নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষা বিতর্ক: রাবি আইসিটি সেন্টারের স্পষ্টীকরণ

অধ্যাপক ড. মো. ছাইফুল ইসলাম
অধ্যাপক ড. মো. ছাইফুল ইসলাম  © টিডিসি সম্পাদিত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডহকে নিয়োগ নিয়ে বেশ সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব ও আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ছাইফুল ইসলাম। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন ভর্তি পরীক্ষার বিষয়েও সমালোচিত হয়েছেন অধ্যাপক ছাইফুল ইসলাম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো আলোচনা-সমালোচনার পাত্র হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যক্তিবর্গ। কয়েকটি গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন অধ্যাপক মো. ছাইফুল ইসলাম। তার কথাগুলো শুনেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি মারুফ হোসেন মিশন। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্যার কেমন আছেন? প্রায় পাঁচ মাস হলো আইসিটি সেন্টারের পরিচালকের মতো একটা গুরুদায়িত্ব পালন করছেন, কেমন বোধ করছেন?

অধ্যাপক ড. মো. ছাইফুল ইসলাম: আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। অনুভূতি বলতে পারো, ভালো মন্দ উভয়ই। ভালো অনুভূতি বলতে যেমন: এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা সেক্টর রাবি হায়ার অথরিটি যার জন্য আমাকে যোগ্য মনে করেছেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাকে সম্ভাব্য সব রকমের সহযোগিতা করছেন। আমিও কোনো ধরনের চাপ ছাড়াই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছি, আমার দিক থেকে প্রায় সব কাজই ঠিকঠাক মতো করতে পেরেছি বা পাচ্ছি এই আরকি। আর খারাপ অনুভূতি বলতে কিছু বিষয়ে অহেতুক আইসিটিকে দায়ী করা হচ্ছে যার জন্য মোটেই আইসিটি বিন্দুমাত্র দায়ী না অথবা আইসিটির পরিচালক হিসেবে আমি পরিস্থিতির শিকার।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কী ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন বা হচ্ছেন? 

অধ্যাপক ড. মো. ছাইফুল ইসলাম: আইসিটি সেন্টারের তত্ত্বাবধানে অনলাইন ভর্তি আবেদন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বিষয়টি খুবই জটিল এবং সেন্সিটিভ। বিশেষ করে হঠাৎ যোগদান করেই এর মুখোমুখি হওয়া, তাও আবার প্রথমবারের মতো রাবি ভর্তি পরীক্ষা রাজশাহীর বাইরে দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে সিদ্ধান্ত নেওয়া।

একটা বিষয় বলে রাখি, আমি জয়েন করার বেশ কিছুদিন আগেই ভর্তি আবেদন এবং পরীক্ষার স্থান, কাল, পদ্ধতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছিল যা ছিল বেশ প্রবলেমেটিক। কিন্তু ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমার কিছু করার ছিল না। ফলে আমাকে সে অনুযায়ী কাজ করে যেতে হয়েছিল। এছাড়া আরও বিষয় তো ছিলই।

আলহামদুলিল্লাহ, সব বিষয়ই সামলে নিয়েছিলাম। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে কিছু বিষয় সামনে চলে আসায় ভিন্ন পরিস্থিতি মুকাবিলা করতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো প্রোপাগান্ডা। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রোপাগান্ডা বলতে কোন বিষয়ের কথা বলছেন?

অধ্যাপক ড. মো. ছাইফুল ইসলাম: এর দুটি অংশ। এক, সাম্প্রতিক সিটপ্ল্যান ইস্যু। আরেকটি সময় মতো অ্যাডমিট কার্ড ইস্যু করতে না পারা। দুই, অ্যাডহকে নিয়োগ বিষয়ে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সিট প্ল্যান জটিলতা ও প্রবেশপত্র ইস্যু করতে বিলম্ব নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে নতুন পরিচালকের যোগ্যতা নিয়ে। কীভাবে এটা ব্যাখ্যা দিবেন?

