ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা অনুযায়ী গবেষণা করবে ইউআইইউ’র আইবিইআর

ড. মো. কামরুজ্জামান
ড. মো. কামরুজ্জামান  © টিডিসি ফটো

ড. মো. কামরুজ্জামান। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) স্কুল অফ বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্স অনুষদের এই সহযোগী অধ্যাপক বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন উচ্চশিক্ষালয়টির ইনস্টিটিটিউট অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্স রিসার্চের (আইবিইআর) পরিচালক হিসেবে। গুণী এই গবেষক এর আগে 'ফিনান্সিয়াল ইনোভেশন অ্যান্ড ইকোনমি'তে উচ্চতর গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে জায়গা করে নেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক বিশ্বের প্রথম সারির চিকিৎসা ও বিজ্ঞান বিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশনা সংস্থা ‘এলসেভিয়ার'র শীর্ষ ২ শতাংশ বিজ্ঞানীর তালিকায়। সম্প্রতি আইবিইআরে কার্যক্রম, গবেষণার সুযোগ এবং আগামীর পরিকল্পনাসহ সামগ্রিক বিষয়ে তার মুখোমুখি হয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন খাঁন মুহাম্মদ মামুন-

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইনস্টিটিটিউট অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্স রিসার্চ তথা আইবিইআর প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য কী?

ড. মো. কামরুজ্জামান: ইনস্টিটিটিউট অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্স রিসার্চ (আইবিইআর) প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য গবেষণাকে উৎসাহিত করা। বিশেষ করে 'বিজনেস সেক্টরে' গবেষণা বাড়াতে ২০০১-০২ সালের দিকে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখন পর্যন্ত এখানে সাতটি প্রফেশনাল কোর্স চালু রয়েছে। এছাড়াও আমাদের আরও দুটি প্রোগ্রাম 'পাইপ লাইনে' রয়েছে; আগামীতে সেগুলোও চালু হবে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রাযুক্তিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এখানকার পাঠদান কতটুকু হালনাগাদ? 

ড. মো. কামরুজ্জামান: আমাদের এখানে একটি প্রোগ্রামের নাম— পিডিজি ইন ডেটা সায়েন্স। এটি খুবই সময়োপযোগী একটি কোর্স। প্রাযুক্তিক যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তার সঙ্গে সমন্বয় করেই এটি সাজানো হয়েছে। যেমন— এখন আর হাতে 'মোমো' তৈরি করার সময় নেই। আপনি 'এআইকে' পরিস্থিতি জানান; সে আপনার কাজ করে দেবে। অর্থাৎ এখন প্রযুক্তি অনেক দূর এগিয়েছে। তার সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা এখানে পাঠদান করছি। এছাড়াও এখানে বিজনেস অ্যানালিটিক্স নামে একটি কোর্স চালু করা হচ্ছে; যা বাজার বিশ্লেষণ করবে। এখন কনভেনশনাল কাজের সুযোগ নেই। নতুন প্রযুক্তিগুলোর সঙ্গে খাপ-খাইয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়ার মধ্যে কেমন যোগাযোগ রয়েছে? 

ড. মো. কামরুজ্জামান: আমরা ইন্ডাস্ট্রি নিয়েই কাজ করছি। অ্যালামনাইরা আমাদের সঙ্গে কাজের সুযোগ চাচ্ছেন। এটি খুবই ভালো এবং আশার দিক। ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে এবং সেটি আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছি। পাশাপাশি যখনই বাজারে নতুন কোনো কিছু আসে, তখনই তা সংযুক্ত করি। ফলে এগিয়ে থাকার পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গেই আমরা গভীরভাবে কাজ করছি। চ্যালেঞ্জ হচ্ছে— এই যোগাযোগ আরও বাড়াতে হবে, তাদের চাহিদা আরও ভালোভাবে বুঝতে হবে। 

‘‘বুদ্ধিভিত্তিক প্রচেষ্টায় নিয়োজিত শিক্ষার্থীদের বিশেষভাবে অনুপ্রেরণা দেয় ইউআইইউ। ইন্টারন্যাশনাল ম্যাথ অলিম্পিয়াড, ইন্টারন্যাশনাল ফিজিকস অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন অথবা জাতীয় কলেজ পর্যায়ে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং কনটেস্টে শীর্ষ ৩০তম স্থান পর্যন্ত অর্জন-থাকা মেধাবীদের জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা রয়েছে।’’

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এখানে গবেষণার সুযোগ কেমন?

