চাকরির বাজারে ‘ডে ওয়ানে’ কাজ পাবেন ইউআইইউ স্নাতকরা

অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া
অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া  © টিডিসি ফটো

অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) উপাচার্য। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। দীর্ঘ তিন দশকের অধিক সময় ধরে শিক্ষকতা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে। পাশাপাশি বুয়েটের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি কম্পিউটার সায়েন্সের এই অধ্যাপকের মুখোমুখি হয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। কথা বলেছে প্রতিষ্ঠার দুই দশকে ইউআইইউ’র অর্জন-সফলতা, শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে পরিকল্পনাসহ উচ্চশিক্ষার নানা বিষয় নিয়ে। পাঠকদের জন্য সেই আলাপচারিতার প্রথম পর্ব তুলে ধরা হলো আজ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- ইরফান এইচ সায়েম। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রতিষ্ঠার দুই দশকে ইউআইইউ’র অর্জন কতটুকু?
অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া: ২০০৩ সালে মাত্র ৭৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ইউআইইউ পথচলা শুরু করেছিল। দুই দশকে আমাদের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা এখন ৮ হাজারের বেশি। এতটুকু হলো সংখ্যার দিক থেকে। কিন্তু আমি বলব, যদিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ২০ বছর খুব বেশি সময় নয়; তারপরও আমরা সবসময় চেষ্টা করছি গুণগত মান ধরে রাখতে। আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা ১২ বছর ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চমাধ্যমিক এবং কলেজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। সুতরাং তাদের ফাউন্ডেশন যদি ভালো না থাকে, তবে তাদেরকে গড়া অপেক্ষাকৃত বেশি চ্যালেঞ্জিং। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করি তাদেরকে গড়ে তুলতে। উদ্দেশ্য একটাই- তারা যেন কর্মক্ষেত্র এবং বিশ্ব বাজারে নিজেদের জায়গা করে নিতে পারে। মোটাদাগে এটাই আমাদের অর্জন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দক্ষ গ্র্যাজুয়েট গড়ার লক্ষ্যে ইউআইইউ কীভাবে কাজ করছে?
অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া: একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্যই হলো দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরি করা। আমরা চাই, ইউআইইউ’র গ্র্যাজুয়েটরা যেন চাকরির বাজারে গিয়ে ‘ডে ওয়ানে’ কাজ করতে পারে; যেটি আগামী সেমিস্টার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। বিষয়টা এমন যে, ধরুন একটা সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি করতে হলে কী কী জ্ঞান থাকতে হয়, কী ধরনের কাজ জানতে হয়, সেটি আমরা শিক্ষার্থীদের এক-দুই সেমিস্টার ধরে শেখাব। এই যোগ্যতা কাজে লাগিয়েই তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ‘ডে ওয়ান’ ভিত্তিতে চাকরির সুযোগ পাবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক ইন্ড্রাস্ট্রির সঙ্গে কথা বলেছি, তারাও বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। প্রাথমিকভাবে আমাদের চিন্তা- যারা ১০০ বা তার বেশি ক্রেডিট শেষ করেছে, তারা এই প্রোগ্রামের জন্য নির্বাচিত হবেন। আমাদের বিশ্বাস- এই প্রোগ্রাম আমাদের শিক্ষার্থীদের শুধু ‘ডে ওয়ান’ জব দেওয়ায় সীমিত থাকবে না, বরং তাদেরকে মানসম্মত উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতেও সাহায্য করবে। এটি শুধু সিএসই বা সায়েন্স অনুষদভুক্ত বিষয়ের জন্য নয়, বিজনেসসহ সব বিভাগের জন্যই প্রযোজ্য হবে। 

May be an image of 1 person, beard, newsroom, hospital and text

অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া, ভিসি, ইউআইইউ

দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির আরও একটি মাধ্যম হলো ‘প্রজেক্ট শো’; যেটা আমরা ইউআইইউ’র অন্যতম বড় বিভাগ সিএসই-তে চালু করেছি। আমরা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কোর্সে প্রজেক্ট দিয়ে থাকি, যেটা তারা একটা সময়ে গিয়ে প্রেজেন্ট করে থাকে। ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীদের এই প্রজেক্ট এবং তাদের প্রেজেন্টশন স্কিল ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। আর এভাবেই আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধীরে ধীরে ‘এক্সিলেন্স’ তৈরি হচ্ছে। 

