‘পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান’ না থাকায় ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীরা বিসিএসে ঝুঁকছে

অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু
অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু  © টিডিসি ফটো

অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন। তিনি নাটোর জেলার লালপুর উপজেলায় ১৯৬৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি অনুগ্রহণ করেন। কর্মজীবনে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্যসহ বেশিকিছু প্রতিষ্ঠানে সফলভাবে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটির প্রেসিডেন্ট।

তার হাতেই প্রতিষ্ঠা পায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স এবং মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও পালন করেন এই বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব। ড. হাসান বাবু জনতা ব্যাংক লিমিটেডের তথ্য প্রযুক্তি ও ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার ও সিনিয়র কনসালটেন্টের দায়িত্বে ছিলেন। কর্মময় এ সফল ব্যক্তিত্ব সম্প্রতি তার জীবনের নানা দিক নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন। তার কথাগুলো শুনেছেন—তাওফিকুল ইসলাম হিমেল

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি অনুষদে শিক্ষার্থীদের পাঠদান প্রক্রিয়া কেমন?
অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টেকনোলজি অনুষদ ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে ধারাবাহিকভাবে এ অনুষদে পাঠদান প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এখানে আমাদের বছরে দুটো সেমিস্টার করা হয়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এ অনুষদের কয়টি বিভাগ রয়েছে?
অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান: এ অনুষদে রয়েছে পাঁচটি বিভাগ। বিভাগগুলো হলো- ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি এন্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং, রোবটিক্স এন্ড ম্যাকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।

শিক্ষার আন্তর্জাতিক মান আমরা আমাদের অনুষদে নিশ্চিতে কাজ করছি। এখানে যে বিভাগগুলোর নাম বলেছি প্রত্যেকটি বিভাগে বিশ্বের অন্যান্য উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পাঠদান করা হয়। আমরা এর প্রতিফলন হিসেবে দেখছি, আমাদের শিক্ষার্থীরা শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বের বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠান যেমন গুগল ও আইবিএমের মতো প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: ২০২৩ সালে তিন বিসিএস শেষ করার পরিকল্পনা পিএসসির

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সময়ের সঙ্গে এখানকার সিলেবাস-পাঠদান পদ্ধতি কেমন আধুনিক হচ্ছে?
অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান: আসলে আমরা প্রতিবছরই আমাদের সিলেবাসগুলো আপডেট করি। আমরা সাধারণত এখানে অ্যাপ্লিকেশন অরিয়েন্টেড সাবজেক্টগুলো রাখার চেষ্টা করি। আমরা যখন কোনো সিলেবাস প্রণয়ন করি তখন একদিকে যেমন বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সাজেশন নেই একইভাবে ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সিলেবাসে কি ধরনের পরিবর্তন আনছেন সে বিষয়গুলোও গুরুত্ব দিয়ে থাকি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি অনুষদের বিভিন্ন বিভাগে পড়া শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার কেমন?
অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান: আমরা দেখেছি আমাদের কিছু ছেলে-মেয়েরা দেশে থাকছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও বলতে হয় ছেলে-মেয়েরা অধিকাংশই বিদেশে চলে যাচ্ছেন। আমরা চিন্তা করছি এসব উচ্চশিক্ষিত ছেলে-মেয়েদেরকে একটা মোটিভেশন দিয়ে দেশে রাখার জন্য।

এখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে বিদেশে গিয়ে আমাদের ছেলে-মেয়েরা গুগল-মাইক্রোসফটের মতো বড় বড় ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছে। এছাড়া অনেকে আমেরিকার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করছেন। আমাদের এসব শিক্ষার্থীরা অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং আরও অনেক উন্নত দেশে রয়েছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি অনুষদের কোন বিভাগে সবচেয়ে বেশি গবেষণা হয়?
অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান: আমি ২০২২ সালে এই ফ্যাকাল্টির ডিন হয়েছি। ডিন হিসেবে দায়িত্বভার নেওয়ার পর দেখলাম আমার এই ফ্যাকাল্টির বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টগুলোতে যে গবেষণা হয় এই গবেষণাগুলো শুধু আমরাই জানছি অথবা ডিপার্টমেন্টের মধ্যে সীমাবদ্ধতা থাকছে। কিন্তু আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর এটা আরও প্রশস্ত করেছি।

আরও পড়ুন: মেডিকেল-ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েও শিক্ষার্থীরা বিসিএস ক্যাডার হতে চায় কেন?

