ফসল উৎপাদনে মাটির বিকল্প কোকো-পিট

মাটির বুক চিরে বেড়ে উঠবে গাছ-তরুলতা, এমন ভাবনা থেকে সরে আসছেন আধুনিক মৃত্তিকা ও কৃষি গবেষকগণ।  চাষাবাদের জন্য বর্তমানে মাটির বিকল্প হিসেবে প্রায় সব দেশেই কম বেশি ব্যবহার হচ্ছে কোকো-পিট।  বিশেষ করে শহরের এলাকা গুলোতে, যেখানে পর্যাপ্ত জায়গা এবং মাটির অভাব সেখানে চাষাবাদের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে এই কোকো পিট।  নারিকেলের ছোব্রা বা কয়ার থেকে তৈরিকৃত কোকো পিট বিশেষ গুনাবলী সম্পন্ন হওয়ায় ফলনও বাড়ে মাটি থেকে কয়েক গুন যা কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করেছে। 

প্রয়োজনীয় পানি ধারণ ক্ষমতা থাকায় কোকো পিট ব্যবহারে গাছের শেকড় বা মূলে পঁচন ধরে না । দ্রুত পানি ও বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক দ্বারা গাছ আক্রান্ত হয় না।  ফলে রাসায়নিক সারের ব্যবহারও কমে যাবে কয়েক গুন।  কোকো পিট মাটির ততুলনায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়ায় ঘর, বারান্দা, ছাদ নোংরা হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না।  কোকো পিট সঠিক পরিমাণ পিএইচ মান ধরে রাখতে সক্ষম।  হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সাধারণত এ মান ৫ দশমিক ৮ থেকে ৬ দশমিক ৫।  এ পদ্ধতিতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বেশ উন্নত হওয়ায় গাছের মৃত্যুহারও তুলনামূলকভাবে কম।

এটি হালকা ও ঝুরঝুরে হবার কারণে সহজে মাটিতে ভেতরে গাছের জন্য খাদ্য তৈরীতে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। ফলে গাছের শেকড় তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায় এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করে গাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে।

কোকো পিটে রাসায়নিক সার মেশানো ছাড়াও ভার্মি কম্পোস্ট বা জৈব সার মিশিয়ে চাষ করা যায়।  ফলে কোকো পিট ব্যবহার করে রাসায়নিক মুক্ত জৈব ফল-মূল, সবজি ও বিভিন্ন ধরনের গাছ উৎপাদন করা সম্ভব।  হাইড্রোপনিক বাগানের মালিক এবং ছাদ বাগানে যাদের আগ্রহ একটু বেশি, তারা মাটির পরিবর্তে কোকো পিটের ব্যবহার তাদের পছন্দের তালিকার প্রথমে রাখতে পারেন।  কোকো পিট মাটির তুলনায় হালকা হওয়ায় ছাদের উপর বেশি চাপ পড়ে না।  টবে বা পাত্রে সহজে বহন করা যায় এবং ব্যবহারও করা যায় দীর্ঘদিন।

কোকো পিট উদ্ভিদের মূল উন্নয়নের জন্য একটি চমৎকার স্তর এবং গাছ বা চারা রোপণ করার সময় কোনো এজেন্ট প্রয়োজন হলে জৈব সারের সঙ্গে কোকো পিটের সংমিশ্রনে একটি উৎপাদন মাধ্যম হিসেবে তৈরি করে সরাসরি চারা তৈরি করা যেতে পারে।  

বর্তমানে লোকাল কোয়ালিটি ও এক্সপোর্ট কোয়ালিটি এই দুই ধরণের কোকো পিট বিদ্যমান।  লোকাল কোয়ালিটির প্রতিটি কোকো পিট লোকাল ব্লকের ওজন হয় সাধারণত ৪-৫ কেজি এবং ভেজা অবস্থায় সর্বোচ্চ ২৫-৪০ কেজি হয়ে থাকে।  অন্যদিকে এক্সপোর্ট কোয়ালিটির প্রতিটি কোকো পিট ব্লকের ওজন হয় কমবেশি ২ কেজি ৫ গ্রাম।  পানিতে ভেজানোর পর ওজন হয় ১৫-২০ কেজি।  লোকাল কোয়ালিটির প্রতিটি কোকো পিটের খুচরা বিক্রয়মূল্য প্রায় ৩০০ টাকা।  এক্সপোর্ট কোয়ালিটির প্রতিটি কোকো পিটের খুচরা বিক্রয়মূল্য প্রায় ২০০ টাকা।

তাই নগরায়নের এই যুগে আধুনিক নগরকৃষির সাথে তাল মিলিয়ে মাটির বিকল্প হিসেবে কোকো পিট অচিরেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন বয়ে আনবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা।  


সর্বশেষ সংবাদ