অধ্যাপক ড. মো. ছাইফুল ইসলাম: আইসিটি এক্ষেত্রে অন্যায় ও অন্যায্য আক্রমণের শিকার। সিটপ্ল্যান নিয়ে যে হইচইটা হলো সোশ্যাল মিডিয়ায় তার জন্য ১ শতাংশও আইসিটির পরিচালক বা আইসিটি সেন্টার দায়ী না। এ ব্যাপারে আমার ফেসবুক পোস্টেই ব্যাখ্যা দিয়েছি। সমস্যাটা ছিল ভর্তি কমিটির আগে থেকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোতে এবং সে মিটিংটি হয়েছিল আমার (আইসিটি সেন্টারে) যোগদান করার আগে। 

আর আমাকে জাস্ট সেই সিদ্ধান্তগুলোই বাস্তবায়ন করতে হয়েছে। পরে যখন সিটপ্ল্যান নিয়ে হইচই শুরু হয় তখন ভর্তি উপকমিটি আবারও সবার মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করল এবং আমিও সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক নতুন করে সিটপ্ল্যান করে দিলাম। এইবার আর কোনো টুঁ শব্দটি হলো না। তাহলে এটা কি আমার দায় ছিল?

তারপর আসা যাক- প্রাথমিক প্রবেশপত্র ইস্যু করতে দুইদিন বিলম্বিত হওয়ার বিষয়টায়। এখানেও আইসিটির কোনো দোষ নেই বা আইসিটি সেন্টারের নিজস্ব গাফিলতি বা অযোগ্যতার কারণেও হয়নি। ভর্তি পরীক্ষার সকল জোনের সকল কেন্দ্রের সিটপ্ল্যানসংক্রান্ত সকল তথ্য উপাত্ত নিয়ে আইসিটি সেন্টারকে কাজ করতে হয়। এমনিতেই পোষ্য কোটা ইস্যুতে একমাস সময় নষ্ট হয়েছিল আগেই। তারপরও এই ডেটাগুলো প্রবেশপত্র ইস্যুর একমাস আগেই আমার পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো থেকে বারবার চেষ্টার পরেও ডেটা পেতে বিলম্বিত হচ্ছিল এবং শেষে যখন হাতে পেলাম তখন আর মাত্র একদিন হাতে আছে প্রবেশপত্র ইস্যু করার জন্য। এখন প্রায় আড়াই লক্ষ ক্যান্ডিডেটের তিন তিনটা আলাদা ইউনিটের সিটপ্ল্যান করতেই কমপক্ষে সাত দিন সময় লেগে যায়। ফলে আমরা অনেক চেষ্টা করেও দুইদিন পরে গিয়ে প্রবেশপত্র ইস্যু করতে সমর্থ হই। আমরা যে সিট প্ল্যান নিয়ে আগেই কিছু অ্যানালাইসিস করব অ্যাডমিট কার্ড ইস্যুর আগে সে সময়টাও পাচ্ছিলাম না সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ফলে।

ুািুাি

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আইসিটি সেন্টার তো আগেও অনলাইন ভর্তি আবেদন কার্যক্রম পরিচালনা করে এসেছে, তখন তো অ্যাডহক লাগেনি। এই কাজ করতে কি নিজস্ব জনবল ছিল না আইসিটিতে? বা অ্যাডহকের পরিবর্তে অন্য কোনোভাবে কি এটা করা যেত না?

অধ্যাপক ড. মো. ছাইফুল ইসলাম: আইসিটি সেন্টারে নিজস্ব জনবল বলতে দুই জন প্রোগ্রামার আছে। যদিও আরও দুইজনের পদ ফাঁকা হয়ে আছে। কিন্তু যে দুইজন আগে থেকেই আছে তারা কখনো এই অনলাইন সফটওয়্যার-এর ডেভলপমেন্ট, সার্ভিস ও মেইনটেনেন্সের সাথে যুক্ত ছিল না বা ইচ্ছে করেই তাদের যুক্ত করা হয়নি। ফলে তাদের থাকা বা না থাকার মধ্যে মূলত কোনো পার্থক্য নেই।  

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: তাহলে কীভাবে করা হতো এই কাজ? কেন সেই প্রোগ্রামারদের ট্রেইনড আপ করা হয়নি? 

