রকমারি সবজির চাষ হবে সূর্যের আলো ছাড়াই

শেকৃবির পরীক্ষাগারে লাইটের আলোতে কিটনাশক মুক্ত সবজির চারাগাছ
শেকৃবির পরীক্ষাগারে লাইটের আলোতে কিটনাশক মুক্ত সবজির চারাগাছ  © টিডিসি ফটো

এলইডি লাইটের আলো ব্যবহার করে ঘরের মধ্যে কিটনাশক মুক্ত সবজি উৎপাদন নিয়ে গবেষণা করছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) গবেষকরা। ফসলের ক্ষেত কিংবা বাড়ির ছাদ নয়, ঘরের ভিতরেই হবে হরেক রকমের সবজির চাষ। সূর্যের আলো ছাড়াই আপনার চোখের সামনে ঘরের এক কোণায় প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠবে পালং, পুঁইশাক, ঢেরস, মরিচ, বেগুন, টমেটো, চেরি,  লেটুস, ক্যাপসিকাম, অ্যাসপারাগাসসহ আপনার পছন্দের সবজিগুলো। রুপকথার গল্প কিংবা কল্পনা নয় সূর্যের আলোর বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন বর্ণের এলইডি লাইটের আলো ব্যবহার করে ঘরের মধ্যে কিটনাশক মুক্ত সবজি উৎপাদন নিয়ে গবেষণা করছেন শেকৃবির গবেষকরা। এই গবেষণা পদ্ধতিটির নাম দেয়া হয়েছে ‘ইনডোর ভেজিটেবল প্রডাকশন’।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ ভবনের ছাদের ছোট্ট এক কক্ষে দীর্ঘদিন যাবত ধরে চলছে এই গবেষণা। কক্ষটিতে ককশিটের তৈরী ছোট ছোট ঘরে স্থান পেয়েছে টবে লাগানো দেশি-বিদেশি হরেক রকমের সবজি। তার ওপরে স্ট্যান্ডের সাহায্যে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে লাল, নীল, হলুদ ও সবুজ রঙের এলইডি লাইট। সবজি চাষের এমন বর্ণিল আলো যে কারো নজর কাড়বে খুব সহজেই। এসব আলোর নির্দিষ্ট মানের তীব্রতার সাহায্যে সূর্যের আলোর চাহিদা পূরণ করে আবাদ করা হচ্ছে সবজিগুলোর।

গবেষকরা জনান, ‘প্রায় তিন বছর ধরে গবেষণার পরে এসেছে কাঙ্খিত সফলতা। অতিরিক্ত পরিশ্রম বিহীন অত্যন্ত সহজ ও লাভজনক এই পদ্ধতিতে সবজি গুলোকে সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রায় ১২-১৪ ঘন্টা আলো সরবরাহ করতে হয়। তবে নিয়মিত পানি দেবার মাধ্যমে খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন ভাবেই মাটির আর্দ্রতা শুকিয়ে না যায়। এটি সম্পূর্ণ ভাবে একটি জৈব পদ্ধতি হওয়ায় টবের মাটিতে বাড়তি কোন সার প্রয়োগ না করে পরিমাণমতো জৈব সার ব্যবহার করতে হবে।’

তবে এই পদ্ধতিতে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হল সবজিগুলোতে পোকামাকড় কিংবা রোগবালাইয়ের আক্রমণ না থাকায় সূর্যের আলোতে সবজিগুলো যতটা না তরতাজা হয়, তার চেয়ে বেশি তরতাজা হয়ে বেড়ে ওঠে কৃত্রিম আলোতে। তাই সবজিগুলোতে কীটনাশক ও পেস্টিসাইড প্রয়োগেরও দরকার পড়ে না।

শেকৃবির পরীক্ষাগারে লাইটের আলোতে কিটনাশক মুক্ত সবজি উৎপাদন

 

গবেষকদলের প্রধান ও শেকৃবির উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ফ ম জামাল উদ্দিন বলেন, ‘উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে আলোর তীব্রতা ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ইচ্ছামতো গাছের আকার নির্ধারণ করা যায়। চাইলেই যেকোনো সময় ফুল-ফল ধরানোও সম্ভব।

ড. জামাল বলেন, ‘রাজধানীর সবজির চাহিদার প্রায় পুরোটাই মেটানো হয় গ্রামাঞ্চলের উৎপাদন দিয়ে। এতে করে পরিবহনের সময় অনেক সবজি নষ্টের পাশাপাশি গুনগত মানও কমে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে আমরা যদি রাজধানীতে এই পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করি তাহলে মাঠে উৎপাদিত সবজির ওপর চাপ কমিয়ে শহরভিত্তিক কম খরচে জৈব ও স্বাস্থ্যকর সবজি উৎপাদন করা সম্ভব।

পারিবারিকভাবে এই পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদনের সম্ভাবনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেকোনো বাসার ছোট একটি কক্ষ, যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না বা অব্যবহৃত কক্ষে এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে পুরো পরিবারের চাহিদা মেটানো সম্ভব। ’
গবেষকদের মতে, এই পদ্ধতি অনেকটা শীত প্রধান দেশ গুলোয় চাষ হওয়া গ্রীন হাউজ পদ্ধতির কাছাকাছি হলেও ক্রমহ্রাসমান আবাদি জমি ও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে বাড়তি জনসংখ্যার জন্য সবজির চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মানুষ যেখানে মাঠ বা বাগানে সবজি বাগান দেখে অভ্যস্ত, সেখানে ঘরের ভিতরে এমন চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারেন অনেক সবজি প্রেমীরাও।


সর্বশেষ সংবাদ