থাকা-খাওয়ার সমস্যায় শিক্ষকরা চলে যেতেন, আমি সমাধান করেছি

অধ্যাপক একেএম বেলায়েত হোসেন
অধ্যাপক একেএম বেলায়েত হোসেন  © টিডিসি ফটো

সরকারি হাজী আবদুল বাতেন (এবি) কলেজ চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে অবস্থিত। ১৯৬৭ সালে হাজী আবদুল বাতেন সওদাগরের প্রস্তাবে পরের বছর অর্থাৎ ১৯৬৮ সাল থেকে কলেজটির একাডেমীক কার্যক্রম শুরু হয়। এটি প্রথমে সন্দ্বীপের রহমতপুরস্থ কদম মোবারক নামক স্থানে প্রতিস্ঠা করা হয়। নদী ভাঙ্গনের কারণে পরবর্তীতে এটি মুছাপুর ইউনিয়নস্থ সেনের হাটের দক্ষিণ পাশে নতুন করে নির্মান করা হয়।

১৯৭২ সালে এটি স্নাতক (পাস) স্বীকৃতি লাভ করে। পরে ২০১৩ সালে এটি অনার্স কলেজ হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। দীর্ঘ এ যাত্রায় বেশ কয়েকজন অধ্যক্ষ এ কলেজটিতে দায়িত্বপালন করেছেন। বর্তমানে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক একেএম বেলায়েত হোসেন। সম্প্রতি তিনি কলেজটিতে এ পদে নিয়োগ পেয়েছেন। তার নিয়োগ এবং কলেজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। তার কথাগুলো শুনেছেন মুরাদ হোসানাই

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সম্প্রতি আপনি সরকারি হাজী আব্দুল বাতেন কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে। আপনাকে অভিনন্দন। আপনার অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।
অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন: এখানে আমি দীর্ঘদিন ধরে আছি, কলেজের জন্য অনেক শ্রম দিয়েছি। ভবিষ্যতে আরও দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। সরকার দায়িত্ব দিয়েছেন একটা রিমোট এরিয়াতে। দায়িত্ব যথাযথভাবে গুরুত্বসহ পালন করছি এবং উত্তরোত্তর এই কলেজের উন্নয়নের জন্য, পড়াশোনার মান আরো বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছি। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার শৈশব নিয়ে জানতে চাই।
অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন: আমার জন্মভূমি নোয়াখালীর মাইজদী শহরে। আমরা ৪ ভাই, তার মধ্যে একজন প্রাইমারি স্কুলের হেডটিচার, আরেকজন মাধ্যমিক স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক এবং একজন ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন (তিনি হাফেজ এবং মাওলানা)।

পারিবারিক জীবনে আমার ১ ছেলে ২ মেয়ে রয়েছে। ছেলে গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির কম্পিউটার সাইন্সে আইইউটিতে থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছে। মেয়েদের মধ্যে একজন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে গভমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের ২০২৩ সালের পরীক্ষার্থী। ছোট মেয়ে হালি শহর এল ব্লগ সিলভার বেলস কিন্ডারগার্টেন এন্ড গার্লস হাই স্কুল ৭ম শ্রেণীতে পড়াশোনা করছেন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার শিক্ষাজীবনের গল্প শুনতে চাই।
অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন: আমি ১৯৮১ সালে নরোত্তমপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করি। সাধারণ গ্রেটে বৃত্তিও পেয়েছিলাম। আর এইচএসসি পাশ করি নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে ১৯৮৩ সালে। একইসালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলোসফি বিভাগে ভর্তি হই। ১৯৮৬ সালে অনার্স এবং ১৯৮৭ সালের মাস্টার্স শেষ হয়েছে আমার।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সরকারি হাজী আব্দুল বাতেন কলেজ নিয়ে আপনার কি পরিকল্পনা রয়েছে?
অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন: অধ্যক্ষ হওয়ার আগ থেকে যেহেতু আমি এখানে যুক্ত রয়েছি, সেক্ষেত্রে আমার কাজ কিছুটা হবে হবে। নিয়োগের পর থেকেই কলেজের উন্নয়নে কাজ করছি। কলেজ নিয়ে আমার আরও বেশকিছু পরিকল্পনা রয়েছে।

