নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর নতুন দুই প্রাণী আবিষ্কার
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২০ মে ২০১৮, ০৯:২৫ AM , আপডেট: ২০ মে ২০১৮, ০৯:২৫ AM
বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. মো. বেলাল হোসেনের হাত ধরে এবার প্রাণীজগতে যোগ হলো আরো দুই নতুন অমেরুদন্ডী প্রাণী। তিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) মৎস্য ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি বিজ্ঞানী যিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্পূর্ণ নতুন এ প্রাণীর সন্ধান দিলেন।
নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকা থেকে পাওয়া ‘নিউমেনিয়া নোবিপ্রবিয়া’ ও ‘অ্যাররেনারুস স্মিটি’ নামে নতুন দুটি অমেরুদন্ডী প্রাণীর মধ্যে ‘নিউমেনিয়া নোবিপ্রবিয়া’ নামটি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) এর নামে নামকরণ করা হয়। আর ‘অ্যাররেনারুস স্মিটি’ নামক অমেরুদন্ডী প্রাণীটির নামকরণ করা হয় নেদারল্যান্ডের বিখ্যাত একারোলজিষ্ট হ্যারি স্মিথ এর নামে।
বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর হাত ধরে এবার প্রাণীজগতে যোগ হলো আরো দুই নতুন অমেরুদন্ডী প্রাণী Neumania nobiprobia এবং Arrenurus smiti (নিউমেনিয়া নোবিপ্রবিয়া ও অ্যাররেনারুস স্মিটি)। এর মধ্যে ‘নিউমেনিয়া নোবিপ্রবিয়া’ নামটি দেশের স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) এর নামে নামকরণ করা হয়। আর ‘অ্যাররেনারুস স্মিটি’ নামক অমেরুদন্ডী প্রাণীটির নামকরণ করা হয় নেদারল্যান্ডের বিখ্যাত একারোলজিষ্ট হ্যারি স্মিথ এর নামে।
নতুন এ দুটি প্রাণীর সহআবিষ্কারক হলেন নোবিপ্রবি মৎস্য ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. বেলাল হোসেন। দেশের সীমানা পেরিয়ে তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি বিজ্ঞানী যিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্পূর্ণ নতুন এ প্রাণীর সন্ধান দিলেন। এর মাধ্যমে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি করেন খ্যাতিমান এ সমুদ্র বিজ্ঞানী।
জানা গেছে, গত বছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ড. বেলাল হোসেন নোয়াখালীর বিভিন্ন পুকুর, খাল এবং নদী থেকে মাইটসের নমুনা সংগ্রহ করেন। এতে সঙ্গী হন তারই ছাত্র নোবিপ্রবি মৎস্য ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের মো. সাইফুল ইসলাম। উপক‚লীয় জেলা নোয়াখালী হতে সংগৃহিত নমুনা প্রথমে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবে সনাক্তকরণ করা হয়। পরে ফলাফলের জন্য মধ্য ইউরোপের দেশ মন্টেনিগ্রতে গবেষক ড. ভøাদিমির এর কাছে পাঠানো হয়।
ড. ভ্লাদিমির নমুনাগুলো চুড়ান্তভাবে সনাক্ত করেন ও সিদ্ধান্তে উপনীত হন। মাইটস দেখতে কিছুটা মাকোড়সার মত, এরা প্রাণীজগতের আর্থোপোড়া পর্বের একারিয়া বর্গের অন্তর্গত। ড. বেলাল ও তার গবেষকদলের আবিষ্কৃত প্রাণী দুটি উক্ত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন তাই এরাও আর্থোপোড়া পর্বের একারিয়া বর্গের অন্তর্গত প্রাণী। এদের আকার ২/৩ মিলিমিটার, দেখতে হাল্কা লাল ও হলুদ বর্ণের হয়। দুটি শুঁড় ছাড়াও এদের চার জোড়া সন্তরণ পা থাকে। এরা সাধারণত পুকুর, নদী বা খালের পানির উপরে স্তরে ভাসমান উদ্ভিদের সাথে ঝুলে থাকে। খাবার হিসেবে উদ্ভিদকণা গ্রহণ করে। তবে লার্ভা অবস্থায় এরা অন্য জলজ প্রাণীর দেহে পরজীবী হিসেবে বাস করে এবং ওই প্রাণী থেকেই খাবার সংগ্রহের কাজ করে থাকে। এরা জীবজগতের খাদ্যচক্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রাণীজগতে সম্পূর্ণ নতুন এ দুই প্রজাতির আবিষ্কারের পেছনে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. বেলাল এর সঙ্গে সহগবেষক ছিলেন একারলজিষ্ট ড. ভ্লাদিমির, ভারতের টাপাস, নোবিপ্রবি’র কৃতি ছাত্র মো. সাইফুল ইসলাম এবং পোল্যান্ডের ড. আন্দ্রেজেঝ। চারটি ভিন্ন ভিন্ন দেশের পাঁচজন গবেষকের সমন্বিত গবেষণার সাফল্য হলো সম্পূর্ণ নতুন দুটি প্রজাতির আবিষ্কার।
প্রজাতি দুটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের জন্যে গবেষণার ফলাফল লন্ডন ও নিউজিল্যান্ড থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী Systematics and Applied Acarology-তে পাঠান গবেষক দল। যা মে মাসের ১৫ তারিখে “First records of water mites from Bangladesh (Acari, Hydrachnidia) with description of two new species by Vladimir Pesic, Mohammad Belal Hossain, Tapas Chatterjee, Md. Saiful Islam and Andrezej Zawal” শিরোনামে প্রকাশিত হয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে।
ড. বেলাল বলেন, প্রাণীজগতের প্রতিটি প্রাণীই ইকো সিস্টেমে তথা খাদ্যচক্রে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা রাখে। এদের একটির অনুপস্থিতিতে খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে পড়ে, ফলে ইকো সিস্টেম তার স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে পারে না। তিনি বলেন, আমাদের জলরাশি অত্যন্ত জীব বৈচিত্রপূর্ণ। গবেষণার অপ্রতুলতা, মানবসৃষ্ট দূষন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবিষ্কারের আগেই অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ থেকে উত্তরণ করা সম্ভব।
ড. বেলাল হোসেন চৌদ্দগ্রাম থানার কেন্দুয়া গ্রামের মৃত আব্দুছ ছোবাহান ভূঁঞা ও দেলোয়ারা বেগমের প্রথম পুত্র। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স এন্ড ফিশারিজ বিভাগে স্নাতক, যুক্তরাজ্যের হাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং ব্্রুনাই দারুসসালাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। স¤প্রতি তিনি অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন।
ইরফান