‘উপাচার্য খুঁজতে হবে, তদবিরকারীদের বানানো যাবে না’

অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের
অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের  © টিডিসি ফটো

গত দুই বছরে দুর্নীতির অভিযোগে বেশকিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এছাড়া সম্প্রতি বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এর পাশাপাশি আলোচনায় রয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াও। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে কথা বলেছেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বর্তমানে আপনি ইউজিসির অর্থ বিভাগের দায়িত্বে আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলা আর্থিক ব্যয়ে কতটা স্বচ্ছতা বজায় রাখছে?
ড. মো. আবু তাহের: আমি দায়িত্বে আসার পর যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রদত্ত বাজেটের ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার। যেমন: আমরা এখন নতুন বাজেট প্রদানের পূর্বে তাদের বিগত বাজেটের আর্থিক ব্যয়ের এসেসমেন্ট করছি। কোথাও অসঙ্গতি পেলে সেগুলো চিহ্নিত করে সংশোধন করতে বলছি। তারা সংশোধন না করলে সেগুলো অডিট আপত্তি হিসেবে যাচ্ছে। নতুন বাজেটের অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রেও বিষয়গুলো বিবেচনা করা হচ্ছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিগত কয়েকটি বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এর কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে কি?
ড. মো. আবু তাহের: গবেষণায় আমরা কিছু ফিডব্যাক পাচ্ছি। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রকাশনার সংখ্যা আশানরূপভাবে বেড়েছে। আমরা সব বিশ্ববিদ্যালয়কেই একটা ফ্রেমওয়ার্কে আনার চেষ্টা করছি। রিসার্চ সেল, গবেষণা নীতিমালা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। কেই যদি ইউজিসি নিয়ে ফান্ড নিয়ে ভালো জার্নালে প্রকাশনা দেখাতে না পারে তবে অর্থ ফেরত নেয়ার নীতিমালা করা হয়েছে। 

যারা উপাচার্য হতে চাইবে, তদবির করবে তাদের নিয়োগ দেয়া যাবে না। কারণ তদবিরকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন নয় নিজের স্বার্থরক্ষা নিয়ে ভাববে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: অধিকাংশ নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটসহ সুযোগ সুবিধার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ বিষয়ে ইউজিসি কি ভাবছে?
ড. মো. আবু তাহের: এই সংকট নিরসনে আমরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নতুন বিভাগ, অনুষদ অনুমোদন দিচ্ছি না। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও আমরা একটা নীতিমালা সুপারিশ করেছি। আগে অবকাঠামো নির্মাণ হবে, শিক্ষক নিয়োগ হবে তারপর শিক্ষার্থী ভর্তি হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস:  সাম্প্রতিক সময়ে ইউজিসি বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করেছে। এই তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ কতটা কার্যকর হচ্ছে?
ড. মো. আবু তাহের: আমরা তদন্ত শেষে প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিচ্ছি। পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি তাদের কাছে। সবক্ষেত্রেই দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এমনটা বলা যাবে না তবে অনেকক্ষেত্রেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। যেমন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং রুয়েটে অবৈধভাবে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তাদের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে তদন্তের পর দুদকের মামালায় ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। লিডিং ইউনিভার্সিটি তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা একটি মেডিকেল কলেজের হিসেবে ট্রান্সফার করেছিল। তারা সেই টাকা আবার ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছে। অনেকক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

প্রতিটি নিয়োগবোর্ডেই রাষ্ট্রপতি নিয়োগকৃত এক্সপার্ট মেম্বার থাকেন। স্বচ্ছ নিয়োগের মূল দায়িত্বটা এই এক্সপার্ট মেম্বারদেরই নিতে হবে। তারা স্ট্রং থাকলে কখনোই নিয়োগে দুর্নীতি সম্ভব নয়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: গত কয়েক বছরে প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আপনার মতে এর কারণ কি?
ড. মো. আবু তাহের: উপাচার্য কারা হচ্ছে, কিভাবে হচ্ছে এটা একটা বিষয়। বঙ্গবন্ধু যখন উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছিলেন তখন কিন্তু তিনি খুঁজে খুঁজে দেশসেরা ব্যক্তিদেরই উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাদের উপাচার্য বানাননি যারা উপাচার্য হতে চেয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে হলে বর্তমান সরকারকেও উপাচার্য খুঁজতে হবে। যারা উপাচার্য হতে চাইবে, তদবির করবে তাদের নিয়োগ দেয়া যাবে না। কারণ তদবিরকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন নয় নিজের স্বার্থরক্ষা নিয়ে ভাববে। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনও উপাচার্য হওয়ার যোগ্য অসংখ্য ভালো মানের শিক্ষক রয়েছে যারা কখনও এধরনের পদে আসার তদবির করবে না কিন্তু তাদের দায়িত্ব দিলেই বিশ্ববিদ্যালয় সুন্দরভাবে চলবে। সরকারের এইসব শিক্ষকদের খুঁজে বের করতে হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক নিয়োগ নিয়েও অনেক অভিযোগ আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে করণীয় কি?
ড. মো. আবু তাহের: প্রতিটি নিয়োগ বোর্ডেই কিন্তু রাষ্ট্রপতি নিয়োগকৃত এক্সপার্ট মেম্বার থাকেন। স্বচ্ছ নিয়োগের মূল দায়িত্বটা এই এক্সপার্ট মেম্বারদেরই নিতে হবে। তারা স্ট্রং থাকলে কখনোই নিয়োগে দুর্নীতি সম্ভব নয়। আমি বেশ কয়েকটা নিয়োগ বোর্ডে এক্সপার্ট মেম্বার হিসেবে আছি। একবার নিয়োগ বোর্ডে উপাচার্যের কাছ থেকে তার পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগের অনুরোধ পেয়েছিলাম। কিন্তু আমার একটাই কথা ছিল যে যোগ্য সেই নিয়োগ পাবে। সে কার আত্মীয়, কোন দল করে এসব মুখ্য নয়। এর অন্যথা হলে আমি নোট অব ডিসেন্ট দেব। পরে উপাচার্য আর কোনো অনুরোধের সুযোগ পাননি। সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থীকেই নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। আমার মতে প্রতিটি এক্সপার্ট মেম্বারেরই এমন চিন্তা থাকা উচিত যে যত চাপই আসুক না কেন তিনি অনিয়ম হতে দেবেন না। কারণ এক্সপার্ট মেম্বাররা রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ, আর সেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আপোষের কোনো সুযোগ নেই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে ধন্যবাদ সময় দেয়ার জন্য।
ড. মো. আবু তাহের: আপনাকেও ধন্যবাদ।


সর্বশেষ সংবাদ