সংসার-বাচ্চা সামলে মাসে ২ হাজার ডলার আয় সাবিহার

সাবিহা আরেফিন কলি
সাবিহা আরেফিন কলি  © সংগৃহীত

প্রথমে অনলাইনে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে চেষ্টা করতাম শেখার। প্রথম এক-দেড় বছর আমি কোনো আয় করতে পারিনি। ছোট থেকেই আমার আঁকাআঁকির প্রতি ঝোঁক ছিলো। তারপর আমি আমার স্বামীর সহায়তায় ঢাকায় গ্রাফিক ডিজাইনিংয়ের উপর কোর্স করি এবং ধীরে ধীরে মার্কেটপ্লেসে ভালো অবস্থান গড়ে তুলি।

সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ‘ন্যাশনাল ফ্রিল্যান্সার কনফারেন্স ২০২৩’-এ সম্মাননা পেয়েছেন সাবিহা আরেফিন কলি। ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা  দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন  তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌস

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচয়?

সাবিহা আরেফিন: আমি সাবিহা আরেফিন কলি। মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অনার্স শেষ করি। আমার বেড়ে ওঠা ঢাকায়। বর্তমানে আমি গ্রাফিক্স ডিজাইনিং নিয়ে কাজ করছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জার্নি?

সাবিহা আরেফিন: আমার প্রেগন্যান্সির সময় ২০১৪ সালে দেশে তখনো ফ্রিল্যান্সিং অতটা জনপ্রিয়তা পায়নি। কৌতুহলবসত আমি ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করি। যদি বাসায় বসে কিছু আয় করা যায় কারণ আমি মাস্টার্স কমপ্লিট করিনি আর ঢাকায় গিয়ে চাকরি করা সম্ভব না কারণ আমি তখন প্রেগন্যান্ট ছিলাম। নিজে নিজে প্রথমে অনলাইনে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে চেষ্টা করতাম শেখার। প্রথম এক-দেড় বছর আমি কোনো আয় করতে পারিনি। তারপর আমি আমার স্বামীর সহায়তায় ঢাকায় গ্রাফিক ডিজাইনিংয়ের উপর কোর্স করি এবং ধীরে ধীরে মার্কেটপ্লেসে ভালো অবস্থান গড়ে তুলি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ফ্রিল্যান্সিং-এর প্রথম কাজ আর আপনার অনুভূতি যদি বলতেন

সাবিহা আরেফিন: আমি আমার প্রথম কাজ পাই একজন ফিলিপাইনের লোকের কাছ থেকে ৫ ডলারের। কাজটি যখন আমি শেষ করে জমা দিই তখন তিনি আর আমার পেমেন্টটি করেননি বলা যায় আমি আমার প্রথম কাজটি ফ্রিতে করেছি। তাই এখানে প্রথম কাজের অভিজ্ঞতা আমার কিছুটা তিক্ত ছিলো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইনিং কে কেন বেছে নিলেন ? ফ্রিল্যান্সিং-এ এটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনি মনে করেন?

সাবিহা আরেফিন: গ্রাফিক্স ডিজাইনিং বেছে নেয়ার অন্যতম কারণ আমি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং করি এখানে আমার আগে থেকেই ডিজিটাল আর্ট সম্পর্কে ধারণা ছিলো। এছাড়াও ছোট থেকেই আমার আঁকাআঁকির প্রতি ঝোঁক ছিলো এবং আমি দেখি ফ্রিল্যান্সিংয়ে এর ভালো চাহিদা রয়েছে তাই আমি এটি বেছে নিই। এটি বর্তমানে খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং গ্রোয়িং একটি সেক্টর। দিন যত যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সহ বাংলাদেশে সবকিছু আধুনিকায়নের ফলে এই ডিজিটাল আর্টের চাহিদা অনেক বেড়েছে। এখন দেখবেন ছোট ছোট কোম্পানি গুলোরও নিজস্ব লোগো থাকে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এআই এর ফলে কি এই সেক্টরের ফ্রিল্যান্সারদের হুমকির মুখে পরার সম্ভাবনা রয়েছে?

সাবিহা আরেফিন: এটি একটি ভুল ধারণা। এআই একটি মেশিন মাত্র যা কিনা আমাদের কমান্ড অনুযায়ী কাজ করে এটি কখনো মানুষের মতো কল্পনা করতে পারে না। যেসব ফ্রিল্যান্সাররা এআই ব্যবহার এবং নিজের বুদ্ধিমত্তা, সৃজনশীলতার মাধ্যমে কাজ করবে তারাই এগিয়ে থাকবে ভবিষ্যতে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যেকোনো বিষয় থেকে পড়ালেখা করেই কি ফ্রিল্যান্সিং সম্ভব?
 
সাবিহা আরেফিন: হ্যাঁ, এখানে সাবজেক্ট কোনো ব্যাপার না। মূলত স্কিলটাই মুখ্য। ফ্রিল্যান্সিংয়ের যে সেক্টর গুলো রয়েছে সেগুলো নিয়ে জ্ঞান থাকলেই করা সম্ভব। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ফ্রিল্যান্সিং এর শুরুতে কোন বিষয়গুলো বাধা হিসেবে কাজ করেছে এবং সেগুলো থেকে কিভাবে বেরিয়েছেন

সাবিহা আরেফিন: বাধা বলতে আমার সংসার এবং বাচ্চা সাথে এই ফ্রিল্যান্সিং সব একা হাতে সামলাতে হতো। আমার সাত বছর বয়সী একটি বাচ্চা রয়েছে তার দেখভাল করা। সংসারের কাজকর্ম শেষে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সময় দেয়াটা কষ্টকর হয়ে যেত। এ বিষয়ে আমার স্বামীর সাহায্য পাই তার অনুপ্রেরণায়ই আমি এই ফ্রিল্যান্সিং চালিয়ে যাই ধৈর্য ধরে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এই ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কি কি কারণ হতে পারে? 

সাবিহা আরেফিন: এখানে ব্যর্থতার কারণ হিসেবে বলা যায় ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না নিয়ে আসা। অনেকেই ইন্টারনেট দেখেই প্রোফাইল খুলে বসে কিন্তু একটি ভালো পোর্টফোলিও না থাকলে কখনোই কাজ পাওয়া সম্ভব না। এক্ষেত্রে ভালো কোনো যায়গা থেকে নির্দিষ্ট বিষয়ে কোর্স সম্পন্ন করে আসা উচিত এবং সময়ের সাথে নিজেকে আপডেট করা উচিত। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নতুনদের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ দিতেন

সাবিহা আরেফিন: তাদের বলবো বর্তমানে দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান ফ্রিল্যান্সিং শেখানোর নামে অনেক টাকা নিয়ে থাকে কিন্তু তেমন কিছু শেখায় না। এখানের আসতে ইচ্ছুক হলে প্রথমে এই কমিউনিটির ভালো অবস্থানে যারা আছে তাদের পরামর্শ নিয়ে তাদের গাইডলাইন অনুসারে চলা। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন স্কিল ডেভেলপ করা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ধন্যবাদ আপনার সময় দেয়ার জন্য।

সাবিহা আরেফিন: আপনাকেও ধন্যবাদ।


সর্বশেষ সংবাদ