স্বপ্ন ছিল মেডিকেল, হাবিপ্রবিতে পড়াশোনার পর প্রথম বিসিএসেই ক্যাডার

তাপস কুমার ভট্টাচার্য
তাপস কুমার ভট্টাচার্য  © টিডিসি ফটো

তাপস কুমার ভট্টাচার্য হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অনুষদে পড়াশোনা করেছেন। পড়াশোনা শেষ করেই বিভিন্ন চাকরির সুযোগ পান তিনি। ৪১তম বিসিএসে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কৃতিত্বের সাথে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন। এটি ছিল তাঁর প্রথম বিসিএস। বিসিএস জয়ের গল্প ও নতুনদের প্রতি তাঁর অভিজ্ঞতালব্ধ পরামর্শ শুনেছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার—

প্রবল স্বপ্ন ছিল মেডিকেলে পড়ার। কিন্তু প্রথমবার ব্যর্থ হয়ে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) কৃষি অনুষদে ভর্তি হন তাপস। কিছুদিন ক্লাস করার পর মেডিকেলের প্রতি তীব্র ইচ্ছা থেকে পুনরায় কোচিং করতে আসেন রংপুর। কিন্তু এবারো ব্যর্থ। ফলে ফিরে যেতে হয় আবার ক্যাম্পাসে। বন্ধুরা এখন সিনিয়র হয়ে গেছে। কিন্তু কিছু করার নেই। ক্যাম্পাসে একটি ভালো সঙ্গ, একটি সুস্থ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং বন্ধুদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ পরবর্তী জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় ক্লাসমেট কয়েকজন ভালো বন্ধুর সাথে পরিচিত হয়ে শুরু করেন ক্যাম্পাস লাইফের নতুন পথ চলা।

বিসিএস প্রস্তুতি ও সাফল্য
তাপস তৃতীয় বর্ষে গ্রুপ স্টাডি আর দৃঢ় সংকল্প নিয়ে শুরু করেন বিসিএস প্রস্তুতি। প্রথমেই সমাধান করেন বিসিএস প্রশ্নব্যাংক এরপর কয়েকজন মিলে মাস্টার্স করতে ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। মাস্টার্স ক্লাস, ল্যাবের ফাঁকে ফাঁকে চলত জবের প্রস্তুতি। অন্যান্যদের মতো বাজারের প্রচলিত বই দিয়ে শুরু করেন বিসিএস পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি। 

প্রিলিমিনারির জন্য তিনি কোনো কোচিং করেন নি। বরং নিজ থেকে প্রতিটি বিষয় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়াটাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছিলেন। ফোনের গুগল ম্যাপ দেখে দেখে আন্তর্জাতিক স্থান, রাজনৈতিক বিষয়গুলো পড়তেন। ওখানে সুন্দর সুন্দর ছবিও দেওয়া থাকতো। ইংরেজিটা একটু সময় দিয়ে পড়ার চেষ্টা করতেন। মাঝে মাঝে অন্যান্য চাকরির এক্সাম গুলিও দিতে হতো। সে প্রশ্নগুলোও ভালো ভাবে সলভ করায় পরবর্তীতে অনেক সুফল পেয়েছেন। হঠাৎ দেশে করোনা মহামারি আসলে হল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে জীবনের প্রথম বিসিএস (৪১ তম) পরীক্ষা দিতে হয় অনেক অনিশ্চয়তার মধ্যে। সৃষ্টিকর্তার কৃপায় ৪১তম প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাস করেন। পরবর্তীতে লিখিত প্রস্তুতির জন্য হল বন্ধ থাকায় পুনরায় চলে আসেন দিনাজপুর তথা পুরোনো ক্যাম্পাসে। পাশাপাশি মেস নিয়ে কয়েকজন বন্ধু মিলে শুরু করেন লিখিত প্রস্তুতি।

