সেদিন রাতে আরও এক বান্ধবীর সাথে কথা বলেন ফারদিন 

ফারদিন
ফারদিন   © সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূরে (পরশ) হত্যার ঘটনায় মামলার আসামি আয়াতুল্লাহ বুশরাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাজধানীর রামপুরার বাসা থেকে বুশরাকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিখোঁজ হওয়ার পূর্বে ফারদিন তার বান্ধবী বুশরাকে নিয়ে ঘুরেন। তার নাম্বার থেকে শেষবার কথা বলেছিলেন বুশরার সাথে। সেই সূত্র ধরে তার নামে মামলা করেন ফারদিনের বাবা। তবে পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র বলেছে ঘটনার রাত ১১টা ৯ মিনিটের পর ফারদিনের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে অন্য কোনো ডিভাইস ব্যবহার করে আরেক বান্ধবীর সঙ্গে মেসেঞ্জারে কথা বলছিলেন ফারদিন। 

এর আগে ধারণা ছিল, বুশরার সঙ্গে ফারদিনের সর্বশেষ কথা হয়েছিল। তবে ওই রাতে ফারদিনের কাছে বুশরা জানতে চেয়েছিলেন, ঠিকঠাক বুয়েটের হলে পৌঁছেছে কিনা? উত্তরে ফারদিন ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দিয়েছিলেন। ১১টার দিকে ফারদিনের সঙ্গে বুশরার মেসেজ আদান-প্রদান হয়। এর পরই ফারদিন আরেক বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলেন।

আরও পড়ুন: মাদক কারবারির হাতে খুন হন ফারদিন! 

পুলিশের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, ফারদিন হত্যাকাণ্ডে তার আরেক বান্ধবীর সংশ্নিষ্টতার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রাথমিক ধারণা ছিল, হত্যার পর ফারদিনের লাশ কেরানীগঞ্জসংলগ্ন কোনো নদীতে ফেলা হয়েছে। তবে প্রযুক্তিগত তদন্তে ফারদিনের সর্বশেষ অবস্থান চনপাড়া এলাকায় নিশ্চিত হওয়ার পর গোয়েন্দা সংস্থার ধারণা, চনপাড়াসংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীতে বুয়েট ছাত্রের লাশ ফেলা হয়। সর্বশেষ যে মাদক স্পটে ফারদিনের অবস্থান দেখা যায়, শীতলক্ষ্যা থেকে সে স্থান সামান্য দূরে।

ফারদিনের স্পেন যাওয়া উপলক্ষে ৪ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় ডিবেটিং সোসাইটির একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ওই বৈঠকে ফারদিনের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। তবে বৈঠকে উপস্থিত না থেকে ফারদিন তাঁর বান্ধবী বুশরাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ান। বৈঠকে ফারদিনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বুয়েটের তাঁর সিনিয়র ভাই শীর্ষকসহ কয়েকজন। এরই মধ্যে শীর্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা।

আরেক দায়িত্বশীল গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ফারদিনের মাদক সেবনের বিষয়টি বেশ কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবী আগে থেকে জানতেন। ঘটনার রাতে তিনি হলে ফিরবেন- এটাও কেউ কেউ জানতেন। ওই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, উদ্ভাস কোচিং এবং ডিবেটিং সোসাইটির সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত থাকায় ফারদিনের সঙ্গে অনেকের যোগাযোগ ছিল। কারও কারও সঙ্গে ফারদিন প্রায় রাতেই মেসেঞ্জারে চ্যাট করতেন। ডিবেটিং সোসাইটিতে গিয়ে বুশরার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। চার বছরের বেশি সময় ধরে পরিচয় থাকলেও তাঁদের মধ্যে পরস্পর মোবাইল ফোন নম্বর আদান-প্রদান হয়নি। মেসেঞ্জারে তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ হতো। সব মিলিয়ে চারবার তাঁদের সাক্ষাৎ হয়েছে। সর্বশেষ ৪ নভেম্বর তাঁরা একসঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করেন। বুশরা যতক্ষণ তাঁর সঙ্গে ছিলেন, ততক্ষণ অন্য কারও সঙ্গে চ্যাট করেননি ফারদিন। বুশরাকে নামানোর পর আরেক বান্ধবীকে মেসেঞ্জারে জানান, বুশরাকে নিয়ে টিএসসিতে তিনি একসঙ্গে গান শুনেছেন।

এদিকে বুয়েট ছাত্র ফারদিন হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আমাতুল্লাহ বুশরাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ আদালতের মাধ্যমে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত রিমান্ডের আদেশ দেন। এ ছাড়া মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব রামপুরা থানা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে। 


সর্বশেষ সংবাদ