আরও পড়ুন: যে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি একশ’ শিক্ষার্থীর ৮ জন পড়েন বিনা খরচে

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষার্থীদের জন্য কী ধরনের স্কলারশিপ বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা রয়েছে?
অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া: আমাদের এখানে বিভিন্ন ধরনের বৃত্তির সুযোগ-সুবিধা আছে। প্রথমত: প্রত্যন্ত অঞ্চল (পার্বত্য এলাকা ও বিভিন্ন দ্বীপ) যেখানে শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি, এমন এলাকার গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য ইউআইইউ’র ৩ ভাগ আসন বরাদ্দ রয়েছে। আমরা তাদেরকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে (টিউশন ফিসহ সব ধরনের খরচ) পড়িয়ে থাকি। আমরা দেশকে ‘অশিক্ষার অন্ধকারে’ রাখতে চাই না। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে আমরা দেখেছি, এমন প্রায় ২৪০টি উপজেলা আছে যেখানকার শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে, আমরা তাদেরকে প্রাধান্য দিচ্ছি। কারণ প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটা ছেলে বা মেয়ে যদি পড়াশোনা করে তার অঞ্চলে ফিরে যায়; তাহলে সে-ই তার অঞ্চলের মানুষকে আলোকিত করতে পারবে। সুতরাং সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই ছাত্রছাত্রীরা আমাদের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারযোগ্য। 

May be a doodle of 6 people and text

এক নজরে ইউআইইউ

দ্বিতীয়ত: জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্যও আমরা আরও ৩ ভাগ স্কলারশিপের ব্যবস্থা রেখেছি; যারা ইউআইইউ-তে বিনামূল্যে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছেন। এই দুটো মূলত ‘ক্রাইটেরিয়া বেসড’। 

এর বাইরেও যারা মেধাবী, তাদের মধ্য থেকে ২ ভাগ শিক্ষার্থী শতভাগ ওয়েভার পেয়ে থাকেন, ৪ ভাগ পেয়ে থাকেন ৫০ ভাগ ওয়েভার; এছাড়াও বাকি ৪ ভাগ ২৫ শতাংশ টিউশন ফি ওয়েভার পান, সবমিলিয়ে মোট ১০ ভাগ ছাত্রছাত্রী বিভিন্নভাবে স্কলারশিপ পেয়ে থাকেন এবং সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো- এটার জন্য শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের আবেদন বা তদবির করতে হয় না। সম্পূর্ণ অটোমেটেড সিস্টেম থেকে অটো জেনারেট হয়ে শিক্ষার্থীরা এই ওয়েভার পেয়ে থাকেন। 

আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জে এশিয়ার সেরা ইউআইইউ

এর বাইরে ইউআইইউ-তে সিবলিং বা সহোদর-সহদোরা কোটায় ভর্তি হলে ২৫ভাগ স্কলারশিপের সুযোগ রয়েছে। এই সুবিধা আমাদের প্রাক্তন (অ্যালামনাই) শিক্ষার্থীদের ভাইবোনদের জন্যও প্রযোজ্য। আবার চাকরিরত অবস্থায় কেউ যদি মাস্টার্স প্রোগ্রামগুলোতে সহকর্মীকে নিয়ে আসেন, তাহলে উভয়েই ২৫ ভাগ ছাড় পাবেন। এছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাইরে আলাদাভাবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা রয়েছে। অর্থাৎ ইউআইইউ-এর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্যই হলো, সমাজে পিছিয়ে পড়াদের সামনে নিয়ে আসা। আমি মনে করি, জাতি কিংবা এ দেশের সন্তান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো- বঞ্চিতদের সুবিধা দিয়ে এগিয়ে আনা। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষার্থীদের অন-ক্যাম্পাস পার্টটাইম জবের কোনো সুযোগ আছে কিনা?
অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া: এতদিন পর্যন্ত ওই অর্থে ছিল না। তবে আমাদের এখানে ‘আন্ডারগ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্টেন্ট’ রয়েছে, যাদেরকে আমরা টিএ বলে থাকি। এ ধরনের পজিশনগুলোতে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত করা হয়। সেক্ষেত্রে তারা অন-ক্যাম্পাস কিছু কাজ করতে পারে। তবে আগামী সেমিস্টার থেকে আমরা শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে আরএ (রিসার্চ অ্যাসিসট্যান্ট) নেওয়ার পরিকল্পনা করছি। 