অধ্যাপক ড. মো. ছাইফুল ইসলাম: আমি সেটাই বলছি। অনলাইন ভর্তি অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য সাবেক পরিচালক প্রতি বছর ভিসি মহোদয়কে দিয়ে তার নেতৃত্বে একটা করে টেকনিক্যাল কমিটি অ্যাপ্রুভ করে নিতেন। যার মেম্বার ছিল পরিচালকের নিজ বিভাগের নির্দিষ্ট কিছু জুনিয়র শিক্ষক। তিনি (সাবেক পরিচালক) এই পদে দশ বছর আগে থেকে ছিলেন। মাঝখানে অন্য একজন কিছুদিনের জন্য থাকলেও মূলত পিছন থেকে তার পৃষ্টপোষকতায় আইসিটি সেন্টারের আইটি সেক্টর বিশেষ করে অনলাইন ভর্তি আবেদন কার্যক্রম পরিচালিত হত। 

মজার ব্যাপার হলো তিনি প্রতি বছরই একই ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি করতেন। অন্য কোনো শিক্ষক তো দূরে থাক এমনকি আইসিটি সেন্টারের বিদ্যমান তিনজন (একজন ইতোমধ্যে অবসরে গেছেন, অন্যজন কিছুদিন পর অবসরে যাবেন) প্রোগ্রামারের কাউকে কখনো সেই কাজে বা কমিটিতে যুক্ত করতেন না। ফলে কথিত সেই কমিটির বাইরে কোনো বিকল্প তৈরিই হয়নি। এই কমিটিকে আমাদের ডিপার্টমেন্টের অনেকেই সাবেক পরিচালকের পকেট কমিটি নামে অভিহিত করে থাকে। 

নতুন ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু পর সাবেক পরিচালক এক মাসের ছুটিতে জাপানে যেতে চাইলে রাবি প্রশাসন তড়িঘড়ি করে আমাকে নিয়োগ দেয়। বলে রাখা ভালো যে, নতুন পরিচালক ইতোমধ্যেই অনলাইন ভর্তি অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেমের রি-ডেভলপমেন্ট, মেইনটিনেন্স ও সার্ভিস প্রোভাইডের জন্য নতুন প্রশাসনকে দিয়ে তার কথিত টেকনিক্যাল কমিটি অ্যাপ্রুভ করে নিয়েছিলেন।

আমি প্রথমেই উক্ত কমিটি দিয়েই কাজ অব্যাহত রাখতে চেয়েছিলাম। প্রথমে তারাও রাজি হলো। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে হঠাৎ করেই তারা বেঁকে বসল। বলল এই প্রশাসনের অধীনে তারা কাজ করতে ইচ্ছুক নয়। আমি বললাম এই কাজে তোমাদের কোনো বিকল্প তৈরি করা হয়নি। কমিটি গঠনের পর হঠাৎ করে অসহযোগিতা করে বিশ্ববিদ্যালয়কে বিপদে ফেলা ঠিক নয়। 

আমি নিজে চেষ্টা করে যখন ব্যর্থ হলাম তখন আমাদের ডিপার্টমেন্টের অন্য শিক্ষকদের দিয়ে চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোনো কাজ হলো না। 

আমি তাদের নিয়ে জোরাজুরি করছি দেখে ভিসি মহোদয়কে জাপান থেকে সাবেক পরিচালক ফোনকলে জানালেন তাদের নিয়ে যেন বর্তমান প্রশাসন টানাটানি না করে। ভিসি মহোদয় আমাকে নির্দেশ দিলেন তাদের পরিবর্তে আমি যেন অন্য কোনো উপায়ে কাজ সমাধান করি। আমি তখন মহাবিপাকে, হাবুডুবু খাওয়ার মতো দশা। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঢাকার ‘কথিত’ আলফাসফট নামের কোম্পানির সাথে তখনই কি আপনার চুক্তি হয়?

অধ্যাপক ড. মো. ছাইফুল ইসলাম: না। কোনো চুক্তি বা অফিসিয়াল কিছু হয়নি। আমি পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রথমেই খোঁজ করি কোনো সফটওয়্যার কোম্পানির যারা তাৎক্ষণিক সাপোর্ট দিতে পারবে। তারই সূত্র ধরে ঢাকার আলফাসফট টেকনোলজির সাথে আমার অনানুষ্ঠানিক কথা হয়, যেহেতু হাতে একদমই সময় ছিল না। কিন্তু নিয়মিত চুক্তি না থাকায় তারাও শিডিউল মেনে কাজ করতে ব্যর্থ হচ্ছিল। ফলে আর উপায়ন্তর না দেখে আমি তাৎক্ষণিকভাবে রাবি প্রশাসনের কাছে অ্যাডহকে দুইজন দক্ষ সহকারী প্রোগ্রামার নিয়োগের সুপারিশ করি। যেহেতু বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রেগুলার প্রসেসে নিয়োগ প্রক্রিয়া একটা দীর্ঘ এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই এ প্রক্রিয়ায় এ সমস্যার সমাধান ছিল না। যাহোক, এটাই ছিল অ্যাডহকে নিয়োগের পটভূমি। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রশ্ন উঠেছে যে সহকারী প্রোগ্রামার পদের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতার নিচে অর্থাৎ সাবেক পরিচালকের ভাষায় এইচএসসি পাশ ক্যান্ডিডেটদের নেওয়া হয়েছে, এমনটা হওয়ার কারণ কী? 

