এমআইটিতে গবেষণায় আলোর গতিপথ নিয়ন্ত্রণে সাফল্য পান বাংলাদেশি তরুণী
- টিডিসি অনলাইন
- প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০১৮, ১০:৩৬ PM , আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৮, ১০:৫২ PM
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) গবেষণারত আছেন বাংলাদেশি তাকিয়ান ফখরুল। সম্প্রতি তিনি এক ধরনের মেটেরিয়াল ডিজাইন করেছেন যা সিলিকন চিপের মধ্য দিয়ে আলোকে প্রবাহিত করতে সক্ষম। বুধবার এমআইটির ওয়েবসাইটে তাকিয়ানকে নিয়ে প্রকাশিত একটি ফিচার প্রতিবেদনে এ সফলতার কথা বলা হয়।
বর্তমানে তাকিয়ান এমআইটির অধ্যাপক ক্যারোলিন রসের সাথে গবেষণা করছেন। তাঁর গবেষণার বিষয়বস্তু হল- আলোর তড়িৎ প্রবাহে গারনেটস ( একধরনের গোলাপি স্ফটিক কিউব আকৃতির বস্তু) ব্যবহারের সমস্যাকে কিভাবে ফোটোনিকস (Photonics) ব্যবহার করে দূর করা যায়
তাকিয়ান বলেন, কম্পিউটারের ভিতরে কপারের তৈরি তারের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য কম্পিউটার চিপে এবং এর অন্যান্য অংশে চলাচল করে থাকে। তবে বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে কম্পিউটারকে আরও বেশী দ্রুত গতির হতে হবে। এটি করতে হলে বিজ্ঞানীদেরকে এমন কিছু বিষয় ডিজাইন করতে হবে যার মাধ্যমে তথ্য আরও বেশী দ্রুত গতিতে চলাচল করতে পারবে এবং একই সাথে কম বিদ্যুৎ খরচ করবে।তিনি বলেন, সমস্যা হলো ইলেকট্রন যখন বস্তুগত তারের মাধ্যমে চলাচল করে তখন এর গতি অনেকটাই ধীর হয়ে যায়। তাহলে বস্তুগত তারের চাইতে ইলেকট্রনকে কিসে দ্রুত গতিতে চলাচল করতে সহায়তা করবে? এর উত্তর হলো ‘আলোক শক্তি।’
সাধারণ তারের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক তথ্য একটি মাত্র পথে চলাচল করতে সক্ষম। আর অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে এটি বিভিন্ন মাধ্যমে চলাচল করতে পারে সুতরাং কোনও প্রকার বাঁধা-বিপত্তি ছাড়াই ব্যান্ডউইথ তার যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে পারবে। বিভিন্ন নেটওয়ার্কিং প্রকল্পে ইতিমধ্যেই অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার বেড়েছে আর এখন সময় হয়েছে কম্পিউটারের ভেতরকার তথ্য আদান প্রদানের জন্য অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করার প্রযুক্তি আবিষ্কারের।
তাকিয়ানের গবেষণার বিষয়বস্তুর মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হচ্ছে- অপটিক্যাল আইসোলেটরস (অন্তরক) । এটি লেজার ব্যবহৃত একটি সিলিকন ফোটোনিকস যার মধ্যমে আলো একমুখী পথ দিয়ে চলাচল করতে সক্ষম। তিনি বলেন, এটি আলোকে সামনের দিকে চলতে বাধ্য করবে কিন্তু উল্টো দিকে ফিরে আসতে বাধা দিবে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা লেজারের ভেতরে উল্টোদিকে আলো ফিরে আসা মানে একে অস্থিতিশীল করে দেয়া। ফলে এর কার্যক্ষমতা কমে যায়।
এজন্য তাকিয়ান আয়রন গারনেটের ব্যবহার করতে চান, যা একটি রাসায়নিক বিকল্প যেটি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা নতুন ধরনের বস্তু তৈরী করতে সক্ষম হন। স্ফটিক প্রকৃতি গারনেট আলোকে সঠিক ভাবেই কোনও বাঁধা ছাড়া সামনে চলতে বাধ্য করতে পারে।
তিনি বলেন, আলো যখন গারনেটের ভেতর দিয়ে চলাচল করে এটি তখন ভিন্ন ভিন্ন পথে চলাচল না করে একমুখী হয়ে চলাচল করে।
তাকিয়ান গারনেটের ব্যবহারের মাধ্যমে আলোর এই একমুখী চলাচল নিশ্চিত করতে চান। তবে ব্যাপারটি অতোটা সহজ কোনও বিষয় নয়।
তাকিয়ান এখন এমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ম্যাটারিয়াল সাইন্সে’ পিএইচডি গবেষণার চতুর্থ বর্ষের একজন ছাত্রী। তিনি বাংলাদেশের বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্রী ছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন বুয়েটের মেটেরিয়াল সাইন্স বিষয়ের একজন অধ্যাপক।
তাকিয়ান বলেন, আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন বাবা ছিলেন যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ের ছাত্র। তখন তিনি আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ল্যাবে নিয়ে যেতেন। ওখানে গিয়ে কৌতূহলে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে বিভিন্ন বস্তু দেখতে চাইতাম । কখনো বাবার কাজ মনোযোগ দিয়ে দেখতাম। আর নানা প্রশ্ন করতাম।
তিনি বলেন, ‘আমি এবং বাবা প্রায় সময়ই বিভিন্ন মেটেরিয়াল (বস্তু) ও ভবিষ্যত প্রযুক্তিতে সেগুলোর প্রভাব নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতাম। বাবা মেয়ের ইচ্ছা অনুযায়ী মেটেরিয়াল সাইন্স বিষয়ে অধ্যয়ন করতে উৎসাহ যোগান।
পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর তাকিয়ান তার মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসতে চান। আর এখানকার শিক্ষার্থীদেরকে মেটেরিয়াল বিজ্ঞানে শিক্ষা দিতে চান। তিনি মেটেরিয়াল বিজ্ঞান বিষয়ে তার মাতৃভূমিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান।
তাকিয়ান এ সম্পর্কে বলেন, ‘আমি এখানে যে অভিজ্ঞতা নিয়েছি তা আমার মাতৃভূমিতে নিয়ে যেতে চাই। আশা করি আমি এমআইটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের সাথে একটা সেতুবন্ধন তৈরী করতে পারবো।’