বৈধের চেয়ে অবৈধ শিক্ষার্থী বেশি পাবিপ্রবির হলে, ‘অ্যাকশনে’ যাচ্ছে প্রশাসন
- পাবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৪, ০৬:৩৯ PM , আপডেট: ২৩ মে ২০২৪, ০৭:০০ PM
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) ছেলেদের জন্য একটি ও মেয়েদের জন্য একটি আবাসিক হল রয়েছে। মেয়েদের হলে বৈধ প্রক্রিয়ায় ছাত্রীরা আবাসন সুবিধা ভোগ করলেও তার উল্টো চিত্র ছেলেদের হলে। ছেলেদের হলটিতে বৈধ শিক্ষার্থীর চেয়ে অবৈধ শিক্ষার্থীই বেশি। বারবার এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করলেও তারা আমলে নিচ্ছেন না। প্রশাসন বলছে, অবৈধ উচ্ছেদে তারা দ্রুতই পদক্ষেপ নেবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও শেখ রাসেল হল নামে ছেলেদের জন্য দুটি হল রয়েছে। এরমধ্যে শেখ রাসেল হল এখনো নির্মাণাধীন। বঙ্গবন্ধু হলেই শিক্ষার্থীরা আবাসিক। আর মেয়েদের জন্য শেখ হাসিনা হল ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল নামে দুটি হল রয়েছে। তবে মেয়েদের ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলও নির্মাণাধীন। শেখ হাসিনা হলেই তারা আবাসিক।
অতীতে হলে অনেক কিছু হয়েছে। এখন থেকে হল নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চলবে। তবে সেটার জন্য শিক্ষার্থীদের সিট বৈধ করে নিতে হবে।
-অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম, হল প্রভোস্ট
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছেলেদের একমাত্র হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে সিট সংখ্যা ৫০২টি। হলটিতে দুটি ব্লক আছে। এগুলো ‘এ’ এবং ‘বি’ ব্লকে ভাগ করা। ‘এ’ ব্লকের ৬৫টি রুমে ২৬০ জন শিক্ষার্থী এবং ‘বি’ ব্লকের ৬৫টি রুমে ২৪২ জন শিক্ষার্থী থাকতে পারেন।
খোজঁ নিয়ে জানা যায়, হলটিতে মাত্র ১০৫ জন শিক্ষার্থী প্রশাসনের অনুমতিতে বৈধভাবে থাকছেন। বাকি ৩৯৭ জন শিক্ষার্থীই অবৈধ। তবে দীর্ঘদিন হলটিতে এমন অবস্থা বিরাজ করলেও নতুন প্রভোস্ট ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলামের নিয়োগের পর থেকে পরিবর্তন হতে থাকে পরিস্থিতি। নিয়োগের পর তিনি অবৈধ উচ্ছেদে দিয়েছেন কড়া বার্তা।
অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম বলেছেন, আগের মতো হলটিতে অবৈধভাবে শিক্ষার্থীদের থাকা যাবে না। যারা অবৈধভাবে আছেন তাদের ছাত্রত্ব থাকলে বৈধভাবে অনুমতি নিয়ে থাকার সুযোগ রয়েছে। এর বাইরে কোনো শিক্ষার্থীকে অবৈধভাবে থাকার সুযোগ দেওয়া হবে না।
এদিকে, অবৈধ শিক্ষার্থীদের অবৈধ প্রক্রিয়ায় আসন বরাদ্দ নিতে বারাবার নোটিশ দিয়ে আসছে হল প্রশাসন। চলতি মাসের ১ মে এ বিষয়ে একটি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে অবৈধ শিক্ষার্থীদের ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। এতে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী সাড়া দিলেও বেশিরভাগই বাইরে থেকে গেছেন। এরপর সর্বশেষ গত ১৬ মে সিট বৈধ করতে আরেকটি নোটিশ দেওয়া হয়। যার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৬ মে।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মী হলে থাকবেন, এটা তো স্বাভাবিক। কারণ তারাও তো শিক্ষার্থী। কিন্তু হল প্রশাসনকে সব কিছু মনিটরিং করতে হবে। তারা এগুলো মনিটরিং করছে না।
-মো. নুরুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক, পাবিপ্রবি ছাত্রলীগ
হল প্রশাসন বলছে, আগামী ২৬ মের পরও আরও একটি নোটিশ দেওয়া হবে। সে নোটিশের মেয়াদ থাকবে পরবর্তী সাত দিন। ওই নোটিশের পরও যদি কোনো শিক্ষার্থীকে প্রশাসনের বৈধ প্রক্রিয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে হলে অবস্থান করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে এরপর থেকে শুরু হবে উচ্ছেদ অভিযান।
হলে অবৈধভাবে শিক্ষার্থীদের অবস্থানের ফলে আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রশাসন। এছাড়া হলে অবৈধভাবে যারা অবস্থান করছে, তাদের নিয়ে অভিযোগ রয়েছে বৈধ শিক্ষার্থীদের। তারা অবৈধভাবে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা বলছেন, তারা প্রশাসনের নির্দেশনা মেনেই হলে বৈধ প্রক্রিয়ায় অবস্থান করছেন। কিন্তু যারা নিয়ম মানছেন না তাদের তারা উদ্বিগ্ন। এসব অবৈধ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা যায়, হলটির ১৩০টি রুমের মধ্যে তাবলীগ জামাতের ৮টি রুম ছাড়া বাকি সবগুলো রুম ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। এই রুমগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের অন্তত ৮ থেকে ১০টি গ্রুপ-উপগ্রুপ। কোন রুমে কে উঠবে, কে নামবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটা ছাত্রলীগ নেতারাই ঠিক করে দেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল্লাহ বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী হলে থাকবেন, এটা তো স্বাভাবিক। কারণ তারাও তো শিক্ষার্থী। কিন্তু হল প্রশাসনকে সব কিছু মনিটরিং করতে হবে। তারা এগুলো মনিটরিং করছে না, শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান করছে না। হল প্রশাসন যদি শিক্ষার্থীদের সুযেগা-সুবিধা দেখে তাহলে তারা এমনিতেই হলের সিট বৈধ করে নেবে।
আগামী ২৬ মের পরও আরও একটি নোটিশ দেওয়া হবে। ওই নোটিশের পরও যদি কোনো শিক্ষার্থী অবৈধ প্রক্রিয়ায় হলে অবস্থান করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
-হল প্রশাসন
জানতে চাইলে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অতীতে হলে অনেক কিছু হয়েছে। এখন থেকে হল নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চলবে। তবে সেটার জন্য শিক্ষার্থীদের সিট বৈধ করে নিতে হবে। আমরা তিনবার সিট বৈধ করার নোটিশ দেবো। এরপর থেকে যে সকল শিক্ষার্থী হলে অবৈধভাবে থাকবে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনুনাগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
তিনি আরও বলেন, হলে অনেকগুলো সমস্যা ছিলো, সেগুলো আমি সমাধানে কাজ করে যাচ্ছি। এর মধ্যে কিছু সমস্যা সমাধানও হয়েছে। হলে ভালো কিছু করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি তাদেরকে বলবো, হলে অবৈধভাবে না থেকে সিটগুলো বৈধ করে নেওয়ার জন্য। যারা অবৈধভাবে থাকবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবো।