‘ঢাবি তোর জন্য রেখে এসেছি’— বোনের সেই আক্ষেপকে সাফল্যে রূপ দিলেন ভর্তি পরীক্ষায় সেরা হয়ে

নেত্রকোনা সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী মো. মুনতাসিম বিল্লাহ সোহাগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষায় কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ১৬তম স্থান (মানবিক বিভাগ) অধিকার করেন। পরীক্ষায় নিজের সাফল্যের গল্প নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। তার কথাগুলো শুনেছেন—আমান উল্যাহ আলভী।
ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আপনার অনুপ্রেরণা কী ছিল?
আসলে সবারই নিজস্ব একটা স্বপ্ন থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আমার সব থেকে বড় অনুপ্রেরণা ছিল আমার মা-বাবা। আমার বাবা একজন কৃষক। আমাদের চার ভাই বোনকে পড়াশোনা করানো তার জন্য কষ্টকর ছিল। তাও আব্বু আমাদের যা জমি-জমা ছিল ওইগুলো বিক্রি করে আমাদের পড়াশোনা করিয়েছেন। যে কারণে আমার মা-বাবার কষ্টকে বিফলে যেতে দিতে চাইনি। ভাবতাম মা-বাবার কষ্টের প্রতিদান দিতেই হবে। এ অনুপ্রেরণাই আমাকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।
আমি এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৪৭তম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বি’ ইউনিটে ২২তম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ‘সি’ ইউনিটে ৩৪তম হয়েছি।
প্রস্তুতিকালীন কীভাবে পড়ালেখা করতেন?
ভর্তি প্রস্তুতির সময় আমি আমার প্রতিদিনের পড়া আগে সাজাতাম। তারপর সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী পড়াশোনা করতাম। আমি এত বেশি পড়তাম না। কিন্তু প্রতিদিন পড়াশোনা করতাম। প্রচুর প্রশ্ন সমাধান করেছি এবং যেগুলো সমস্যা মনে হতো সেগুলো দাগিয়ে রাখতাম। সেগুলো বারবার রিভিশন দিতাম।
প্রস্তুতিতে অনেক সময় হতাশা কাজ করে পড়া নিয়ে। এ সময়গুলোয় কীভাবে সামলে উঠতেন?
আসলে এডমিশন টাইমে প্রত্যেক স্টুডেন্টের মধ্যেই পড়াশোনা নিয়ে হতাশা কাজ করে। যারা এ হতাশাকে কাটিয়ে উঠতে পারে তারাই সফল হয়। আমার হতাশার সময়ে আমি বেশি বেশি আমার স্বপ্নকে স্মরণ করতাম। এছাড়াও নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতাম। আম্মুকে কল দিয়ে বারবার দোয়া চাইতাম এবং নিজের ভেতরে একটা জেদ তৈরি করতাম যে আমাকে পড়তেই হবে। তারপর আবার বই নিয়ে বসে টেবিলে পড়তাম।
আরো পড়ুন: ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হলেও সেনাবাহিনীতে যেতে চান তাহমিদ
পরীক্ষার হলে কী কৌশল অবলম্বন করে পরীক্ষা দিয়েছেন, যেটা আপনাকে সাফল্য দিয়েছে?
পরীক্ষার হলে যারা টেনশনমুক্ত থাকে তারা ভালো করতে পারে। তাই আমি টেনশনমুক্ত থাকার চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি প্রশ্নের উত্তর করতে এমসিকিউয়ের জন্য ৪৫ মিনিট এবং রিটেন এর জন্য ৪৫ মিনিট বরাদ্দ ছিল। তো ৪৫ মিনিটে রিটেন লিখে শেষ করা একটু কঠিন। যে কারণে আমি এমসিকিউ ৩০ মিনিটে শেষ করে এর বাকি ১৫ মিনিট রিটেনে ইনভেস্ট করতে পেরেছি এবং পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ভালোভাবেই রিটেন কমপ্লিট করেছি। যে কারণে আমার আমি রিটেনে একটা ভালো নাম্বার পেয়েছি।
কোন বিষয়ে পড়ার ইচ্ছা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আমার আগে থেকেই ইচ্ছে ছিল আইন নিয়ে পড়ার। এখন আমার পরীক্ষার রেজাল্টের পর সেই সুযোগ তৈরি হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমাকে উদ্বিগ্ন করে। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করার আকাঙ্ক্ষা অনেক আগে থেকেই। এখন যথার্থ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে দেশেকে সুশৃঙ্খল করতে পারলে এবং একটি শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়তে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করব।
ঢাবিতে সুযোগ না হলে পরিকল্পনা কী ছিল?
আমার মূল টার্গেটই ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া। আমরা চার ভাই বোন। বড় ভাই একটি প্রাইভেট কম্পানিতে চাকরি করে পরিবারের হাল ধরেছেন। মেঝো ভাই ও বোন শাবিপ্রবিতে পড়াশোনা করেছে। তো আমার বোন যখন ঢাবিতে চান্স পায়নি তখন সে আমাকে বললো, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তোর জন্য রেখে এসেছি’। যে কারণে আমি কখনই চিন্তা করিনি যে আমি ঢাবিতে চান্স না পেলে কী করব? বরং আমি সবসময়ই আল্লাহর উপর ভরসা রাখতাম এবং আমার পরিশ্রমের প্রতি আশাবাদী ছিলাম।
পরবর্তী সময়ে যারা পরীক্ষা দেবেন, তাদের জন্য আপনার কি পরামর্শ থাকবে?
যারা ভবিষ্যতে ভর্তি পরীক্ষা দিবে তাদের কাছে পরামর্শ থাকবে যেন তারা প্রতিদিন পড়াশোনা করে। আর ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের একটি বড় অংশ টেক্সট বুক থেকে করা হয়। তাই তারা যেন একাডেমিক টেক্সট বুক গুলো ভালোভাবে কমপ্লিট করে এবং বারবার রিভিশন দেয়। সবশেষ আল্লাহর উপর ভরসা করে যেন নিজের প্রস্ততিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।