এ অনুষদ যে সমস্ত সিনিয়র ডিপার্টমেন্টগুলো রয়েছে যেমন ইলেকট্রিক্যাল ইলেকট্রনিক, অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং কম্পিউটার সাইন্স এসব বিভাগের শিক্ষার্থীদের গবেষণা বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী প্রকাশনায় প্রকাশিত হয়েছে।

একটা সমস্যা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টটা অনেক দেরিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে এটা আসলে ফোকাসিং ওভাবে হয়নি। আমি এই বিভাগকে মানুষের সামনে তুলে ধরার জন্য নিউজলেটার বের করেছিলাম। সম্প্রতি যেটার প্রথম সংখ্যা বেরিয়েছে এবং আশা করি আমরা দ্বিতীয় সংখ্যার কাজেও হাত দেব।

এই সংখ্যাগুলোকে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আমরা ছড়িয়ে দিচ্ছি। গবেষণাকে আরও সহজ করার জন্য আমরা অনলাইন সাবমিশনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি শিক্ষার্থীদের।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যতটুকুু জানি, ঢাবির প্রযুক্তি অনুষদের পৃথক ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন হয়। ভর্তিচ্ছুদের উদ্দেশ্যে কি বলবেন?
অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান: আমাদের আসলে প্রযুক্তি ইউনিট একটাই রয়েছে। এই ফ্যাকাল্টির অধীনে প্রায় ৭টি কলেজ রয়েছে। যেগুলোর জন্য আমরা একটি ভর্তি ইউনিট স্পেশালভাবে চালু করেছি। এই প্রযুক্তি ইউনিটে যারা পড়ছে আমি তাদের শুধু এটুকুই বলবো, তোমরা কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটধারী হচ্ছো।

তোমাদের সার্টিফিকেটে লেখা থাকবে না যে ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, এখানে থাকা লেখা থাকবে তোমার ডিপার্টমেন্টের নাম এবং ইউনিভার্সিটি অফ ঢাকা। সুতরাং তোমাদের যে শিক্ষাক্ষেত্র সেটা কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে আমরা কোন ক্রমেই কমতে দেব না।

সুতরাং সেই লক্ষ্যে আমি তোমাদেরকে বলতে চাই, তোমরা নতুন ভর্তিচ্ছু, তোমরা কিন্তু নির্দ্বিধায় ভালো ভালো স্টুডেন্টরা আমাদের আন্ডারে তিনটা সরকারি কলেজ রয়েছে- ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলো দেখতে পারো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের কোন বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার? 
অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান: এটা যেহেতু  ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি বিষয় সেখানে অবশ্যই আমি বলবো ফিজিক্স, ম্যাথ, কেমিস্ট্রি এ বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তোমরা এখানে আসলে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথ এগুলো মুখস্ত করার চেষ্টা করবে না, বরং এগুলোকে বুঝিয়ে পড়ার চেষ্টা করবে।

আরও পড়ুন: বুয়েট-কুয়েট থেকে বিসিএসে প্রথম: শ্রম, সময় ও রিসোর্সের অপচয়

ভর্তি পরীক্ষার এই অল্প সময়ে আমরা দেখবো তোমাদের ক্রিয়েটিভিটি, তোমাদের মুখস্থ পড়া নয়। সুতরাং আমরা বলবো, তোমরা বুঝে পড়াশোনা করবা। আর উপস্থিত বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে সমস্যা সমাধান করবা। টেক্সট বই খুব ভালোভাবে পড়বা। এমনভাবে পড়বা যেন সেই বিষয় নিয়ে মুক্তমঞ্চে কথা বলতে পার।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দায়িত্বপালন করেছেন। দুইটা বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজের অভিজ্ঞতা-পরিবেশ নিয়ে জানতে চাই।
অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৩ সালে আমি কম্পিউটার সাইন্স বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। তার আগে ১৯৮৮ সালের দিকে বুয়েট তাদের এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং চালু করে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯২ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ চালু করেছে।

