প্রথমবারের মতো নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেন বশেমুরবিপ্রবির দুই শিক্ষার্থী

মঈনুল ইসলাম শাওন ও তন্বী সাহা
মঈনুল ইসলাম শাওন ও তন্বী সাহা  © টিডিসি ফটো

প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলো গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)। বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে গত ১১ বছরে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী স্বর্ণপদক লাভ করলেও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছিলো না কেউ।

এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আক্ষেপ ছিলো শিক্ষার্থীদের। তবে অবশেষে অবসান ঘটেছে সেই আক্ষেপের। প্রথমবারের মত বশেমুরবিপ্রবির দুই শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

বশেমুরবিপ্রবির রেজিস্ট্রার দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও ইংরেজি বিভাগের নিয়োগ বোর্ড ও রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলা বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী তন্বী সাহা ও  ইংরেজি বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মঈনুল ইসলাম শাওনকে নিজ নিজ বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত মঈনুল ইসলাম শাওন বলেন, ‘নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করা জীবনের শ্রেষ্ঠতম মুহূর্ত। দীর্ঘ ৫-৬ বছর অপেক্ষা ও অধ্যাবসয়ের পর আজকের এই মুহুর্তটি এসেছে। মূলত ভালোবাসা থেকে শিক্ষকতা করতে আসার ইচ্ছা ছিল তাই এই দিনটির জন্য আমি অপেক্ষায় ছিলাম। এটা আমার কাছে একটা স্বপ্ন পূরণের মত।’

আরও পড়ুন: এক ওষুধে সেরে উঠলেন ক্যানসার আক্রান্ত ১৮ রোগী

জামালপুরের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা আমি নিজে পড়তে ভালোবাসি এবং নিজের অর্জিত জ্ঞান অপরের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ভালোবাসি। সেই জায়গা থেকে আমার শিক্ষকতায় আসার তীব্র ইচ্ছা ছিল। আর এখন নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পেয়ে আমার দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে।’

বাংলা বিভাগে নিয়োগপ্রাপ্ত তন্বী সাহা বলেন, ‘নিজের ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে আবার নতুন অধিকার, নতুন উৎসাহ, আনন্দ, নতুন শক্তি, অনুপ্রেরণা নিয়ে নিজের ঘরে ফেরার এ এক অন্যরকম অনুভূতি। আমি আমার  প্রিয় ৫৫ একরে ফিরেছি, আমি আমার নিজ বিভাগে ক্লাস নিবো। সুতরাং আমার কাছে মনে হয়েছে আমি আমার ঘরটাকে নতুন অধিকারের জায়গা থেকে নতুনভাবে গ্রহণ করবো।’

বিভাগ ও শিক্ষার মান উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিভাগ কর্তৃক দেওয়া দায়িত্ব-কর্তব্য সুষ্ঠুভাবে পালন করতে সচেষ্ট থাকবো। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদেরও আমার সঙ্গে সহায়তা করতে হবে, কারণ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিক্ষার  সর্বোচ্চ মান নিশ্চত করা যায়।’

এদিকে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথীদের শিক্ষক হিসেবে পেয়ে আনন্দিত বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও। কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী মুকুল আহমেদ রনি বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের  যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে এখানে শিক্ষক হিসেবে এসেছেন। তারা প্রমাণ করেছেন আমরা কোনো অংশেই অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে নেই। নিঃসন্দেহে তাদের এই সফলতা সকল শিক্ষার্থীদেরই আত্মবিশ্বাস বৃষ্টি বৃদ্ধি কীবে। এছাড়া নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক ভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ভালোবাসা বেশি থাকে এবং তারা সবচেয়ে ভালো জানেন কোন জায়গাগুলোতে সংকট রয়েছে। তাই তারা সহজে সংকট সমাধানে পদক্ষেপ নিতে পারবেন। আমরা প্রত্যাশা করি ভবিষ্যতে অন্যান্য বিভাগেও এভাবে যোগ্য শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে।’

শিক্ষার্থীদের সহকর্মী হিসেবে পেয়ে বাংলা বিভাগের সভাপতি জাকিয়া সুলতানা মুক্তা বলেন," আমার শিক্ষার্থী যখন আমার সহকর্মী, তখন বিষয়টা অনেক গর্বের। আমরা যাদের শিক্ষা দিয়েছি,তারা যখন এসে আমাদের সামনে দাঁড়ায় তখন মনে হয় আমাদের শিক্ষকতা করাটা সার্থকতার।’


সর্বশেষ সংবাদ