ড. মো. কামরুজ্জামান: এটা নির্ভর করে আগ্রহের ওপর। আমরা এখানে মধ্যম পর্যায়ের মানুষদের নিয়ে কাজ করছি; যারা সদ্য স্নাতকের শিক্ষার্থী নন। প্রফেশনাল প্রশিক্ষণের পর তারা অন্যদের তুলনায় ভালো করছে। কারণ তারা এখানে গবেষণার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু, আমাদের পূর্ণকালীন চাকরির পাশাপাশি নিয়মিত গবেষণা কঠিন। সেজন্য ডেটা অ্যানালাইসিসের মতো শর্ট কোর্সগুলো সহজ সমাধান হতে পারে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: গবেষণার ক্ষেত্রে অর্থায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ, আইবিইআর সেটা কতটা উপলব্ধি করছেন?

ড. মো. কামরুজ্জামান: আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, গবেষণার ক্ষেত্রে অর্থ বড় কোনো ইস্যু না। বড় বিষয় হচ্ছে, উপলব্ধি। ইন্ডাস্ট্রিকে বুঝতে হবে, গবেষণা কীভাবে তাকে সহায়তা করতে পারে এবং এটি কীভাবে তার জন্য সহায়ক হবে। সে যখন এটি সহজে বুঝতে পারবে, তখনই সে নিজের সমস্যার সমাধান করতে পারবে। সেজন্য ইন্ডাস্ট্রির উপলব্ধি দরকার। 

‘দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে করছে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ)। শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি ভিন্নধারা ও স্বতন্ত্রতায় দেশের উচ্চশিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে সচেষ্ট রয়েছে।’

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিশ্ববিদ্যালয় তথা ইউআইইউ'র সঙ্গে আইবিইআর কীভাবে কোলাবোরেট করে?

ড. মো. কামরুজ্জামান: আইবিইআর একটি স্বাধীন গবেষণা ইনস্টিটিটিউট; এটি ইউজিসি অনুমোদিত। বাংলাদেশে এমন প্রতিষ্ঠান খুবই কম আছে। আমরা এখানে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম অফার করার সুযোগ পাচ্ছি। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব বেশি হস্তক্ষেপ নেই; বরং তারা আমাদের সহায়তা করছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার প্রতি উদার সমর্থন আমাদের আরও বেশি সহায়তা করছে। 

ইউআইইউ ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি এশিয়া র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থানে রয়েছে। কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংস ২০২৪ সালে ইউআইইউ বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মধ্যে তৃতীয় এবং সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে পঞ্চম স্থানে আছে। দি ইমপ্যাক্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে ২০২০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত এসডিজি-১ ক্যাটাগরিতে স্থান করে নিয়েছে এবং ২০২৩ সালে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আইবিইআর-এর আগামীর পরিকল্পনা কী?

ড. মো. কামরুজ্জামান: আমরা একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। তাতে চারটি টিম রয়েছে, যাদের ভালো গবেষণার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেখানে আমরা সংযুক্ত করছি, কী কী বিষয়ে গবেষণা হতে পারে। এর মধ্য দিয়ে আমরা ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা বুঝতে চেষ্টা করবো। আমরা ইন্ডাস্ট্রিকে তার চাহিদা অনুযায়ী গবেষণার সুযোগ দেওয়ার আয়োজন রাখছি; ইন্ডাস্ট্রিকে আমরা সে বার্তা দিতে চাই। সর্বোপরি আমাদের গবেষণা আরও বাড়বে।


সর্বশেষ সংবাদ