আরও পড়ুন: খসে পড়ছে বিএম কলেজ ছাত্রবাসের পলেস্তারা, বেরিয়ে গেছে রড

আমাদের এ বছর ১৩ জন শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছে আরও কিছু শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য বলে রেখেছি। অবকাঠামগত উন্নয়নের জন্য বলে রেখেছি, ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে ফিডির সাথে বিভিন্নভাবে আমি তাদেরকে বলে রেখেছি। আশা করছি খুব দ্রুত কলেজের আরও উন্নয়ন হবে। আমাদের নতুন ভবনে কিছু কাজ বাকি আছে, সেগুলোর জন্যও বলে রেখেছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এখানে শিক্ষার্থীদের পাঠদান প্রক্রিয়া কেমন? শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকরা কতটুকু আন্তরিক?
অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন: আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের শিক্ষকরা অনেক ভালো, ট্যালেন্ট টিচার এবং তারা অনেক আন্তরিকতার সাথে তারা ক্লাস নিয়ে থাকেন। কিন্তু এখানে থাকা-খাওয়ার সমস্যার কারণে অনেক শিক্ষকরা থাকতে চান না। এই সমস্যার সমাধান করার জন্য জন্য আমি মাউশির সাথে কথা বলে এখানে শিক্ষকদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম মেডিকেলে হচ্ছে বার্ন ইউনিট, অর্থায়ন চীনের

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার কলেজে কয়জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী রয়েছেন? 
অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন: আমাদের কলেজে শিক্ষক আছেন ২৭ জন। ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা এইচএসসিতে ১,১১৭ জন, ডিগ্রিতে ৮৩৫ জন এবং অনার্সে ১৮৩ জন। কলেজে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ২১৩৫ জন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কলেজের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে চাই।
অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন: যেহেতু এটা অনেক পুরাতন কলেজ, অনেক আগের কলেজ এখান থেকে শত শত শিক্ষার্থীরা বের হয়েছেন। তারা এখন বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ভালো অবস্থানে রয়েছেন। তারা দেশের মানুষের সেবা করছেন। 

আমাদের শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা করছেন। কর্মজীবনে ডাক্তার, শিক্ষক, ব্যাংক কর্মচারী-কর্মকর্তা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ‌আছেন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কলেজে আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশ কেমন?
অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন: রাজনৈতিক পরিবেশ আল্লাহ রহমতে ভালো। যারা এখানে রাজনীতি করে আমি তাদেরকে বলে দিয়েছি, কোনো ধরনের কোনো ঝগড়া-বিবাদ যেন না হয়। তারাও আমাকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। তারা আগে দুই গ্রুপ ছিলো, তাদের মধ্যে ভিন্নতা ছিলো, এখন সামনে নির্বাচনকে ঘিরে তারা এক হয়ে গেছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কী কী প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন?
অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন: আমি সব ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছি, কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। আমাদের মাননীয় এমপি মহোদয়ের নিকট সহযোগিতা চাইলে, তিনি সব ধরনের সহযোগিতা করেন। তার সাথে সব সময় যোগাযোগ করি এবং উনার সাথে আমাদের সু-সম্পর্ক আছে। উপজেলা প্রশাসন থেকেও আমরা সহযোগিতা চাইলেও পাই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে যদি কিছু বলতে চান?
অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন: আমাদের শিক্ষকদেরকে আমি বলে রেখেছি, কোনো ক্লাস যাতে মিস না যায়। একইসঙ্গে আমি প্রতিনিয়ত তা মনিটরিং করি। শিক্ষকরাও ছাত্র-ছাত্রীদের যা দেওয়ার তা দিচ্ছে। আমাদের শিক্ষকগণ খুবই দক্ষতার সাথে ক্লাস নিচ্ছেন এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ফিডব্যাক নিচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেয়েরা একটু বেশি মনোযোগী এবং তাদের উপস্থিতিও ছেলেদের তুলনায় বেশি। রেজাল্টও ভালো করে মেয়েরা। ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের আচার-আচরণে দিক থেকেও একে অপরের সাথে সুন্দর এবং মার্জিত ভাষায় কথা বলেন, শিক্ষকদের সাথে অভদ্র ভাষায় কথা বলে না। আমি তাদের সাফল্য কামনা করছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্যেও রইলো শুভকামনা।


সর্বশেষ সংবাদ