নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইউজিসি কর্মকর্তাদের ঋণ দেওয়ার ঘটনা তদন্তে কমিটি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৯ PM , আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৪ PM

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই কর্মকর্তাদের বাড়ি নির্মাণে প্রায় দেড় কোটি টাকা অতিরিক্ত ঋণ দেওয়ার ঘটনা তদন্তে ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
গত ৯ এপ্রিল গঠিত হওয়া এ কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে কমিশনের অর্থ, হিসাব ও বাজেট বিভাগের সদস্য প্রফেসর মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানকে।
কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন কমিশনের অর্থ, হিসাব ও বাজেট বিভাগের পরিচালক মোঃ রেজাউল করিম হাওলাদার এবং প্রশাসন বিভাগের উপ-সচিব মোঃ আসাদুজ্জামান। কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন ইউজিসির অডিট বিভাগের সহকারী পরিচালক শরীফুল ইসলাম।
ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি গঠনের বিজ্ঞপ্তিতে ইউজিসি জানিয়েছে, ‘কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস. এম. এ. ফায়েজ এর সভাপতিত্বে গত ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত বিশেষ সভার কার্যবিবরণীর আলোচ্যসূচি-১১ এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনুকূলে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি 'Facts Finding Committee' গঠন করা হলো’।
জানা গেছে, ইউজিসির কর্পোরেট সাধারণ গৃহ নির্মাণ ঋণ নীতিমালা অনুযায়ী ৫ম গ্রেড ও তদূর্ধ্ব কর্মচারীদের জন্য ৭৫ লাখ টাকা, ৯ম গ্রেড হতে ৬ষ্ঠ গ্রেড ৬৫ লাখ, ১৩তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেড ৫৫ লাখ, ১৭তম গ্রেড হতে ১৪ ম গ্রেড ৪০ লাখ এবং ২০তম গ্রেড হতে ১৮তম গ্রেড পর্যন্ত ৩৫ লাখ টাকা সর্বোচ্চ সিলিং নির্ধারণ করা হয়। এ পরিমাণ অর্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাকরি জীবনের শেষ দিকে পেয়ে থাকেন।
তথ্যমতে, কমিশনের সাবেক সহকারী সচিব (৯ম গ্রেড) মোহা. মামুনুর রশিদ খান বাড়ি নির্মাণের জন্য সর্বোচ্চ ঋণ সীমা ১৩ লাখ ২১ হাজার ৩৮৭ টাকা। তিনি অতিরিক্ত ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৫২ টাকাসহ সব মিলিয়ে ঋণ নিয়েছেন ৬১ লাখ ৬৫ হাজার ৪১৩ টাকা। বর্তমানে এ কর্মকর্তা ইউজিসি চেয়ারম্যানের এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর এ কর্মকর্তা নতুন করে চার লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। যদিও এ ঋণের আবেদন একাধিকবার রিজেক্ট করা হয়েছিল।
গৃহ নির্মাণের জন্য সবচেয়ে বেশি অতিরিক্ত নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের সাবেক যুগ্ম সচিব জাফর আহম্মদ জাহাঙ্গীর। বর্তমানে কমিশনের জেনারেল সার্ভিসেস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা এ কর্মকর্তার ‘ইউজিসি সিএইচবিএল প্রাপ্তির সর্বোচ্চ সীমা’ ২৭ লাখ ৮১ হাজার ৭২২ টাকা। অর্থাৎ ঋণ গ্রহণের সময় চাকরির বয়স অনুযায়ী তার পেনশন ও অন্যান্য আনুতোষিক মিলিয়ে ২৭ লাখ টাকা পান। তবে এ কর্মকর্তাকে প্রাপ্যতার অতিরিক্ত ৪৫ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। তার মোট ঋণের পরিমাণ ৬৭ লাখ টাকা।
ইউজিসির সাবেক সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো: আকরাম আলী খান গৃহ নির্মাণ ঋণ নেওয়ার সময় ৬ষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা ছিলেন। কমিশনের স্ট্র্যাটেজিক প্লানিং অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা এ কর্মকর্তার ইউজিসি সিএইচবিএল অনুযায়ী লোন প্রাপ্তির সর্বোচ্চ সীমা ২৩ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৭ টাকা। তিনি সব মিলিয়ে ঋণ নিয়েছেন ৫৫ লাখ ২২ হাজার ৯৪৯ টাকা। প্রাপ্যতার সর্বোচ্চ সীমার বাহিরে তিনি অতিরিক্ত ১০ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৫ টাকা ঋণ নিয়েছেন।
এছাড়া ১৮তম গ্রেডে চাকরি করা অফিস সহায়ক মির্জা হামিদুল ইসলাম, মো: আমিনুল ইসলাম, মো: আবুল হোসেন, মো: নুরুল ইসলাম জীবন, ইউজিসির সিএইচবিএল এর সর্বোচ্চ সীমার অতিরিক্ত হিসেবে যথাক্রমে ১৪ লাখ ৬৯ হাজার ৩০১ টাকা, ৮ লাখ ৩১ হাজার ৫৬১, ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৬৮৭, ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা অতিরিক্ত ঋণ হিসেবে নিয়েছেন।
অন্যদিকে ১৬তম গ্রেডের কম্পিউটার অপারেটর মো: আব্দুস সালাম ১১ লাখ ৩৩ হাজার ২১৩ টাকা, ১৮তম গ্রেডের মেশিন অপারেটর মো: শহিদুল ইসলাম ৬ লাখ ৬২ হাজার ১৩১, একই গ্রেডের বার্তা বাহক মাসুদ রানা ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৯৪, অফিস সহায়ক মো: আবুল বাশার ৩ লাখ ২৮ হাজার ৬৫ এবং নিরাপত্তা প্রহরী মো: নুর নবী ইউজিসি সিএইচবিএল এর সর্বোচ্চ সীমার অতিরিক্ত ৬ লাখ ৯ হাজার ৬৯৮ টাকা ঋণ।
প্রসঙ্গত, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ নীতিমালায় ঋণের সিকিউরিটি হিসেবে জমি বা ফ্ল্যাট সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে বন্ধক হিসেবে রাখতে হয়। তবে কমিশনের ত্রুটিপূর্ণ কর্পোরেট সাধারণ গৃহনির্মাণ ঋণের বিপরীতে সিকিউরিটি হিসেবে শুধু কর্মচারীর পেনশন আনুতোষিক বন্দক হিসেবে রাখা হয়। নীতিমালায় সিলিং যাই থাকুক না কেন, একজন কর্মচারী ঋণ দেওয়ার সময় তার চাকরির বয়স অনুযায়ী প্রাপ্য পেনশন ও আনুতোষিকের চেয়ে বেশি ঋণ দেওয়ার সুযোগ নেই। ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয়নি।