আর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এনভায়রনমেন্ট খুবই সুন্দর ছিল। আজকে যদি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সাইন্সের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে যাই তাহলে দেখি যে আমার ছাত্ররা সেখানকার অধ্যাপক এবং বিভাগের চেয়ারম্যান। নিঃসন্দেহে এটি  আমার জন্য খুবই গর্বের বিষয়। তারা তাদের যোগ্য জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে। তারা অনেক জ্ঞান অর্জন করেছে এবং এখনো জ্ঞান অর্জন করে যাচ্ছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বড় একটি বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত হওয়ার আগে এটি নিয়ে কোন অভিজ্ঞতা আমার ছিল না। তবে এটিকে শিক্ষার্থীদের সংখ্যার দিক থেকে এশিয়ার মধ্যেও দ্বিতীয় বৃহত্তর বিশ্ববিদ্যালয় বলা হয়। আবার বিশ্বের অনেক বড় বিশ্ববিদ্যালয়কে এটির সাথে তুলনা করা হয়।

বাংলাদেশের যে কলেজগুলো রয়েছে সরকারি-বেসরকারি সবগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ফলে এখানে অনেক ধরনের কাজ করতে হয়। এখানে একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ হয়ে থাকে। যার ফলে যারা এখানে কাজ করেছে এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে তাদের জন্য অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করা খুব সহজ হয়।

সেখানে আমরা কোয়ালিটি এডুকেশন দেয়ার চেষ্টা করেছি। সেখান থেকে আমরা সেশনজট দূর করার চেষ্টা করেছি এবং রিমোট এরিয়ার যে সকল শিক্ষার্থী আছে তারা যেন ঢাকা মুখী না হয়ে সেখানে কোয়ালিটি এডুকেশন পায় সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি।

বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক শিক্ষার্থী ভালো ভালো জায়গায় যাচ্ছে। আমার জানা মত একজন সেনাপ্রধান ছিলেন তিনিও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে আমাদের কোনোভাবেই ছোট করে দেখা উচিত নয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দেশের শিক্ষায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যত উন্নতি হবে আমাদের দেশের শিক্ষায় তত উন্নতি করা সম্ভব।

আরও পড়ুন: বাড়ছে বিসিএস প্রীতি, বদলে যাচ্ছে পেশা

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি জনতা ব্যাংকের তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগেও দায়িত্বপালনে করছেন। বিশ্বব্যাংকসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থায়ও কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে আপনার। এতো দায়িত্ব একসঙ্গে তো চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়। এ বিষয়ে কি বলবেন-
অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান: আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলাম ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। এরপরে আমার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে একটি সুবর্ণ সুযোগ এলো সেখানে বিশ্ব ব্যাংকের প্রজেক্টের আওতায় আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছে। সেখানে তৎকালীন প্রধান বিচারপতির সহকারী হিসেবে আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছে।

সুপ্রিমকোর্টসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জজ কোর্টগুলোতে বিভিন্ন মামলার জট কমানোর জন্য আইটির যে বিভিন্নরকম প্রক্রিয়ার ব্যবহার রয়েছে সেগুলোকে আমরা সহজ করার চেষ্টা করেছি। এই প্রেক্ষাপটে আমি সুপ্রিম কোর্টে দুই বছরের জন্য ছিলাম। সেই দুই বছরের জন্য আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে গিয়েছিলাম।

পরবর্তীতে ওখান থেকে দুই বছরের জন্য আমাকে জনতা ব্যাংকে ডেকে নেওয়া হয়। জনতা ব্যাংকের আইটি বিভাগকে ভালোভাবে পরিচালনা করার জন্য আমাকে ডেকে নেওয়া হয়েছে। জনতা ব্যাংক বাংলাদেশের একটি বৃহত্তম সরকারি ব্যাংক। আমি যখন জনতা ব্যাংকে সাথে যুক্ত হই ওই সময় ২০১৮ সালের দিকে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার খুব কম ছিল।

