পান্তার নতুন গুণ: কমাতে পারে রক্তে শর্করার মাত্রা

পান্তা ভাত ও ভর্তা
পান্তা ভাত ও ভর্তা  © সংগৃহীত

পহেলা বৈশাখের সকালে পান্তা খাওয়া শহুরে সংস্কৃতির একটি প্রথায় পরিণত হয়েছে। এটি তাদের কাছে আনন্দ উদযাপনের অনুষঙ্গ মাত্র। তবে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের বড় অংশের প্রাত্যহিক খাবার পান্তা।  তীব্র গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি পান্তা ভাত শরীরে শক্তিও বাড়ায়। সেই সাথে বাড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। পুষ্টিকর  এই খাবারের নতুন গুণ উদঘাটন করেছেন যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক।

নতুন  এ গবেষণায়, গবেষকদল  পান্তাভাতে নতুন কিছু অণুপুষ্টি উপাদানের সন্ধান পেয়েছে। এর মধ্যে আছে লৌহ, জিংক, কপার, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেশিয়াম, বোরন ও পটাশিয়াম, যা সাধারণ ভাতের তুলনায় অনেক বেশি ছিল।

যেখানে প্রতি আড়াই গ্রাম সাধারণ ভাতে শূন্য দশমিক ৫ মাইক্রোগ্রাম লৌহ থাকে, সেখানে একই পরিমাণ পান্তায় পাওয়া যায় প্রায় ১ মাইক্রোগ্রাম। ক্যালসিয়ামের মাত্রা সাধারণ ভাতে শূন্য দশমিক ১০ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া গেলেও পান্তায় তা শূন্য দশমিক ৪০ মাইক্রোগ্রামের বেশি পাওয়া গেছে।

গবেষণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পান্তা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কম হারে বাড়ে। যুক্তরাজ্যের মিডলসব্রো শহরে থাকা বাঙালি পরিবারে ১৩ সদস্যকে নিয়ে এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে। এতে ব্যবহৃত হয়েছে সাদা বাসমতী চাল। রাতে এ চালের ভাতে পানি দিয়ে প্রায় ১২ ঘণ্টার জন্য রেখে দেওয়া হতো দুটি ভিন্ন তাপমাত্রায়-২০ ও ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ দুই ধরনের ভাতে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ ও অণুপুষ্টির উপাদানের মাত্রা দেখা হয়। খেতে দেওয়া হয় গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের এবং খাওয়ার পর তাঁদের রক্তে শর্করা বৃদ্ধির মাত্রা দেখা হয়।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকী ফুড অ্যান্ড হিউম্যানিটি–তে পান্তাভাত নিয়ে নতুন এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বরে। গবেষণা দলের নেতৃত্ব দেন যুক্তরাজ্যের লিভারপুল জন মুরস ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ফার্মাসি অ্যান্ড বায়োমলিকুলার সায়েন্সেসের অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন সরকার। গবেষণায় যুক্ত ছিলেন যুক্তরাজ্যের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আট শিক্ষক ও শিক্ষার্থী।

অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন সরকার বলেন, এবারের গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল অপুষ্টির সঙ্গে লড়াইয়ে আসলে এ খাবার কতটুকু উপযোগী, তা খুঁজে দেখা। গবেষণায় পান্তার অণুজৈবিক উপাদান, পুষ্টির উপাদান এবং কম শর্করার খাদ্য হিসেবে এর উপযোগিতা যাচাই করা হয়েছে। এসব একাধিক পুষ্টি উপাদান খুঁজতে পান্তাভাতে থাকা অণুজীবের জিনগত রহস্য উন্মোচন (জিনোম সিকোয়েন্সিং) করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক খালেদা ইসলাম বলেন, ‘এ গবেষণায় অভিনবত্ব আছে। আরও বিস্তৃত পরিসরে এটি করা হলে বাঙালির পান্তার গুণাগুণ নিয়ে বিশ্ববাসী জানতে পারবে। সে ক্ষেত্রে শুধু বাঙালি নয়, অন্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষকেও গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন সরকার বলেন, ‘আমরা সাধারণ ভাত এবং পান্তাভাতের তুলনামূলক পরীক্ষা করে দেখেছি, পান্তায় নানা ধরনের বিপুল সংখ্যায় উপকারী অণুজীবের সন্ধান পেতে থাকি। সাধারণ ভাতের চেয়ে পান্তায় ১০ গুণ বা তারও বেশি উপকারী অণুজীব তৈরি হতে দেখি।’

এ গবেষণার দ্বিতীয় বড় দিক হলো পান্তায় একাধিক অণুপুষ্টির সন্ধান। এর মধ্যে আছে লৌহ, জিংক, কপার, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেশিয়াম, বোরন ও পটাশিয়াম, যা সাধারণ ভাতের তুলনায় অনেক বেশি ছিল।

যেখানে প্রতি আড়াই গ্রাম সাধারণ ভাতে শূন্য দশমিক ৫ মাইক্রোগ্রাম লৌহ থাকে, সেখানে একই পরিমাণ পান্তায় পাওয়া যায় প্রায় ১ মাইক্রোগ্রাম। ক্যালসিয়ামের মাত্রা সাধারণ ভাতে শূন্য দশমিক ১০ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া গেলেও পান্তায় তা শূন্য দশমিক ৪০ মাইক্রোগ্রামের বেশি পাওয়া গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মিহির লাল সাহা বলেন, ‘ভাতে যে আঁশ থাকে, সেটা সাধারণ রান্না করা ভাতে অবমুক্ত হয় না। কিন্তু পানি দিয়ে রাখার ফলে যখন গাজন প্রক্রিয়া সংঘটিত হয়, তখন অণুজীবের মাধ্যমে এসব আঁশ দ্রুত অবমুক্ত হয় এবং যার ফলে অণুপুষ্টির কণার বিপুল সমাহার হতে পারে। নতুন গবেষণা আমাদের এমন নতুন তথ্যের সন্ধান দিল। এটি খুব তাৎপর্যপূর্ণ।’


সর্বশেষ সংবাদ