বশেমুরবিপ্রবিতে গ্রাফিতি নিষিদ্ধের ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ 

শিক্ষার্থীর ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ 
শিক্ষার্থীর ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ   © টিডিসি রিপোর্ট

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, লাইব্রেরি ভবন এবং হলসমূহের দেওয়ালে চিত্রাঙ্কন এবং দেওয়াল লিখন নিষিদ্ধ করে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। আর এর জেরে বিজ্ঞপ্তিটির ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ জানিয়েছেন এক শিক্ষার্থী।

প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থী সজল আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত। বিজ্ঞপ্তিটির প্রতিবাদে তিনি নিজের শরীরে চারটি প্লাকার্ডে প্রতিবাদধর্মী চারটি লেখা তুলে ধরেন। প্লকার্ডসমূহে লেখা ছিলো, ‘অসাম্প্রদায়িক গ্রাফিতিতে ক্ষতি কি? দেয়ালে থাকুক ইতিহাস, দেয়ালে ফুটুক ঐতিহ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়াল নয় কর্মকান্ডকে দাগমুক্ত রাখুন এবং আজ আমার এই কিন্ডারগার্টেনে শেষ দিন’।

শিক্ষার্থী সজল আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে শুধুমাত্র ক্লাসরুম নয় সবকিছু থেকেই আমরা শিক্ষা গ্রহণ করবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালগুলোতে যখন আমাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, অর্জন ফুটে উঠবে, অসাম্প্রদায়িকতার বিভিন্ন চিত্র, বাণী ফুটে উঠবে তখন আমরা চলার পথে অবচেতন মনেই সেগুলো মস্তিষ্কে ধারণ করে নিবো। তাই একজন শিক্ষার্থী হিসেবে মনে করি আমাদের সংবিধানের যে চারটি মূলনীতি রয়েছে- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা এই চারটি মূলনীতির সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন যে কোনো গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখনের অধিকার শিক্ষার্থীদের থাকা উচিত।’

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘প্রশাসন এধরণের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মুক্তচিন্তার বিকাশকে বাঁধাগ্রস্ত করেছে এবং আমি প্রত্যাশা করি তারা অচিরেই এই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করবে।’

আরও পড়ুন: রাজধানীতে লরি চাপায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিহত

সজল আহমেদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে অপর এক শিক্ষার্থী নাজমুস সৈয়দ বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তচিন্তা ও শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য উন্মুক্ত ক্ষেত্র। সেখানে সবাই যার যার মত চিন্তা করার, সেগুলো তাদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার পূর্ণ স্বাধীনতা রাখবে,  নতুবা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির উদ্দেশ্য-ই ব্যর্থ। 

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘আচরণ বিধিমালা ২(১২) অনুযায়ী, বশেমুরবিপ্রবি'র কোনো দেওয়ালে কোনো প্রকার অঙ্কন বা লেখা নিষিদ্ধ যা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার পথে বড় অন্তরাই। অন্যান্য ক্যাম্পাসের দেওয়ালে দেওয়ালে সুন্দর সুন্দর গ্রাফিতি ফুটিয়ে তোলে সেখানকার শিক্ষার্থীরা। সেখানে আমাদের দেওয়ালগুলো কেন ফাঁকা থাকবে! এই বিধিমালার তীব্র নিন্দা জানাই, এবং অনতিবিলম্বে তা সংশোধন করাতে কতৃপক্ষের দৃষ্টিপাত করা উচিত বলে আমি মনে করি।’

এর আগে, গত ৪ আগস্ট ভাইস চ্যান্সেলরের নির্দেশক্রমে বশেমুরবিপ্রবির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো: মোরাদ হোসেন সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এতদ্বারা সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের অবশ্য পালনীয় আচরণবিধির ধারা ২(১২) মোতাবেক অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি ভবন, প্রশাসনিক ভবন, লাইব্রেরি ভবন ও হলসমূহের দেওয়ালে কোন লেখা ও পোস্টার লাগানো নিষিদ্ধ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ফ্যাকাল্টি ভবন, প্রশাসনিক ভবন, লাইব্রেরি ভবন ও হলসমূহের দেওয়ালে বিভিন্ন প্রকার দেয়াল লিখন, চিত্রাঙ্কন ইত্যাদি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আচরণবিধি ও শৃংখলার পরিপন্থি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি ভবন, প্রশাসনিক ভবন, লাইব্রেরি ভবন ও হলসমূহের দেওয়ালে কোন প্রকার লেখা চিত্রাঙ্কন ও পোস্টার লাগানো হতে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। অত্র নির্দেশ অমান্যকারিদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধি মোতাবেক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো: মোরাদ হোসেনের সাথে একাধিকবার চেষ্টা করেও ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।


সর্বশেষ সংবাদ