মূল্যায়নের অভাবে রোবটিক্সের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে তরুণরা

মূল্যায়নের অভাবে রোবটিক্সের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে তরুণরা
মূল্যায়নের অভাবে রোবটিক্সের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে তরুণরা

উন্নত বিশ্বের দেশগুলো বিংশ শতাব্দীতে এসে প্রযুক্তির যে উন্মাদনায় মেতে উঠেছে সেখানে রয়েছে রোবটিক্স, মেকাট্রনিক্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, আইওটি, ন্যানো টেকনোলোজি এবং বিগ ডাটার মত সব অ্যাডভান্স প্রযুক্তির গ্লোবাল কম্পিটিশন।

তবে সে ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের ভবিষ্যৎ কর্ণধর হল আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মরা এবং এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তথ্য ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে তারা।

প্রতি বছর তারা নিজেদের প্রচেষ্টায় নুতন নুতন আশা ও সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে আসছে এই সব সেক্টরগুলোতে। শুধু তাই নয় খুব অল্প সময়ে সেই সব উন্নত বিশ্বের দেশগুলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে তারা।

নাসা, গুগল, মাইক্রোসফটের মত জায়গাগুলোতে কাজ করে সারা বিশ্বের কাছে লাল সবুজের পতাকা তুলে ধরছেন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বেশ সম্মান ও সুনাম অর্জন করছেন। কিন্তু দেশে পাচ্ছে না তারা সঠিক মূল্যায়ন।

যে কারণের হারিয়ে যাচ্ছে দেশের অভিজ্ঞ তরুণরা:

 যে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের জন্য এ দেশের তরুণ প্রজন্ম ক্যারিয়ারের চ্যালেঞ্জ হিসাবে বেছে নিচ্ছে রোবটিক্স ও মেকাট্রনিক্সের মত আডভান্স সব সাবজেক্ট। কিন্তু সেই দেশেই এসব সাবজেক্টগুলোর জন্য নেই কোন নির্দিষ্ট সরকারি চাকরির সুযোগ।

 যথেষ্ট মেধা শক্তি থাকা সত্ত্বেও তারা এই সেক্টরগুলোতে কাজ করার জন্য পাচ্ছে না সরকারিভাবে অ্যাডভান্স ল্যাব এবং রিসার্চ সেন্টার।

 উচ্চ পর্যায়ে গবেষণার জন্য পাচ্ছে না কোন দক্ষ ও অভিজ্ঞ গবেষক, বিজ্ঞানী, উপদেষ্টা, শিক্ষক ও প্রশিক্ষক। যারা আছেন তাদের অধিকাংশই বিদেশ আরাম আয়েসে জীবন কাটাচ্ছেন আর বাকিরা ও বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।

 ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু ল্যাব, গবেষণা কেন্দ্র, ট্রেনিং সেন্টার থাকলেও সেখানে নেই যথেষ্ট পরিমাণ অবকাঠামোর অভাব রয়েছে।

 উদ্ভাবনী ও গবেষণার প্রকল্পগুলোর জন্য তারা বিদেশে ঊচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেলেও দেশে পাচ্ছে না এই ধরনের কোন বিশেষ সুযোগ-সুবিধা এবং বাস্তবায়িত হচ্ছে না তাদের গবেষণার প্রকল্পগুলো।

 দেশে রোবটিক্স, অ্যাম্বেডেড সিস্টেম, অটোমেশন ও আইসি ফ্যাব্রিকেশনের জন্য নেই কোন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান। যে কারণে চায়না, জাপান, কোরিয়া ও ইউরোপের দেশগুলো থেকে আমদানি করতে হচ্ছে বিভিন্ন প্রোডাক্ট। যা অনেক ব্যয়বহুল একটি ব্যাপার।

 সরকারি কিছু প্রকল্পে উদ্ভাবনী ও আইডিয়া ফান্ড থাকলেও সে গুলো পাচ্ছে না সকলে। সেখানেও রয়েছে কিছু প্রতিবন্ধকতা। আবার এই ফান্ডগুলোও অনেকের গবেষণা বা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যথেষ্ট নয়।

এছাড়া এই সব বিষয়ে যারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন তাদের অধিকাংশই নানা ধরনের পারিবারিক, আর্থিক, সামাজিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে হতাশায় ভুগছেন।

অনেকেই অন্য সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ছেন নিজের সমস্যা ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে। কিন্তু এখনও অনেকেই আছেন যারা আশা নিয়ে প্রতিনিয়ত নানা রকম প্রতিবন্ধতা কাটিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন এই সেক্টরগুলোতে।

নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন পরবর্তী প্রজন্মদের কারণ তারা মনে করেন যোগ্যতা ও মেধার মূল্যায়ন কোন না কোন এক দিন হবে এবং তাদের নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর।

অভিজ্ঞ তরুণ মেধাবীদের সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে সবাই এগিয়ে আসলে তাদের স্বপ্ন পূরণের পথ হবে সুগম।

লেখক: জিমি মজুমদার, প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ অ্যাডভান্স রোবটিক্স রিসার্চ সেন্টার এবং তরুণ প্রযুক্তিবিদ ও গবেষণা প্রকল্প সহকারি, নাসা। 


সর্বশেষ সংবাদ