সেই সময় সরকার চেয়েছিল কীভাবে তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর সার্ভিস ভালো করা যায় এবং মানুষের কাছে তা সহজে পৌঁছে দেয়া যায়। অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হচ্ছে, আমি সেখানে দুই বছরের জন্য গেলেও তারা আমাকে তার থেকে বেশি সময় রাখতে চেয়েছিল। তবে পরবর্তী বছরগুলোতে আমি খন্ডকালীন হিসেবে তাদের সাপোর্ট দিয়েছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার বেশকিছু আর্টিকেল দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। আপনি গবেষণাতেও বেশ মনোযোগী। নিজের জীবনের সাফল্য নিয়ে যদি কিছু বলতেন-
অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান: আসলে আমি যত কিছুই করি না কেন আমার মূল পেশা হচ্ছে শিক্ষকতা। শিক্ষকতা পেশার দুটো অন্যতম বৈশিষ্ট্য আছে। একটা হলো ভালো শিক্ষক হওয়া ক্লাসে ভালো শিক্ষা দেওয়া, ভালো মানুষ হওয়া। আর একটা হলো ভালো গবেষক হওয়া। আমি যখন এই ভালো শিক্ষা কার্যক্রম, ভালো গবেষক থেকে দূরে সরে যাব আমি তখন মনে করব যে নামটা বহন করছি আমি আসলে তার বৈশিষ্ট্যগুলোকে ধারণ করছি না।

যেখানে যাই না কেন যে কার্যক্রম এই করি না কেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি জনতা ব্যাংকে গিয়েছি আমি সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছি। আরও বিভিন্ন জায়গায় আমি কাজ করে দিতাম। কিন্তু আমার সবসময় মনের মধ্যে একটু খারাপ লাগছিল আরে আমি কি আমার মূল পেশা থেকে সরে যাচ্ছি কিনা।

আমার মনে আছে যখন আমি জনতা ব্যাংকে গিয়েছিলাম জনতা ব্যাংকের দুই বছর চাকরি পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি আর বৃদ্ধি করা হবে না বলা হয়েছিল। তখন ব্যাংকের এমডি সাহেব আমাকে বলল যে আপনাকে আমরা আমাদের ব্যাংকেই রাখতে চাই। আমাদের ব্যাংকের জন্য আপনাকে দরকার। তখন আমি তাকে বলেছিলাম ব্যাংক আমার পেশা না আমি শিক্ষকতা-গবেষণা পছন্দ করি। এই জন্য আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যেতে চাই।

তাই আমি বলব, শুধু আমি না যারা শিক্ষক হিসেবে নিজের পরিচয় দিতে চায় তাদেরকে কিছু জিনিস ধারণ করা উচিত। একজন ভালো শিক্ষক ভালো মানুষ, আরেকটা হলো ভালো গবেষক। এই তিনটা জিনিস যদি কেউ ধারণ না করে তবে শিক্ষকতাকে ধারণ করতে পারে না। আমার মনের মধ্যে সবসময় কাজ করে কিভাবে আমি শিক্ষকতার মূল বৈশিষ্ট্যগুলো ধরে রাখতে পারি। সেই চিন্তার আলোকে আমি গবেষণায় কাজ পরিচালনা করেছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষার বাইরে ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি অনুষদের পাঠ আর কি কি উপায়ে সমাজের উপকারে আসছে?
অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান: ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি পেশায় যারা পড়াশোনা করছে তারা আসলে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী। তারা যখন এখান থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করে, তারা সমাজের যে কোন জায়গায় গেলেই তাদের একটা কথার মূল্য আছে।

যারা গোল্ডেন জিপিএ ৫.০০ পেয়েছে এখন সে কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে পড়ে যখন গ্রামের কোন একটা দোকানে গিয়ে সে কথা বলে, গ্রামের মানুষরা তার দিকে চেয়ে থাকে। আর বলে এই ছেলেটা, এই শিক্ষিত মানুষটা আমাদের আলোয় আলোকিত করে যাবে। সুতরাং আমি বলব যে সমাজের সকল পদক্ষেপে তাদের  অবদান আছে এবং থাকবে।

আমরা মনে করি দেশের শিল্পায়নের ক্ষেত্রে বিশাল অবদান রাখছে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।আমি আরো একটা কথা বলতে চাই, আমরা যদি দেশের শিল্পায়ন করতে চাই তাহলে অবশ্যই যেমন দেশীয় প্রযুক্তি আমাদের লাগবে তেমনি দেশের মেধাগুলোকেও আমাদের লাগবে। দেশের ইঞ্জিনিয়ার গুলোকেও আমাদের লাগবে। 