অধ্যাপক ড. মো. ছাইফুল ইসলাম: দুইজনের মধ্যে একজন মোমেন খন্দকার অপি, আমার এবং সাবেক পরিচালক দুইজনেরই ছাত্র। সে কেমন দক্ষ প্রোগ্রামার তার অজানা নয়। অপি অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে অ্যাপ্লাই করেছিল। যেটা আমাদের এই সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তাকে এইচএসসি পাস বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা খুবই দুঃখজনক। 

তিনি কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষক হিসেবে খুব ভালো করেই জানেন যে, যে দুজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, এই সেক্টরে তাদের মতো দক্ষ প্রোগ্রামার সব যোগ্যতা মেনে এমন ক্ষুদ্র বেতনে চাহিবামাত্র পাওয়া প্রায় অসম্ভব। থেরাপের মতো একটা স্বনামধন্য বিশ্বমানের সফটওয়্যার কোম্পানি তাকে ডাকাডাকি করছিল। 

আরেকজন যার নাম শরিফুল ইসলাম এবং তার পৈত্রিক বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে কাটাখালী এলাকায়। তার মাধ্যমে মূলত আমি বিভিন্ন সফটওয়্যার ফার্মের সাথে যোগাযোগ করছিলাম, যার কথা আগেই বলেছি।

অপির ব্যাপারে জানতাম যে তার রেজাল্ট তখনও প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু শরিফুলের ব্যাপারে আমি ভাবতেও পারিনি যে তারও একই ধরনের সমস্যা আছে। পরে যেটা বুঝলাম শরিফুলও প্রথমে বুঝতে পারেনি যে, সরকারি প্রতিষ্ঠানে দক্ষতা না হলেও চলে। কিন্তু সার্টিফিকেটের কমতি এখানে সব ওলট-পালট করে দিতে পারে। 

আসলে আমাদের সে সময় ছিল 'ত্রাহি মধুসূদন' অবস্থা। ইন্ডাস্ট্রিয়াল এক্সপেরিয়েন্স সম্পন্ন একাধিক দক্ষ প্রোগ্রামারই শুধু পারে বিশ্ববিদ্যালয়কে এমন বিপদ থেকে উত্তরণের এবং শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়েছিল। অর্থাৎ আমরা এই নতুন টিম নিয়ে বেশ ভালোভাবেই সামলে নিচ্ছিলাম।।

শরিফুল ও অপি নিয়োগের পরের দিনই কাজে নেমে পরেছিল। কিন্তু দুজনেই যখন বেতনের জন্য সার্ভিস বুক ওপেন করতে আবেদন করেছিল তখন তাদের কাছে সহকারী প্রোগ্রামার পদে বেতনের জন্য প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট চাওয়া হয়। তখন তারা সঙ্গতকারণেই সার্টিফিকেট আনতে পারেনি। ফলে অপিকে রেজাল্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। আর শরিফুল আমার দিকে তাকিয়ে এখন পর্যন্ত বিনাবেতন ভাতায় সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ শরিফুলের নিয়োগ মূলত এখনো কার্যকরই হয়নি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: তাহলে মিডিয়ায় তাদের নিয়ে এত বিতর্ক কেন এবং এই বিতর্কের ফলে তাদের অবস্থান ও মনোভাব কী? 