প্রথমদিকে বড় ভাইদের নির্দেশনায়, কয়েকজন বন্ধু নিয়মিত অনুবাদ চর্চা করতেন। পরে নিজেরাই সাধারণ জ্ঞান ও বাংলার মতো বিষয়গুলি প্রশ্ন বানিয়ে এক্সাম দিতে থাকেন। করোনার কারণে সব বন্ধ থাকায় গ্রুপ স্টাডি বিশেষভাবে সাহায্য করেছিলো। লিখিত পরীক্ষার জন্য কোচিং এ মডেল টেস্ট দিতেন নিয়মিত।এতে করে হাতের লিখার গতি আসে এবং নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করার সুযোগ তৈরি হয়। লিখিত পরীক্ষার জন্য টাইম ম্যানেজমেন্ট সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে, ঘনঘন মডেল টেস্ট এবং নিজে থেকে এক্সাম দিয়ে অবশেষে লিখিত পরীক্ষাতেও পাশ করেছেন। পরবর্তীতে শুরু করেন ভাইভা প্রস্তুতি। প্রথম বিসিএস হওয়ায় শুরুর দিকে ভয় পেলেও নিয়মিত গ্রুপ স্টাডি করে সে ভীতি কমে যায়।

চার বন্ধু মিলে হলের ছাদে নিয়মিত ভাইভা প্র্যাকটিস করতেন। তাছাড়া নিয়মিত অন্যান্য ভাইদের সাথেও ভাইভা প্র্যাকটিস করতেন। যা ভাইভা বোর্ডের সামনে নার্ভাসনেস কাটাতে বিশেষভাবে সাহায্য করেছিলো। গ্রুপ স্টাডি আর দৃঢ় সংকল্পের মধ্য দিয়েই তিনি ৪১ তম বিসিএস কৃষি ক্যাডারে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন। তাছাড়াও ব্যাংক ও বিভিন্ন সরকারি চাকরির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।

নতুনদের জন্য পরামর্শ
সবারই নিজস্ব কিছু কৌশল থাকে। যার জন্য তিনি সফল হন। কেউ গ্রুপ স্টাডি কেউ বা একা পড়েই সফলতা পান। তবে সফল হতে হলে গ্রুপ স্টাডির প্রয়োজনীয়তায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির জন্য শুরুতেই পুরোনো প্রশ্নগুলি সমাধান করে সে আলোকে পড়া চালিয়ে যেতে হবে। আর লিখিত পরীক্ষার জন্য নিয়মিত লেখার অনুশীলন ও যেকোনো কোচিং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে উপকৃত হওয়া যাবে। ঘনঘন মডেল টেস্ট এবং নিজে থেকে এক্সাম দিলে হাত চালু হবে। কনফিডেন্সও বৃদ্ধি পাবে।

সবশেষে ভাইভার জন্য নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসটা বেশি জরুরি। ভুল কোনো বিষয়ে কনফিডেন্স না থাকাই ভালো। ভাইভা বোর্ডে নিজেকে যতটা সম্ভব বিনয়ী এবং সৎ রাখার চেষ্টা করতে হবে। কোন মিথ্যাকে সুন্দরভাবে সাজাতে গিয়ে বোর্ডের স্যারদের কাছে ধরা পরা যাবে না। তাই যতোটা সম্ভব সৎ এবং নির্ভয় থাকার চেষ্টা করতে হবে।

বিসিএসসহ বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষায় সফলতা পেতে যেটি সবচেয়ে বেশি জরুরি তা হলো লক্ষ্য স্থির রাখা। কেননা বেকারত্বের পুরোটা সময় জুড়ে ব্যর্থতার কারণে ডিপ্রেশন আসে। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য স্থির রেখে সামনে চলতে হবে। আমাদের চেষ্টার কমতি না থাকলে সৃষ্টিকর্তাও আমাদের নিরাশ করবেন না। ফলে সফলতাও আসবে অতি দ্রুত।


সর্বশেষ সংবাদ