আমরা যদি বিদেশ থেকে প্রযুক্তি নিয়ে আসি বা সেভাবে দক্ষ লোকজন নিয়ে আসি এটা আমাদের হয়তো সাময়িক সময়ের জন্য স্বস্তি দেবে। কিন্তু আমরা ভবিষ্যতে খুব ভালো করার জন্য আমাদের নিজেদের মেধা শক্তিকে ত্বরান্বিত করতে হবে।আমি আরেকটি কথা এড করতে চাই, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছেন তাতে কিন্তু সবচেয়ে বড় ভূমিকা প্রযুক্তিবিদদের।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সম্প্রতি একটা বিষয় দেখা যাচ্ছে যে বিসিএসে কলা, মানবিক বা ব্যবসায়ের পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থীরাও বেশ সাফল্য পাচ্ছে? বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান: আসলে আমাদের এসব ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট থেকে যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করছেন তাদের জন্য দেশে যে পরিমাণ চাকরির বাজার থাকা দরকার, সেটি কিন্তু নেই। এটা একটা জিনিস। আর দ্বিতীয়টি হলো যারা অত্যন্ত মেধাবী, টপ লেভেল মিড লেভেল তারা কিন্তু বিদেশে চলে যাচ্ছে।

আর মিড লেভেলের কিছু শিক্ষার্থী হয়তো দেশে উচ্চ বেতনে চাকরি করছেন। কিন্তু যারা এর চেয়ে নিচের লেভেল রয়েছেন তারা প্রযুক্তি বিষয়ক ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাচ্ছেন না। তখন কিন্তু তারা বিসিএস দিয়ে তাদের মেধাশক্তির কারণে ফরেন সার্ভিসে চলে যাচ্ছেন। এই ফরেন সার্ভিসের জন্য এক সময় তৈরি হয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনশিপ, পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন। আজকে সেই ফরেন ক্যাডারে ঢুকলে দেখা যায়, ইঞ্জিনিয়াররা সেখানে বড় বড় পজিশনে বসে আছেন।

আরও পড়ুন: ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে না গিয়ে কেন বিসিএসে তরুণরা?

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি অনুষদের শিক্ষার্থীদের আল্টিমেট গোল আসলে কি হওয়া উচিৎ?
অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান: আমি যেটা বলবো ইঞ্জিনিয়ার টেকনোলজি শুধু না, আমি চাই যে প্রতিটা শিক্ষার্থীর একজন ভালো মানুষ হতে হবে। মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। আমি এই জিনিসগুলোই প্রতি শিক্ষিত মানুষের থেকে আশা করি। কারণ একজন মানুষ শিক্ষিত হয়ে যখন সে মানুষকে শ্রদ্ধা করবে, তখনই সে আসল শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে।

ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজির যেসব শিক্ষার্থীরা রয়েছো তোমরা তোমাদের মেধার জোরে এই ডিপার্টমেন্টগুলোতে পড়াশোনা করছো। তোমরা ভালো জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করবা। ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করবা। প্রতিটি মানুষকে শ্রদ্ধা করবা এবং আমি বলতে চাই যে বাবা-মার প্রতি তোমাদের ভালোবাসা থাকবে।

বাবা-মা তোমাদের কাছে একটি অমূল্য সম্পদ। সেটাকে তোমরা শ্রদ্ধার সাথে ধারণ করবা। আর সর্বোপরি তোমার মাতৃভূমি তোমার মায়ের জন্মস্থান তোমার জন্মস্থান তোমরাই দেশকে ভালোবাসবা। এই দেশের ভালোর জন্য তোমাদের যা কিছু করতে হয় তোমরা মন প্রাণ দিয়ে সেটা করার চেষ্টা করবা। যে মানুষগুলোর টাকায় তোমরা পড়াশোনা করছো তাদের কিছুটা হলেও ঋণ পরিশোধ করার চেষ্টা করবা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এ অনুষদের শিক্ষার্থীদের প্রতি আপনার কোনো বিশেষ বার্তা থাকবে কিনা
অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান: শুধু শিক্ষার্থীদেরকে বলবো টেকনোলজি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে যারা পড়াশোনা করছো তোমরা যারা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাচ্ছো, তোমরা দেশে ফিরে আসবা। দেশ ভালো থাকলে তুমি ভালো থাকবা। যখন তোমার দেশ বাংলাদেশ খারাপ অবস্থানে যাবে, বিদেশের মানুষগুলো তখন তোমাকে খারাপভাবে দেখার চেষ্টা করবে।


সর্বশেষ সংবাদ