অধ্যাপক ড. মো. ছাইফুল ইসলাম: আসলে এটা নিয়ে এমন নেগেটিভ প্রচারণা ও বিতর্ক হতে পারে আমরা কেউ কল্পনাও করিনি। তাদের তো আসলে দোষ নেই। তারা বরং অনেক লোভনীয় অফার ছেড়ে এখানে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে একান্তই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে। আমাদের উচিত ছিল তাদের সাধুবাদ দেয়া। কিন্তু তা না দিয়ে তাদের উল্টো হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। 

সাবেক পরিচালক দশ বছরেও একজন দক্ষ ও যোগ্য প্রোগ্রামার নিয়োগ দিয়ে যেতে পারেননি যারা অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেম নিয়ে কাজ করতে পারে। যারা আগে থেকেই ছিল বা আছে তাদেরও ট্রেইন্ড হওয়ার সুযোগ দেননি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় এরপরও যে ভালোভাবে চালিয়ে নিতে পারছে তাকে ছাড়া এটা আবার অনেকেরই সহ্য হচ্ছে না। 

অপির বেতন হলেও এমন নোংরামিতে সে আপসেট। আর শরিফুল হয়তো আর চাকরিই করবে না এখানে। তাদের মতো দক্ষ প্রোগ্রামারদের এই ক্ষুদ্র বেতনে চাকরি না-করলেও চলে। তারা অফটাইমে যেকোনো জায়গায় বসে আউটসোর্সিং করেও এর চেয়ে অনেক বেশি ইনকাম করতে পারে। কিন্তু এসব অহেতুক প্রোপাগান্ডায় তারা চলে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় ঠিকই সাময়িকভাবে হলেও বিপাকে পড়বে। কুচক্রী মহলের সেটাই কাম্য।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শুরুর দিকের অংশগ্রহণকারী শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। আপনাদের কাছে তাই জাতির প্রত্যাশাও অনেক। এদিক বিবেচনা করলে যে-সব বিষয়ে বিতর্ক বা প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে সেসব ব্যাপারে কি আরও খানিকটা স্বচ্ছতা বা দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা যেত না এবং ভবিষ্যতে এসব বিষয়ে  ছাত্রসমাজ আরও স্বচ্ছতা আশা করতে পারে কি?

অধ্যাপক ড. মো. ছাইফুল ইসলাম: অবশ্যই। আসলে আমরা সবাই তো নতুন। যোগদান করেই এমন একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হব ভাবিনি। আইসিটির নিজস্ব জনবল অর্থাৎ দুইজন প্রোগ্রামার থেকেও যেহেতু কোনো লাভ হচ্ছিল না, তাৎক্ষণিকভাবে কাজ তোলার জন্য তখন দক্ষ প্রোগ্রামারের কথাই শুধু আমাদের মাথায় ছিল। ফলে এ ধরনের বিচ্যুতি ঘটে গেছে। 

আর প্রায় সাড়ে তিন মাস পর এসে এটা নিয়ে যে এমন বিতর্ক উঠবে এটা তখন কেউ কল্পনাও করিনি। অবশ্য মাথায় আসলেও এত অল্প সময়ে এর বিকল্প তেমন কিছু করা যেত বলে মনে হয় না। কারণ সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ফিল্ডটাই এমন। অর্থাৎ দক্ষতাসহ প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সম্পন্ন জনবল হঠাৎ করে এভাবে ম্যানেজ করা প্রায় অসম্ভবই হতো। 

আর যে বিচ্যুতিটা ঘটেছে সেটা এমন নয় যে সংশোধনের অযোগ্য। একজনের নিয়োগ তো এখনো কার্যকরই হয়নি, তাই ওটা নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে। ছয় মাস পর রিনিউ না করলে বিষয়টা এমনিতেই শেষ হয়ে যাবে। আর অপির ব্যাপারে প্রশাসন যদি মনে করে তার নিয়োগ জয়েনের দিন থেকে কার্যকর না করে যেদিন তার রেজাল্ট প্রকাশিত হয়েছে তারপর দিন থেকে কার্যকর করবে তাহলে সব বিতর্কের অবসান হবে বলে মনে করি। 

আমি আগেও বলেছি এখনো বলি এটা একান্তই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে খুব তাড়াহুড়ো করেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এখানে স্বজনপ্রীতি, দলীয় অথবা ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থে এটা করা হয়নি। আমি চ্যালেঞ্জ করেছিলাম, কেউ প্রমাণও করতে পারেনি, পারবেও না। তবে ভবিষ্যতে যাতে এমন না হয় সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা নিশ্চিত করা হবে, ইনশাল্লাহ।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

অধ্যাপক ড. মো. ছাইফুল ইসলাম: আপনাকেও ধন্যবাদ। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্য শুভকামনা।


সর্বশেষ সংবাদ