সাধারণত উন্নত বিশ্বে পিএইচডির ছাত্রছাত্রীরা আরএ হিসেবে কাজ করে থাকেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু পিএইচডি দেওয়ার সুযোগ নেই, তাই আরএ পজিশনটাও ব্যবহার করা যাচ্ছিল না। কিন্তু আমাদের শিক্ষকরা যেহেতু গবেষণা করে থাকেন, তাই তাদের আরএ দরকার হয়। তাই আমাদের চিন্তা, আগামী সেমিস্টার থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে রিসার্চ অ্যাসিসট্যান্ট নিয়োগ দেওয়া। যেসব শিক্ষার্থী ১০০ বা তার থেকে বেশি ক্রেডিট সম্পন্ন করেছে অর্থাৎ তৃতীয়-চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়ন করছেন, তারাই সম্মানীর বিনিময়ে এটা করার সুযোগ পাবেন। এছাড়াও আমাদের ছাত্রছাত্রীদের মধ্য থেকে যারা পেপার পাবলিশ করবেন, তাদেরকেও কনফারেন্সে যোগ দেওয়ার জন্য খরচ বাবদ পেপারপ্রতি ১৫ হাজার টাকা দিব। 

এর বাইরেও তুলনামূলক দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য মেধাবী সিনিয়র শিক্ষার্থীদের টিউটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রক্রিয়ার দুটো উপকারিতা রয়েছে। এক. দুর্বল ছাত্রছাত্রীরা শিখতে পারবেন; দুই. ভালো ছাত্রছাত্রীরা ক্যাম্পাসে টিউটর হিসেবে কাজ করে আর্থিকভাবে কিছুটা স্বচ্ছল হবেন। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: একাডেমিক পড়াশোনার বাইরেও নানা বিষয়ে অনেক শিক্ষার্থীর আগ্রহ থাকে। খেলাধুলা, গান, বিতর্ক, নাচ, আইডিয়াভিত্তিক এক্টিভিজম করতে চায় তারা। এজন্য ইউআইইউ কী ধরনের সুযোগ তৈরি করেছে?
অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া: সহশিক্ষা কার্যক্রম শুধু কালচারাল না, খেলাধুলার দিকটাও আছে। আমাদের ক্যাম্পাসে প্রায় ১৮ বিঘার একটি সুন্দর মাঠ রয়েছে। যেখানে আলাদাভাবে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল ও অন্যান্য খেলাধুলার ব্যবস্থা রয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা মাঠটিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে খেলাধুলা করতে পারেন। আমরা বার্ষিক খেলাধুলার আয়োজনও করে থাকি। এজন্য গড়ে উঠেছে স্পোর্টস ক্লাব ও কালচারাল ক্লাব। পাশাপাশি থিয়েটার এন্ড ড্রামা ক্লাবও রয়েছে, যারা সহশিক্ষামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এর বাইরেও রয়েছে জিমনেশিয়াম; যেখানে পুরুষ ও মহিলা প্রশিক্ষক দ্বারা ছাত্র-ছাত্রীরা শরীর চর্চার সুযোগ পেয়ে থাকেন। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি তুলনামূলক বেশি বলে মনে করেন অনেক শিক্ষার্থী-অভিভাবক। আপনি কি মনে করেন? খরচ অপেক্ষাকৃত বেশি হলেও তা কি জাস্টিফাইড? 
অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া: এটা আপেক্ষিক ব্যাপার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে এক টাকাও দেয়া হয় না; যেখানে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ব্যয় সরকারের। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ও শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ নানা বিষয় থাকে। তাই স্বভাবতই খরচ বেশি। সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার চাপ থাকায় এই খরচ আরও বেশি হয়েছে। 

স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ ও স্থানান্তরের যে খরচ, আর টিউশন ফি থেকে নেওয়া আয় এখন প্রায় কাছাকাছি। ফলে টিউশন ফি কম-বেশির যে বিষয়টি আসে, সেটা আদতে আপেক্ষিক। যে বিশ্ববিদ্যালয় যত বেশি ‘কোয়ালিটি এডুকেশন’ দিতে চায়, মানসম্মত শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করতে চায়, তাদের টিউশন ফি একটু বেশি হবে- এটা স্বাভাবিক। তা না হলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।


সর্বশেষ সংবাদ