কারখানার গাড়ি বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়া হয়েছে : উপদেষ্টা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৫, ১০:৩৬ PM , আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৫, ১০:৩৬ PM

বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনরত টিএনজেড অ্যাপারেল লিমিটেডের শ্রমিকদের বেতন ও ভাতা কোম্পানির কারখানার গাড়ি বিক্রি করে পরিশোধ করা হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন আজ বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আরও তিনটি কারখানার শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য ১২ দশমিক ২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, '২৫ মার্চের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শ্রমিকদের অসন্তোষ নিরসনে টিএনজেড গ্রুপের অ্যাপারেল ইকো লিমিটেডের গাড়ি বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন ও ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে।' তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা এর আগে ঘটেছে কিনা, তা আমি জানি না। মালিক অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন।'
তিনটি পোশাক কারখানা সম্পর্কে শ্রম উপদেষ্টা জানান, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় তহবিলের জরুরি হিসাব থেকে রোয়ার ফ্যাশনের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে ১ দশমিক ২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে, এই উদ্যোগ অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা দিতে সম্প্রসারিত করা হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এছাড়া, শ্রম উপদেষ্টা জানান, মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ ব্যাংক মাহমুদ গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন ও ভাতা পরিশোধে ১১ কোটি টাকা নগদ সহায়তা দিয়েছে।
স্টাইলক্রাফ্ট ও ইয়ংগোনস বিডি লিমিটেডের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, এটি শ্রম মন্ত্রণালয়ে কোম্পানির মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে নিষ্পত্তি হয়েছে।
শিল্প পুলিশের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনো ১২২টি তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল কারখানা তাদের শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধ করেনি।
বর্তমানে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) এবং বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) অধীনে ২ হাজার ৮৯০টি কারখানা পরিচালিত হচ্ছে।
শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, এর মধ্যে ২ হাজার ৭৬৮টি কারখানা তাদের শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধ করেছে। তবে, অবশিষ্ট ১২২টি কারখানার মধ্যে ৩০টি এখনো জানুয়ারি ও তার আগের মাসের বেতন দেয়নি।
যেসব প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের বেতন পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত।
তিনি বলেন, 'আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যাতে সবাই তাদের প্রাপ্য বেতন-ভাতা পায়। আজ বা আগামীকাল সকাল থেকে যারা বেতন দিচ্ছে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করব। প্রায় সব সমস্যারই সমাধান হয়ে গেছে।'
প্রিমিয়ার ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ
এদিকে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, প্রিমিয়ার ব্যাংক বিক্ষুব্ধ পোশাক শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য সরকারের দেয়া অর্থ আটকে রেখেছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, 'যদি অর্থ পরিশোধ না করা হয়, তাহলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাস্তির মুখোমুখি হবেন, কারণ এটি রাষ্ট্রবিরোধী কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে।'
প্রিমিয়ার ব্যাংকের এমডিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, 'আপনাকে এই অর্থ ছাড়তে হবে। যদি না দেন, তাহলে এর দায়ভার আপনাকেই নিতে হবে এবং আপনার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আনা হবে। এখন ঋণ সমন্বয়ের কোনো সুযোগ নেই।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে এই অর্থ ছেড়ে দিয়েছি। আপনি যখন শ্রমিকদের অর্থ ঋণ হিসেবে দিয়েছিলেন, তখন কি ভুলে গিয়েছিলেন যে এটি তাদের প্রাপ্য বেতন? আপনি শ্রমিকদের অর্থ পরিশোধ করবেন। যদি না করেন, তবে মনে রাখবেন—আপনি ও আমি দুজনেই আছি, আর আমি যদি থাকি, তাহলে ব্যাংক, শাখা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।'