদেদ্দশে বলতে চাই, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো। এডমিশন টাইমে ভয় দেখানোর মানুষের অভাব নেই। তবে বিষয়টা আসলে অতটাও কঠিন নয়, যদি তুমি তোমার পড়ার প্রতি অনেস্ট থাক, নিজের বেস্টটা দাও। লেগে থাকলে সাফল্য আসবেই। এ জন্য ভয় না পেয়ে নিজের সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলেই তোমার ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত।


সর্বশেষ সংবাদ